প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৩ সপ্তাহেও মেলেনি মজুরি, বিপাকে শ্রমিকেরা

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ৩১
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ১২

জামালপুরের ইসলামপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ৪০ দিনের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৩ সপ্তাহ আগেই। কিন্তু এখনো উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৮১৪ জন শ্রমিক মজুরি পাননি। এতে অনেক শ্রমিক পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইজিপিপির আওতায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর এসব প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়, ৪০ দিন চলে কাজ। এতে মাথাপিছু ৪০০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে ২ হাজার ৮১৪ জন নিবন্ধিত শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পান। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে গত ৮ জানুয়ারি। 

প্রতি প্রকল্পে একজন করে মোট ৬৬ জন শ্রমিক সর্দারসহ প্রতিজন শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজিরা ভাতার টাকা পাওয়ার কথা। প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। 

এদিকে ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিক নাজমা বেগম বলেন, ‘কাজ শেষ হয়েছে চার সপ্তাহ আগে। এখনো মজুরির টাকা পায়নি। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।’ 

বেলগাছা ইউনিয়নের শ্রমিক আকবর আলী বলেন, ‘মজুরি টাকা না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা যাতে তাড়াতাড়ি টাকা পাই, সেই ব্যবস্থা করা দরকার।’ একই কথা বলেন গোয়ালেরচর ইউনিয়নের শ্রমিক হেলাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের মঙ্গা দাম। টাকার অভাবে সংসার চালাতে পারছি না।’ 

কুলকান্দী ইউনিয়নের শ্রমিক রুস্তম আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টাকার জন্য রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেছি। কিন্তু আমাদের মজুরির টাকা দিতে দেরি করা হয় কেন? 

চরপুটিমারী ইউনিয়নের শ্রমিক সবুজ মিয়া বলেন, ‘মজুরির টাকার চাইতে গেলে চেয়ারম্যান-মেম্বারের বলে টাকা সরকার দেবে। তারা সব ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আমরা তো টাকা পাচ্ছি না।’ 

দরিদ্র শ্রমিকেরা মজুরি না পাওয়ার কথা আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রোমান হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ পরও টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। টাকার অভাবে কষ্টে আছেন শ্রমিকেরা। এ নিয়ে আমাদের বাড়তি ভুগতে হচ্ছে।’ 

পাথর্শী ইউপির চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবলু বলেন, ‘শ্রমিকেরা মজুরির টাকা না পাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। প্রতিদিনই শ্রমিকেরা টাকার জন্য আসছে। তাঁদের না দিতে পারছি টাকা। না বলতে পারছি কবে নাগাদ পাবে টাকা।’ 

গাইবান্ধা ইউপির মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘শ্রমিকেরা মজুরি না পেয়ে প্রায়ই আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু টাকা পাওয়ার নির্ধারিত তারিখ বলতে পারি না। এতে শ্রমিকেরা চিন্তিত হয়েছে। দ্রুত সময়ে তাঁরা টাকা পেলে ভালো হয়।’ 

পলবান্ধা ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কমল বলেন, ‘শ্রমিকেরা অনেক ধরে মজুরির টাকা না পাওয়ায় আর্থিক অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরাও পড়েছি বিপাকে। শ্রমিকেরা প্রতিদিনই টাকার জন্য আমাদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তো তাঁদের টাকা দিতে পারছি না।’ 

প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরনবী মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘গত ৮ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। শ্রমিকদের ২০ দিনের মজুরির টাকা পাঠানোর জন্য যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা তাঁদের মোবাইলের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠায়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।’ 

পিআইও মেহেদী হাসান টিটু বলেন, ‘আশা রাখি, কয়েক দিনের মধ্যেই মজুরির টাকা শ্রমিকেরা তাঁদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাবেন।’ 

ইউএনও মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রকল্পের শ্রমিকেরা কেন টাকা পাচ্ছেন না, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত