রুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছে এল খামভর্তি কাফনের কাপড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯: ৩০

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় শিক্ষক-কর্মকর্তার কাছে ডাকযোগে কাফনের কাপড়ের দুটি করে টুকরো পাঠানো হয়েছে। চিঠির খামের ভেতর কাফনের কাপড় ঢোকানো ছিল। আজ বুধবার সকালে শিক্ষক-কর্মকর্তারা ডাকপিয়নের মাধ্যমে এই চিঠি পান। চিঠির প্রেরকের ঠিকানায় ‘সচেতন নাগরিক সমাজ, রাজশাহী’ লেখা রয়েছে। এ ছাড়া একটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে। তবে মোবাইল নম্বরটি কার তা জানা যায়নি।

যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা চিঠির খামে কাফনের কাপড়ের টুকরো পেয়েছেন তারা হলেন রুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ, রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. ফারুক হোসেন, সহসভাপতি ড. জগলুল শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. রবিউল আওয়াল, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. সেলিম হোসেন, কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দীন আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ এবং সেকশন অফিসার রাইসুল ইসলাম রোজ। 

চিঠি পেয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার বিকেলে এ ব্যাপারে রুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর মতিহার থানায় একটি অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।

রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজশাহীর কোনো এক পোস্ট অফিস থেকে এই চিঠি পোস্ট করা হয়েছে। প্রত্যেকের নামে এ চিঠি আসে রুয়েট পোস্ট অফিসে। বুধবার সকালে ডাকপিয়ন তা বিতরণ করেন। খাম খুলে সবাই ভেতরে দুটি করে কাফনের কাপড়ের টুকরো পান। এই চিঠি পাওয়ার পর থেকে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’ 

এ ব্যাপারে থানায় জমা দেওয়ার জন্য রুয়েটের দাপ্তরিক প্যাডে একটি অভিযোগপত্র লেখা হয়েছে। এতে সই করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. সেলিম হোসেনের। এতে চিঠি আসার বিবরণ দেওয়ার পর লেখা হয়েছে, ‘গত ৬ ডিসেম্বর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যোগসূত্রতা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এর সঠিক তদন্ত প্রয়োজন।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ ডিসেম্বর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন কমিটি রুয়েটের বিভিন্ন দপ্তর ও শাখা আকস্মিক পরিদর্শন করে। সেদিন পরিষদ শাখায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বিষয়টি কমিটির রেজুলেশন খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে বলা হয়, কমিটি পরিষদ শাখা পরিদর্শনকালে শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আলরেরুনী ছিলেন না। পরিষদ শাখার সেকশন অফিসার সোহেল রানা মোবাইল ফোনে আলরেরুনীকে পরিদর্শন কমিটির উপস্থিতির বিষয়টি জানান। পরে তিনি অফিসে আসেন। 

পরে পরিদর্শন কমিটি প্রধান প্রকৌশলীর অফিসকক্ষে প্রবেশের সময় পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলবেরুনী পেছন দিক থেকে কমিটির উদ্দেশ্যে উচ্চ স্বরে কটুক্তিকর মন্তব্য করেন। পরিদর্শন কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন ভদ্রোচিতভাবে তাঁকে ওই স্থান ত্যাগ করতে অনুরোধ জানালে আলবেরুনী কমিটির সদস্যদের সামনে এসে ‘উচ্চস্বরে আপত্তিকর ও বাজে কথা’ বলেন। তিনি ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশালীন’ আচরণ করেন এবং কমিটির কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন। 

রেজুলেশনে লেখা হয়, আলরেরুনী তাঁর অফিস কক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে দূর থেকে কমিটিকে কটাক্ষ করে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। পরবর্তীতে আলবেরুনীসহ সংস্থাপন ও প্রশাসন শাখার জুনিয়র সেকশন অফিসার মুরাদ হোসেন এবং প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) পরিদর্শন কমিটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে আবারও কমিটির সদস্যদের কটাক্ষ করে বাজে কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উচ্চ স্বরে বাগ্‌বিতণ্ডা করেন এবং কটূক্তি করেন। এই ঘটনার জের ধরেই কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা মনে করছেন। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আলরেরুনীকে কল দেওয়া হলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাফনের কাপড়টা আমিও দেখলাম। রুয়েটের পক্ষ থেকে থানায় একটা অভিযোগ দেওয়ার কথা। এখনো সেটা আসেনি। অভিযোগ হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত