Ajker Patrika

১০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি দেখল রাজশাহীবাসী, থইথই পথঘাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ৪৫
১০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি দেখল রাজশাহীবাসী, থইথই পথঘাট

গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির দেখল রাজশাহীবাসী। মুষলধারে টানা বৃষ্টিতে থইথই করছে রাজশাহী নগরী পথঘাট। নগরীর নিচু এলাকাগুলো তো বটেই, উঁচু এলাকাতেও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে বিপাকে পড়েছে নগরবাসী। আর এ জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দুষছে তারা। 

গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থামেনি। শুধু তা-ই নয়, বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। 

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃষ্টির পরিমাণও কম নয়। গত ১০ বছরেও রাজশাহীতে এমন বৃষ্টি হয়নি। 

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর সব সড়কে হাঁটুসমান পানি জমেছে। বৃষ্টির পানিতে নগরীর লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, ঘোষপাড়া, সাহেববাজার, গণকপাড়া, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়, উপশহর, টিকাপাড়াসহ সব এলাকায় পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানির পরিমাণ কোথাও হাঁটুসমান, আবার কোথাও কোমরসমান। শহরের টিকাপাড়া এলাকায় সকালে সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতেও দেখা গেছে। 

নগরীর প্রায় সব এলাকার সড়কেই হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাসড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে অনেকে জাল দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। তবে বেকায়দায় পড়েছেন তারা, যাদের বাড়িতে এমনকি ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের বাইরের গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির কারণে পুকুর উপচে পানি চলে যাচ্ছে বিলে। এতে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। এ ছাড়া মাঠে মাঠে কৃষকের শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। 

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বেলা ১টা থেকে আজ বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গতকাল দিবাগত মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত। সকাল থেকে বৃষ্টি একটু কমলেও পুরোপুরি থামেনি। বিকেল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টি চলছিলই। আরও বৃষ্টি হতে পারে। 

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের তথ্য আলাদা করে সংরক্ষণ করেছেন। সেই তালিকার তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এবারের বৃষ্টিপাতই সর্বোচ্চ। 

নগরীর প্রায় সব এলাকার সড়কেই হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাহিসাব বলছে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার, ২০১৪ সালের ২৭ মে এক দিনে সর্বোচ্চ ৯৮ দশমিক ৩ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ২৬ জুন ১০০ মিলিমিটার, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ১০২ মিলিমিটার, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ১০৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, ২০১৮ সালের ১ মে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ৭৮ মিলিমিটার, ২০২০ সালের ২১ মে ৮১ মিলিমিটার এবং ২০২১ সালের ২১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। 

রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারি এলাকার মাছচাষি আনিসুর রহমান জানান, বৃষ্টির পানিতে রাতেই তাঁর তিনটি বড় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সকালে পুকুরে গিয়ে তিনি যখন এ দৃশ্য দেখেন, তখন আর কিছু করার ছিল না। এতে তাঁর অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। 

নগরীর প্রায় সব এলাকার সড়কেই হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। ছবি: আজকের পত্রিকানগরীর তেরোখাদিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় বাস করেন শহিদুল ইসলাম। তাঁর ঘরেও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। শহিদুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাস্তাঘাট, বাড়ির আঙিনা সবই ডুবে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে শোয়ার ঘরেও। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পানি কবে নামবে তা বুঝতে পারছি না। শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোর অসংখ্য পরিবার এ রকম দুর্ভোগে পড়েছে।’ 

নগরীর সপুরা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ দায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের।’ 

তিনি বলেন, ‘শহরে প্রচুর টাকা খরচ করে নতুন নতুন ড্রেন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ড্রেন যদি পানি নিষ্কাশন করতে না পারে, তাহলে জনগণের টাকা খরচের দরকার কী!’ 

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরে জলাবদ্ধতার বেশ কয়েকটি কারণ দেখা যাচ্ছে। শহরের পুকুর ও ডোবাগুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বড় বড় দালান উঠছে। এতে বৃষ্টির পানি আর সেসব পুকুর-ডোবায় যেতে পারছে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আগে পদ্মা নদীতে শহরের পানি নেমে যেত। কিন্তু নদী দূষণ হবে বলে সেসব ড্রেনও বন্ধ করা আছে। আবার বারনই নদের পানি যে ড্রেন দিয়ে পাঠানো হয়, সেই ড্রেনেও পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণেও পানি নামার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই এভাবে পানি জমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধানে এবার কাজ শুরু করা হবে।’ 

প্রকৌশলী নূর ইসলাম জানান, শহরের বর্জ্য পানি পদ্মা নদীতে পাঠানো হবে। তবে তা পরিশোধন করেই। এ জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকবেন। বড় বড় কিছু ড্রেনও নির্মাণ করা হবে। 

এসব কাজ করা গেলে শহরে আর পানি জমবে না বলেই মনে করছেন নগর সংস্থার এই প্রকৌশলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত