প্রতিমন্ত্রী-উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে কর্মী খুন, মামলায় প্রধান আসামি উপজেলা যুবলীগ সভাপতি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
Thumbnail image

প্রতিমন্ত্রী-উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ খুন হন গত ২৮ আগস্ট রাতে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে করা মামলায় মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনিসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এই খুন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নিহত আসাদুজ্জামান আসাদের ছেলে তাইব হাসান আনন্দ বাদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মাহাবুবুল আলম মনিসহ ৩০ জনের নামে মুক্তাগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মাহাবুবুল আলম মনি মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের মেয়ের জামাতা। 

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বলেন, গত ২৮ আগস্ট রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের আটানী বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে আসাদুজ্জামান আসাদ, নাহিদসহ কয়েকজন মিলে একসঙ্গে চা পান করছিলেন। এ সময় ৩০ থেকে ৩২ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আসাদকে তারা উপর্যুপরি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান। 

পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়। এঘটনার পর রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে। 

এ ঘটনার পরেরদিন বিকেলে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আসাদের মরদেহ মহাসড়কে রেখে বিক্ষোভ করেন নিহতের স্বজন ও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা কর্মীরা। 

পরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে আসাদুজ্জামান আসাদ হত্যায় অংশগ্রহণকারী ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান স্বজনরা। 

সংবাদ সম্মেলনে আসাদের স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ স্বজন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

মামলার বাদী তাইব হাসান আনন্দ বলেন, ‘আমার বাবা আব্দুল হাই আকন্দের গ্রুপ করায় বিভিন্ন সময় মারধরের শিকার হয়েছিল মন্ত্রীর লোকজন দ্বারা। সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলা নিয়েও মনির সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এভাবে বাবাকে প্রাণে মেরে ফলবে বুঝতে পারেনি।’ 

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বলেন, এ ঘটনায় রাজিব হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও সামিউল ইসলাম খোকন নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে। 

মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই আকন্দ বলেন, ‘সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর লাঠিয়াল বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তাকে আসামি করা সম্ভব হয়নি।’ 

মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার বলেন, ‘এ মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মনিকে আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় আমার মেয়ে অসুস্থ থাকায় মনি ময়মনসিংহে অবস্থান করছিল। যার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। সত্যের বিজয় হবেই হবে।’ 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘কোনো হত্যাকান্ডই কাম্য নয়। এখানে প্রতিহিংসামূলক আমার নাম আসছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এমন কাউকে হয়রানি না করাই ভালো বলে আমি মনে করি। প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত