এবার মেয়র হতে চান শাটারিং মিস্ত্রি শামা

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৫০
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ০৩

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ এপ্রিল। এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন আবু শামা নামের এক শাটারিং মিস্ত্রি। আবু শামা ও তাঁর ভাই শরীয়ত আলী সৈকতের বিরুদ্ধে জমি দখল, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে। 

এ নিয়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘দুই ভাইয়ে তটস্থ কাটাখালীর সবাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। আবু শামা কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর তাঁর ভাই শরীয়ত সহসভাপতি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে আবু শামা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে তা হয়নি। তাঁকে লড়তে হচ্ছে নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে। 

আবু শামা মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় উদ্বিগ্ন কাটাখালীর অনেকেই। আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী পাটকলের সামনের একটি চায়ের দোকানে এ নিয়েই আলাপ করছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। বরকত আলী নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘শামা পড়াশোনা জানেন না। দলের প্রভাব খাঁটিয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এখন মেয়র হতে চান।’ 

পুলিশ জানিয়েছে, আবু শামার বিরুদ্ধে কাটাখালী ও মতিহার থানায় চারটি মামলা রয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো হয়েছে। সবশেষ ২০২০ সালে কাটাখালী থানার মামলাটি হয়েছিল বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। শামার ভাই শরীয়তের বিরুদ্ধেও কাটাখালী থানায় তিনটি ও মতিহার থানায় একটি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক আইনের মামলা চলমান। 

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনারকে কুপিয়ে হত্যারও অভিযোগ আছে। এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ২০১৯ সালে নজরুল ইসলাম নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করেন শরীয়ত। এ ঘটনারও মামলা আছে। 

স্থানীয়রা বলছে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ২০২২ সালের ২১ মার্চ শাটারিং মিস্ত্রি আবু শামাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভাই শরীয়তকে সহসভাপতি করেন শামা। শরীয়ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। দলে পদ পেয়ে দুই ভাই কাটাখালী এলাকায় রামরাজত্ব শুরু করেন। নিরীহ মানুষের জমি দখল, ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আটকে রেখে চাঁদা আদায়, মাছের আড়ত থেকে টাকা তোলাসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। প্রভাব খাঁটিয়ে পৌরসভার বালুমহালও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন শরীয়ত। 

সর্বশেষ গত বছরের ৩ নভেম্বর আবু শামা অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাইজুল ইসলাম নামের এক কলেজছাত্রকে তাঁর কার্যালয়ে আটকে রাখেন। এরপর তাইজুলের বাবাকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তাইজুলের বাবা আবদুল হালিম ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে তাঁকেও আটকে রাখা হয়। মারধর করা হয় বাবা-ছেলেকে। এ নিয়ে পরদিন আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘এবার আবু শামার শিকার বাবা-ছেলে’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে সেদিন বাবা-ছেলে মুক্তি পেলেও ভয়ে তাঁরা মামলা করতে পারেননি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েন উদ্দিনের জায়গায় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন আসাদুজ্জামান আসাদ। নির্বাচনের পর আবু শামা এমপি আসাদের কাছে ভিড়ে গেছেন, তবে সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমান এমপি তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সায় দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় মেয়র হয়ে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া আবু শামা। প্রচার চলাকালে তিনি নানা রকম আপত্তিকর কথাবার্তা বলছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। 

মেয়র হতে আওয়ামী লীগের এই নেতা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেও আপস করে বসেছিলেন। এই নির্বাচনে মোট আটজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় শেষেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৮ এপ্রিল প্রার্থিতা পান রাবেয়া সুলতানা মিতু। তাই আওয়ামী লীগ নেতা আবু শামা, জামায়াত নেতা আমীর আবদুল হাই, সাবেক শিবির নেতা মিজানুর রহমান, বিএনপির কর্মী জিয়াউর রহমানসহ অন্য সাত প্রার্থী সেদিনই রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান। 

তাঁরা দাবি করেন, মিতুকে প্রার্থিতা দেওয়া যাবে না। তাঁরা সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজনকে যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এটি সম্ভব নয়। এ সময় আবু সামা রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলালের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিকের সামনেই এ ঘটনা ঘটান তিনি। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা চান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে অবশ্য এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

বিষয়টি জানতে চাইলে আবু শামা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো মিথ্যা। তিনি কোনো চাঁদাবাজি, জমি দখলের সঙ্গেও জড়িত নন। 

অন্যদিকে শামার ভাই শরীয়ত আলী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট চাকরি করি। পাশাপাশি বালুঘাটে শেয়ার নিয়েছি। ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসাবাড়ির কাজ করি। এটাই আমাদের আয়ের উৎস। চাঁদাবাজি ও জমি দখলের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত