জানি না অন্ধকার চোখে আলো আসবে কি না: আন্দোলনে আহত যুবক ইমাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৪৫
Thumbnail image
ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণে আয়োজিত সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শহীদ সাটু হল অডিটরিয়ামে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ঢাকায় আন্দোলনে শহীদ তারেক হোসেন ও মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। এ ছাড়া সভায় আন্দোলনে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা ও আহতরা বিভীষিকাময় দিনগুলো স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন।

শহীদ তারেক হোসেনের বাবা আসাদুল ইসলাম এবং শহীদ মতিউর রহমানের স্ত্রী রোজিনা বেগম বিভীষিকাময় সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করেন। দেশের জন্য শহীদ হওয়া মানুষদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাঁরা বলেন, এই সোনার বাংলা যেন কোনো অপশক্তি কেড়ে নিতে না পারে। সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ইমাম হোসেন নামে এক যুবক। তিনি বলেন, এক দফা দাবি আদায়ে ৫ আগস্ট সকালে রামপুরা হয়ে শাহবাগের দিকে রওনা দেন তিনি। এরপর রামপুরা এলাকায় হঠাৎ পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় গলায় ও বাঁ চোখে মোট তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়।

অঝোরে কেঁদে কেঁদে ইমাম বলেন, ‘কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, এক চোখ পুরো অন্ধকার। জানি না অন্ধকার চোখে আলো আসবে কি না। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন দেশে ইতিহাস রচিত হয়েছে, সে ইতিহাস যেন ধরে রাখা যায়। এ জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

ইমাম হোসেনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায়। প্রতিবন্ধী বাবার সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি চাকরির জন্য গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক আব্দুর রাহিম বলেন, ‘এই আন্দোলন জেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং নতুন বাংলাদেশ অর্জিত হয়। এই দেশের নেতৃত্বদানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ উল্লেখ করেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার কারণে আহতরা সময়মতো চিকিৎসা পাননি। ফলে অনেকেই চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সঠিক তদন্ত ও ন্যায়ের স্বার্থে মনিটরিং করা হচ্ছে।’

জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদ ও আহতের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদ ও আহতের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ রক্ষা এবং শহীদ ও আহতদের পাশে থাকার জন্য জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর।’

জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদ তারেক হোসেন ও মতিউর রহমানের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা এবং উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া আহত ১১ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ও উপহার দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত