রাজশাহী সিটি নির্বাচন: আসাদের সঙ্গে সভা করার পর পদ হারালেন আ.লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ২০: ০১
আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১৫: ২২

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে সভা করার পর দলের ৯টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে জেলার পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকার ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৌর আওয়ামী লীগের সব ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে রোববার (১৪ মে) থেকেই কমিটিগুলো বিলুপ্ত বা বাতিল করা হলো। দ্রুতই সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে। তিন বছরের জন্য করা এই কমিটিগুলোর মেয়াদ এক বছর আগে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

কমিটিগুলো বাতিল করার আগে ৬ মে সিটি নির্বাচন নিয়ে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে সভা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। সভা শেষে আসাদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিটির নেতারা কাটাখালী বাজারে জনসংযোগ করেন। পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন থেকে আসাদ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। গত নির্বাচনের আগেও তিনি এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য আসাদ দলের তৃণমূলে জনপ্রিয়।

পদ হারানো নেতারা বলছেন, আসাদের সঙ্গে সভা করার বিষয়টি পছন্দ হয়নি স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিনের। এ কারণে তিনিই ওয়ার্ড কমিটিগুলো বাতিল করিয়েছেন। এ বিষয়ে অবশ্য এমপি আয়েনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। বক্তব্য জানতে আজ সোমবার দুপুরে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কাটাখালী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত করে দেওয়া কমিটির সভাপতি ছিলেন মো. মানিক। তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের সঙ্গে চা-চক্র করতে এসেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এখানে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেরই নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এর মধ্যে অন্তত ১২ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে বসার কারণেই আমাদের কমিটি বাতিল করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পাশের এলাকাটাই কাটাখালী। পৌরসভার পাশে শহরের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত অধ্যুষিত। এই এলাকায় যেন কাটাখালীর আওয়ামী লীগ নেতারা নৌকার জন্য কাজ করেন, সে উদ্দেশ্যেই তাঁদের সঙ্গে মিটিং করি। এরপর শুনছি সব ওয়ার্ড কমিটি বাতিল করা হয়েছে।’

আসাদ আরও বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণকে বাতিলের কারণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে পবায়। সেগুলো বাতিল করা হয়নি। যারা পদ হারিয়েছেন, তাঁরা বলছেন যে আমার সঙ্গে সভা করার কারণেই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। তবে আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই না। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য সভা করে আমি যদি অপরাধ করে থাকি, তাহলে ঠিক আছে।’

কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়াটাই কমিটি বাতিলের একমাত্র কারণ নয়। তিনি বলেন, ‘এই কমিটিগুলো নিজের মতো করে দিয়েছিলেন কাটাখালী পৌরসভার বরখাস্ত মেয়র আব্বাস আলী। তিনি তখন পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এখন আমরা নতুন কমিটি ডাকলে ওয়ার্ড কমিটির বেশির ভাগ নেতা আসেন না। তাঁরা দল থেকে বহিষ্কার হওয়া আব্বাসের পেছনেই ঘুরে বেড়ান। বহিষ্কৃত নেতার সঙ্গে দলের লোকদের সম্পর্ক তো মানা যায় না।’

জহুরুল আরও বলেন, ‘আসাদুজ্জামান আসাদ বহিষ্কৃত না। জেলার নেতা হিসেবে তিনি পৌরসভার ওয়ার্ডের নেতাদের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে বসতেই পারেন। এবার যদি আসাদ ভাই এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পান, তাহলে তো তাঁর জন্য আমাকেও কাজ করতে হবে। সুতরাং, তাঁর সঙ্গে বসার কারণে কমিটি বাতিল করা হয়েছে—এ কথাটা ঠিক নয়। কমিটি বাতিলের জন্য বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনেরও কোনো ধরনের নির্দেশনা ছিল না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত