মণ্ডপে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি, দেশের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ২৫
Thumbnail image

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের মতো করে মণ্ডপটি সাজানো হয়েছে। মন্দিরের প্যান্ডেলের চারটি পিলারের নাম জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর যে চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে সেই ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে পূজামণ্ডপটি। আর ওপরে এক ব্যানারে লেখা আছে বাংলাদেশের ইতিহাস । 

রাজশাহী নগরীর মালোপাড়ার শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের পূজামণ্ডপটি শুধু মণ্ডপ নয়, যেন একটি বাংলাদেশ! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংগ্রামের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে জানাতে এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের এই সৃজনশীল আয়োজন। এমন আয়োজন এবার আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর। 

মন্দিরটিতে গিয়ে দেখা যায়, আলপনা আঁকা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের মাঝে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সবই ফুটে উঠেছে এক পর্দায়। ফ্রেমের সবার ওপরে বড় করে লেখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১। এর প্রতিটা অঙ্ক দিয়ে আবার আলাদা তাৎপর্য বোঝানো হয়েছে। ১ দিয়ে বোঝানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে এক তর্জনীর হুংকার, ৯ অর্থ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ, ৭ অর্থ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ এবং ১ মানে একটি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর এক তর্জনীর হুংকারে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অর্জনের কথা বলা হয়েছে এখানে। 

এর নিচে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র সাধারণ নির্বাচন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৮-র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবির পাশাপাশি সবার বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা এবং জাতীয় চার নেতার কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডও। 

২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গণজাগরণ হয়েছিল, তাও বর্ণিত রয়েছে একই ফ্রেমে। ২০২১ সালের দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনো সংখ্যালঘুদের মাঝে রয়েছে, তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে ফ্রেমে। 
 
দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থান পেয়েছে ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে। দেশের মেয়েরাও যে এগিয়ে যাচ্ছে, সাফ চ্যাম্পিয়নে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সঙ্গে শিক্ষানগরী রাজশাহীও যে পিছিয়ে নেই, তা বোঝানোর জন্য এই শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ছবিও স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে। 

প্রতিমা দর্শনে গিয়ে অনেককেই লম্বা সময় দাঁড়িয়ে সেই সব ছবি দেখতে, দেশের ইতিহাস জানতে দেখা যায়। 
 
শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পাপন চন্দ্র রায় বলেন, ‘দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরণিতে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আরাধনার সময়কে ধরা হয় সব ধরনের অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে ও আঙ্গিকে দেবী দুর্গার আরাধনার আয়োজন করে থাকেন। আমরা এমনভাবে মণ্ডপটাকে সাজিয়েছি, যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখানে উঠে আসে। সবার মনে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জাগ্রত হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত