Ajker Patrika

‘বাবারে নদী আমার সব শ্যাষ কাইরা নিছে’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
‘বাবারে নদী আমার সব শ্যাষ কাইরা নিছে’

‘বাবারে নদী আমার সব শ্যাষ কাইরা নিছে। ৭ বার নদী ভাঙনের মুখে আমি নিঃস্ব। সহায় সম্বল যা কিছু আছিলো সব নদী নিয়া গেছে। শেষ বার পাঁচঠাকুরীতে বাঁধের নিচে আশ্রয় নিলাম। এহানেও নদী ভাঙন। ১৫-২০ শতক জমির উপড়ে আমার বাড়ি আছিলো। এক রাইতের ভাঙনে সব শেষ।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী গ্রামের ভাঙন কবলিত আব্দুল মোতালেব।

রোববার ভোর থেকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরীতে যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচঠাকুরী এলাকায় যমুনা নদীর তীরের ৬০ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে গেছে। তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ২০ মিটার। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে থাকা ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

এলাকাবাসী জানায়, অনেকে নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাঙনে ৫টি বাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাঁচঠাকুরী এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে কারণে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালি উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি ও মানববন্ধন পালন করে এলাকাবাসী। কিন্তু তাতেও বালি উত্তোলন বন্ধ হয়নি।

ভাঙনে ৫টি বাড়ি, বসতভিটা, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেস্থানীয় বেলাল হোসেন বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। বালু তোলা বন্ধের জন্য এলাকার মানুষ ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দিছি। তারপরও বালু তোলা বন্ধ হয় নাই। ভোর রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে আইসা দেহি নদীতে খুব ভাঙন। মানুষজন ছোটাছুটি করছে। ঘর থেকে মালামাল বাইর করে সরানোর চেষ্টা করছে। এভাবে নদী ভাঙন কোনো দিন দেহি নাই।’ 

ভাঙন কবলের শিকার হেলানা বেওয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘রাতে হঠাৎ করে নদীতে ভাঙন শুরু হয়। নদীর তীব্র গর্জনে ঘুম ভাঙে এলাকার মানুষের। এক বছর আগে স্বামী মইরা গেছে। তিন মেয়ে আমার। তিনজনরে বিয়া হইছে। স্বামীর বাড়ি থাকে। এখন আমি একাই থাকি। ভাঙন না থামাইলে আমার বাড়িও যে নদীতে চইলা যাবো। নদী থাইকা বালু তোলে। বারবার নিষেধ করা হইছিল। কেউ শোনে না। সবাই কইছিল বালু তোলার কারণে বাড়ি ঘর ভাঙবো। তাই হইলো।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি কমতে থাকায় নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তীর রক্ষায় বালির বস্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নদীর তলদেশে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে গিয়ে নদীর তীরে ভাঙনের মুখে পড়ে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত