৪০ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়ার অবলম্বন পেলেন ছুলেমা বেগম

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ০০
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ১১

‘বাজান ৪০ বছর ধরে ভিক্ষা করতে করতে জীবনডা শেষ কইরা দিছি। এহন আর শরীলডা কুলায় না। ছেড়াডারে তিন দিনের কোলে রাইখা জামাইডা মরছে, সেই থাইকাই ভিক্ষা কইরা ছেড়াডারে বড় করছি। কেউ সাহায্য করে নাই। সরহার (সরকার) আমারে দোহান (দোকান) দিছে, এহন আর ভিক্ষা করন লাগব না।’

আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে একটি টং দোকানে বসে আজকের পত্রিকাকে এ কথাগুলো বলছিলেন ৬৬ বছর বয়সী মোছা. ছুলেমা খাতুন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির’ আওতায় একটি দোকানঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে ছুলমা খাতুনের মতো আরও চারজন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের জন্য দোকান ও মালামাল প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

ছুলেমা খাতুন জানান, তাঁর বাড়ি উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ররুণাকান্দা গ্রামে। অল্প বয়সে বিয়ে হয় ওই গ্রামের মৃত রইছ উদ্দিনের সঙ্গে। এক মেয়ে ও তিন দিনের ছেলেকে রেখে মারা যান তাঁর প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত স্বামী। সেই থেকেই ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ছুলেমা খাতুন। এর মধ্যে তাঁর একমাত্র মেয়েটাও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। বর্তমানে এক ছেলেকে নিয়েই থাকেন তিনি। তাঁর ছেলে বাবুল মিয়া ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে সংসারের জোগান দেন। তিনি দোকানঘর পেয়ে খুব খুশি।

বৃদ্ধা ছুলেমা খাতুন বলেন, ‘আমি খুব অসহায় মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে জীবনডা পার কইরা দিছি। এহন আর জীবন চলে না। দুদিন আগেও ভিক্ষা করতে যাইয়া গরমে মরে যাইতে নিছিলাম। পরে কাপড়ডা ভিজায়া শরীলে দিয়ে বাড়িত আইছি। আর ভিক্ষা করমু না। নাতিডারে নিয়ে দোকান চালামু।’

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় একটি দোকান ও ৩৫ হাজার টাকার মালামালসহ নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার হাসান জিটু, সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর।

নান্দাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইনসান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষুক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে নান্দাইলে অনেক ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ভিক্ষুক মুক্ত করতে।’

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, ‘সরকার যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন, সবগুলো জনগণের স্বার্থে। আজকে যারা দোকান ও নগদ টাকা পেয়েছেন, আশা করি এইগুলো কাজে লাগালে তাদের আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে হবে না। দোকানটির মাধ্যমে একজন ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত