Ajker Patrika

ময়মনসিংহের ডিআইজির সঙ্গে সমন্বয়কদের এক পক্ষের দ্বন্দ্ব, নেপথ্যে কী

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল সমন্বয়ক। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত
ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল সমন্বয়ক। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

নতুন বছরের প্রথম দিনেই আত্মগোপনে থাকা ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেন, ‘আমাদের ময়মনসিংহের ডিআইজি সাহেবের সঙ্গে মেধাবীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়।’

গত বুধবার আপলোড করা ৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ১৫-২০ জনের একটি দল ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’—স্লোগান দিতে দিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করেন।

তখন কয়েকজন যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি (ডিআইজি) প্রতি সপ্তাহে শুক্র-শনিবার নিজের উপজেলায় গিয়ে নির্বাচনী কাজকর্ম করেন। তারাকান্দার ওসি আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহে নিহত রেদোয়ান হোসেন সাগর হত্যা মামলার আসামিরা কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। গৌরীপুরে আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করলেও কেন তারা গ্রেপ্তার হয়নি।’

এ সময় ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। পুলিশ একটি দলকে সমর্থন করে কাজ করছে এমন কথা বলে দলটি। তাঁরা বলতে থাকেন, ‘আপনারা (পুলিশ) এমনভাবে কাজ করছেন, টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের না ধরে আপনারা ধরতাছেন কারে, জাসদের মতো ছোট দলের লোককে।’

গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুরের এই ঘটনাটি ১ জানুয়ারি সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তের ভেরিফাইড ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পরপরেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে, কেন হঠাৎ করে সমন্বয়কদের সঙ্গে রেঞ্জ ডিআইজির বাদানুবাদের ঘটনা ঘটল।

গত বছরের ১৯ জুলাই নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ কলেজছাত্র রেদোয়ান হোসেন সাগর হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মহানগর জাসদের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুকে ২৭ ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তারের পরপরই মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে ছাড়াতে কোতোয়ালি মডেল থানায় জোরালো তদবির করেন সমন্বয়কদের একটি পক্ষ।

মিন্টু গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন পূর্বে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশের বাইরে ব্যারিস্টার অধ্যয়নরত তাঁর দুই ছেলে জয় ও পিয়াল ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। সে সময় তাঁরা দেশে থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় নগরীর আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টায়ের বাসায় প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন সমন্বয়ক থাকতেন। তাঁদের খাওয়াদাওয়াসহ সমস্ত খরচ তিনিই বহন করতেন।

তখন তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সাগর হত্যা মামলা হওয়ায় ক্ষুব্ধ সমন্বয়কেরা আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। সাগর হত্যা মামলার বাদী বিএনপির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমার অন্যতম সহযোদ্ধা ছিলেন।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘২৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে যৌথ বাহিনী নিজ বাসা থেকে লাইসেন্সকৃত শটগানসহ জাসদ নেতা সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু ও তাঁর ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই সমন্বয়ক পরিচয়ে একটি দল তাঁকে ছাড়াতে থানায় তদবির করতে আসে। আর অন্য সমন্বয়কেরা তাঁকে যেন কোনোভাবেই ছাড়া না হয়—সে বিষয়ে আমাদের জানান।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা মিন্টুকে ছাড়াতে এসেছিলেন তাঁরাই ডিআইজি স্যারের কার্যালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে আমার অফিসে আসা দলটি সাবেক কাউন্সিলর মিন্টুকে ছেড়ে দিতে তদবির করে, বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো কাউন্সিলরকে যেন গ্রেপ্তার না করা হয়, সে দাবিও তাঁরা জানান। ছাত্ররা যে আচরণ করে আমার কার্যালয়ে এসেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর আগেও সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে গিয়ে তাঁরা এমনটি করেছে। তাঁদের উদ্দেশ্য অন্য কিছু। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিআইজি অফিসে যাওয়া দলটিতে নেতৃত্ব দেন সায়েবে রাকাত ও আল নূর আয়াশ। আল নূর আয়াশ আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দেন। এর আগেও তিনি আহত সমন্বয়কদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সায়েবে রাকাতের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া আল নূর আয়াশ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশেই আমরা ডিআইজি কার্যালয়ে গিয়েছি। কারণ হচ্ছে, সাগর হত্যায় প্রকৃত আসামিদের পুলিশ ধরছে না। পুলিশ তিনজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমরা যখন ডিআইজির কক্ষে প্রবেশ করি তখন পুলিশের কিছু সদস্য ভিডিও করছিল, তখন একটু হট্টগোল হয়েছিল, এর বেশি কিছু না। আর আজকে আমরা যেই মুক্ত দেশ পেয়েছি এবং ডিআইজি মহোদয় যে চেয়ারটি পেয়েছেন, সেটি আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাসদ নেতা মিন্টুকে ছাড়ানোর জন্য তদবির করিনি। কোনো অফিসে গিয়েও কাউকে বিরক্ত করিনি, যারা এসব করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

ময়মনসিংহের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোকূল সূত্রধর মানিক বলেন, ‘একটি পক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অর্জন ম্লান করার জন্য এমনটি করছে। এর আগে কিছু অফিসে গিয়ে তাঁরা হট্টগোল করেছেন। তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ডিআইজি অফিসে গিয়ে যাঁরা বাদানুবাদে জড়িয়েছেন, তাঁরা আমাদের কেউ নন। আমরা চাই বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ছাত্রদল আপনার মতো আম্মারকে ৩০ মিনিটে বের করে দিতে সক্ষম’, ভিডিও ভাইরাল

রাবি প্রতিনিধি 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্রদল আপনার মতো ‘ফুটেজখোর’ সালাহউদ্দিন আম্মারকে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিতে সক্ষম বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ।

শাকিলুর রহমান আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে রাকসুর নামধারী কিছু নেতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিভিন্ন ডিনের কার্যালয়, এমনকি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে স্বাগতমিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিকে রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের উদ্দেশে ছাত্রদল নেতার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই বক্তব্যের প্রতিবাদে সালাহউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন।

সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ২৫ ডিসেম্বরের পর ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবেন না, সবার সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এরপর যারা মব সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।

সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বাংলার বাতাসে যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ ছিল, তা উপেক্ষা করে বাংলার গণমানুষের শক্তির ওপর ভর করে অনেক বছর পর তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। দেশের মানুষের মঙ্গল, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যেই তাঁর এই প্রত্যাবর্তন।

সুলতান আহমেদ আরও বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা মানেই অপসংস্কৃতি ও মব কালচারের অবসান। এটি অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্নকারীদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সূচনা। এ ছাড়া ২৫ ডিসেম্বরের পর যারা মব সৃষ্টি করবে, তাদের ধরে হাত-পা বেঁধে প্রশাসনের কাছে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান ষড়যন্ত্রের আঘাতে পঙ্গুত্ববরণ করে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে তাঁকে দেশে ফিরতে দেয়নি। চাইলে তিনি নীরবে প্রবাসে জীবন কাটাতে পারতেন, কিন্তু একটি ছোট কেবিনে বসে নিরলসভাবে তিনি সারা দেশে জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটিয়েছেন। এই ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ৫ আগস্টের বিপ্লব সম্ভব হয়েছে।

এর আগে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ছাত্রদলের নিজস্ব স্ট্যান্ডে এসে মিলিত হয়। এ সময় অন্যদের মাঝে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার পূর্বধলায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জিহাদুল ইসলাম (৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে পূর্বধলা উপজেলায় চৌরাস্তা মোড়ে ইলাসপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত জিহাদুল ইসলাম পূর্বধলার সদর ইউনিয়নের ইলাসপুর গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চৌরাস্তা অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে দুই অটোচালকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। জিহাদুল বিষয়টি সমাধান করতে গেলে অটোচালক নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। স্থানীয় লোকজন বিবাদ থামিয়ে উভয় পক্ষকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর অটোচালক নিজাম উদ্দিন দেশীয় অস্ত্রসহ তাঁর লোকজন নিয়ে এসে জিহাদুলের ওপর হামলা করেন। এ সময় জিহাদুলের পক্ষের লোকজনও তাঁদের প্রতিহত করেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে নিজাম উদ্দিন শাবল দিয়ে জিহাদুলকে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা জিহাদুলকে উদ্ধার করে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল রানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জিহাদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা ও ভাড়াকে কেন্দ্র করে অটোচালক নিজাম উদ্দিন ও জিহাদুলের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই জমি-সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। জিহাদুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত ব্যক্তির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি  
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন প্রদ্যুৎ কুমার সরকার নামের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এক নেতা। আজ সোমবার দুপুরে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন।

প্রদ্যুৎ কুমার সরকার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে।

গতকাল রোববার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রদ্যুৎ কুমারের বাবা পল্লিচিকিৎসক গোপাল চন্দ্র সরকার মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজ প্যারোলে মুক্তি পান প্রদ্যুৎ কুমার। বেলা প্রায় ২টা ৩০ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বেলা ৩টার দিকে তিনি নিজ গ্রামে আসেন। পরে পুলিশি প্রহরায় বাড়ির পাশে বাবার দাহকর্মে অংশ নেন তিনি।

প্রদ্যুৎ কুমারের ছোট ভাই সুকেশ কুমার জানান, বাবার মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত আবেদন করলে বেলা

১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্যারোলে মুক্তি পান তাঁর ভাই।

জানা গেছে, এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর নগরীর ভাড়া বাসা থেকে প্রদ্যুৎ কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা থানা থেকে অংশ নিয়েছিলাম। বিস্তারিত তথ্য জেলা পুলিশের হাতে ছিল। তারাই সব বলতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় স্ত্রীর কারাদণ্ড

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৩
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগে বাদীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে আদালতের বিচারক মামুন হাসান খান এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নারী হলেন শারমিন আক্তার। বাবার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে। পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মানরা গ্রামের শহীদ হোসেনের সাবেক স্ত্রী।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর শারমিন আক্তার ও শহীদ হোসেনের তালাক সম্পন্ন হয়। কাবিনের অর্থ ও এক সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ শারমিনকে ১৪ লাখ টাকা দেন শহীদ হোসেন। এর দুই দিন পর (১৯ নভেম্বর) তালাকের বিষয়টি গোপন করে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেন শারমিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি শহীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

গতকাল রোববার দুপুরে আসামি শহীদ ও বাদী শারমিন আদালতে হাজির হন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে মামলাটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। এরপর মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা করার দায়ে শারমিনকে এক দিনের কারাদণ্ড দেন বিচারক মামুন হাসান খান।

খালাসপ্রাপ্ত শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দাম্পত্যকলহের কারণে সংসার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্ত্রীর সম্মতিতে তাঁদের মধ্যে তালাক হয়ে যায় এবং আর্থিক দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়।

আদালতে দেওয়া বক্তব্যে বাদী শারমিন আক্তার দাবি করেন, তিনি কাবিনের টাকা পেয়েছেন। তবে আগে চাকরি বাবদ শহীদ তাঁর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় আদালতের বিচারক ওই নারীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আসামি শারমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত