Ajker Patrika

দেশের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরটিও বৃষ্টির পানিতে ডুবল কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ৫০
দেশের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরটিও বৃষ্টির পানিতে ডুবল কেন?

রাজশাহী যে দেশের সেরা শহর, তা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন। সাজানো-গোছানো পরিচ্ছন্ন পদ্মাপারের এ শহরকে দেশের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরও বলা হয়। সেই সেরা শহরটিও ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। বৃষ্টির পরিমাণটা একটু বেশি হলেও সুন্দর শহরটি তলিয়ে যাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এই জলমগ্নতার কারণ খুঁজছেন অনেকে। 

গত বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঝরে। এই সময়ের মধ্যে ২৪৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। গত ১১ বছরের মধ্যে ২০ ঘণ্টায় এত বৃষ্টি আর হয়নি। এবারের অতি ভারী বৃষ্টির কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। 

গতকাল সন্ধ্যার মধ্যেই বড় সড়কগুলো থেকে পানি নেমে যায়। তবে আজ শুক্রবার সকালেও শহরের কিছু নিচু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। গতকাল নগরীর বর্ণালি মোড় এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলেছে। আজ সকালে দেখা গেছে, রাস্তার পানি কমলেও পুরোপুরি নেমে যায়নি। অল্প বৃষ্টিতেই এই স্থানটিতে পানি জমে থাকে। নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এলাকা, সিলিন্দা, তেরোখাদিয়া কলেজপাড়া ও দাসপুকুর মহল্লায় গিয়ে সরু গলিপথগুলোতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অনেকের বাড়ির ভেতর থেকেও এখনো পানি বের হয়নি। বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। 

এই জলাবদ্ধতার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে আবর্জনা ও পলিথিনে ভরে যাওয়া ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা, পুকুর-ডোবার মতো জলাশয় ভরাট করে দেওয়া, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন, রাস্তা ও ভবন নির্মাণ এবং সড়ক পুনর্নির্মাণ কিংবা সংস্কারের সময় উচ্চতা ও ঢাল বিবেচনায় না নিয়ে ক্রমাগত উঁচু করা এই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। 

আজ তেরোখাদিয়া স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে তরিকুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে এখনো পানি জমে আছে। তরিকুল ইসলাম বলেন, রান্নাঘর ডুবে গেছে। ঘরের ভেতরও পানি। বাড়িতে রান্না করার জো নেই। ছোট সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ঘরে খাটের ওপর বসে থাকছেন। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খাচ্ছেন। পানি নামতে আরও সময় লাগতে পারে। 

নগরজুড়ে এভাবে পানি জমে যাওয়ার জন্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘রাস্তাঘাটে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণে পানি স্বাভাবিকভাবে ড্রেনে নেমে যেতে পারেনি। এ ছাড়া পদ্মা নদীর সঙ্গে যেসব বড় ড্রেন সংযুক্ত আছে, সেগুলোর স্লুইসগেট বন্ধ ছিল। শহরের বর্জ্য পানি যেন নদীতে না নামে তার জন্যই এগুলো বন্ধ রাখা ছিল। ফলে সেদিক দিয়ে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নামতে পারেনি। এ ছাড়া বড় বড় আটটি ড্রেন যে খালে গিয়ে মিশে শহরের উত্তরে বারণই নদের পানি নেমে যায় সেই খালটিতে পাট জাগ দেওয়া হয়েছিল। ফলে পানির স্বাভাবিক গতি হ্রাস পেয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা রাসিক প্রকৌশলীর এই তিন ব্যাখ্যার যৌক্তিকতা পাচ্ছেন না। রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘কল্পনা মোড় থেকে কোর্ট পর্যন্ত আদি রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পাশে যে ১৫টি স্লুইস গেট আছে সেগুলো শহরের পানি বের হওয়ার জন্য নয়। এগুলো করা হয়েছিল পদ্মার পানি প্রবেশের জন্য। কারণ, শহরের দক্ষিণে পদ্মার তির থেকে শহর ক্রমাগত উত্তরের দিকে ঢাল হয়েছে। এই স্লুইস গেটগুলো দিয়ে ভরা মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবেশ করে খালের মাধ্যমে উত্তরের মাঠে যেত। বর্ষা শেষে অল্প কিছু পানি এখান দিয়ে নদীতে যেত।’

তিনি জানান, সিটি করপোরেশন গঠনের পর আশির দশকে করা এক ভুলের কারণে রাজশাহী আজও ভুগছে। সফিউদ্দিন জানান, সিটি করপোরেশন গঠনের আগে পুরো শহরে অন্তত ২০ ফুট প্রস্থের নালা ছিল পানি উত্তরে নেমে যাওয়ার জন্য। এই নালাগুলোর নিচের অংশটি ঢালাই করা ছিল না। ফলে নালা দিয়ে প্রবাহের সময় পানি ভূগর্ভেও যেতে পারত। আশির দশকে সিটি করপোরেশন এই নালাগুলো সংস্কারে হাত দেয়। তখন বাজেট স্বল্পতার কথা বলে নালাগুলোর প্রস্থ কমিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময় প্রস্থ আরও কমে। এখন সে সময়ের নালাগুলোর প্রস্থ ৮ ফুটও নয়। নালার পাশের জমিগুলো দখল হয়ে গেছে। দখল জমি উদ্ধার না করে কম প্রস্থেই নালাগুলো এখনো সংস্কার করা হয়। এখনকার ড্রেনগুলোতে আবার বাঁক তৈরি হয়েছে বেশি। ফলে পানির গতি কমে যাচ্ছে। পানির চাপ বেড়ে গেলে এখন তা নেমে যেতে পারছে না। 

রাজশাহীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন একেবারেই এলোমেলো উল্লেখ করে আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনে একটি বেঞ্চমার্ক আছে। এখানে লেখা আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের উচ্চতা কত। এই উচ্চতার চেয়ে রাস্তার উচ্চতা বেশি করা যাবে না। কিন্তু এটি কেউ দেখেন না। প্রতিবছর রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, সংস্কার হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাও বাড়ছে। ২০ বছরে কোথাও কোথাও রাস্তা ৪০ ইঞ্চি উঁচু হয়ে গেছে। এর সঙ্গে উঁচু হয়ে যাচ্ছে সড়কের পাশের ড্রেন। কিন্তু বাড়িগুলো আগের অবস্থানেই থাকছে। এর ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ড্রেনের পানি গিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।’ 

একই রকম কথা বলেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. অনুপম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শহরে পানি যখন আটকেছে তখন বুঝতে হবে এখানকার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক দুর্বল। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা এমন হতে হবে যে, ছোট ছোট ড্রেনগুলো ক্রমশ ঢাল হয়ে বড় নালায় মিলিত হবে এবং এভাবে পানি নেমে যাবে। সেটা হচ্ছে না বলেই জলাবদ্ধতা হয়েছে। ড্রেন শুধু নির্মাণ করলেই হবে না, পরিকল্পনামাফিক নির্মাণ করতে হবে। নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।’ 

রাজশাহী নগরীতে পানির আধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াও জলাবদ্ধতার বড় কারণ বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর সব পুকুর ও ডোবা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেই। পুকুরগুলো সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেই। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও পুকুর ভরাট চলছে। এ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নজর নেই। তাহলে অতিরিক্ত পানি থাকবে কোথায়? পুকুর ডোবা খুঁজে না পেয়ে পানি রাস্তায় আটকাচ্ছে, এসে মানুষের ঘরে ঢুকেছে। ঠিকই তো আছে।’ 

শহরের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না উল্লেখ করে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘একটা শহরের ড্রেন বছরে অন্তত তিনবার পরিষ্কার করার কথা। বর্ষার আগে তো একবার অবশ্যই পরিষ্কার করতেই হবে। তাহলে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে পড়বে না, পানিটা নেমে যেতে পারবে। রাজশাহীতে তো কয়েক বছর ধরে ড্রেন পরিষ্কার করতে দেখি না।’ 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘শহরে এখন প্রায় ২২২ কিলোমিটার ড্রেন আছে। এগুলো পরিষ্কার করতে দরপত্র আহ্বান করতে হয়। তিন-চার বছর আগে দরপত্র আহ্বান করে ৭০ লাখ টাকায় ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এরপর আর হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘শহরে যেন জলাবদ্ধতা না হয় তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে শহরের বর্জ্য পানি পরিশোধন করে পদ্মা নদীতে ফেলা যাবে। পাশাপাশি একই স্থান দিয়ে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নামানো যাবে। শহরের উত্তরেও দ্রুত পানি নির্গমন করা যাবে। তখন শহরে পানি জমবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত আয়শার চিকিৎসা বন্ধ, অর্থাভাবে মানবেতর জীবন

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
শিশু আয়শাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশু আয়শাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তার মা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের আশেক আলী ও সুমি বেগম দম্পতির আট বছর বয়সী মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম দুর্ভোগের জীবন কাটাচ্ছে। জন্মের পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে তার মাথা। দারিদ্র্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আয়শার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে দরিদ্র এই পরিবারের সবটুকু সম্বল ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে অর্থের অভাবে বর্তমানে শিশুটির চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে অস্বাভাবিক বড় মাথা ও তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে ছোট্ট আয়শা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ওই দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আয়শা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। মাথার ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সে নিজে নড়াচড়া করতে পারে না। প্রস্রাব-পায়খানা করাতে হলে দুজন তাকে ধরতে হয়।

আয়শার মা সুমি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের মাথার ওজন এতটাই বেড়ে গেছে যে একা ধরে রাখা যায় না। নাকে মাংস বেড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো শ্বাসও নিতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসক অপারেশনের কথা বলেছেন। অপারেশনে খরচ হবে প্রায় ৭ লাখ টাকা, অন্যান্য খরচসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। তাই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে।’

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে (নয়া দিগন্ত) আয়শার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দুজন প্রবাসী ব্যক্তি ৩৫ হাজার টাকা সহায়তা করেছিলেন। সেই অর্থে কিছুদিন চিকিৎসা চললেও পরে আর তা সম্ভব হয়নি।

আয়শার বাবা আশেক আলী ও মা সুমি বেগম বলেন, ‘দেশের কোনো বিত্তবান কিংবা প্রবাসী মানবিক মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান, তাহলে আমাদের অবুঝ শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতাম।’

এলাকাবাসীও আয়শার চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিদের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবজি গ্রামে শীতকালীন চাষে ব্যস্ত গোপালগঞ্জের কৃষকেরা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জের ‘সবজি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, সিলনা ও গুয়াধানা এবং টুঙ্গীপাড়া উপজেলার রুপাহাটি, গোপালপুর, মিত্রডাঙ্গা ও বন্যাবাড়ি গ্রামের কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমভেদে সারা বছরই এসব গ্রামের কৃষকেরা নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ করে থাকেন।

চলতি শীত মৌসুমে জমি ও মাছের ঘেরপাড়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, ব্রকলিসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন কৃষকেরা। নিজেদের কষ্টার্জিত বিষমুক্ত ও বালাইমুক্ত নিরাপদ সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে ভালো আয় করছেন তাঁরা। উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকদের সংসারে ফিরছে সচ্ছলতা।

এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। রঘুনাথপুর, সিলনা, গুয়াধানা, গোপালপুর ও মিত্রডাঙ্গা গ্রামের মাঠজুড়ে সারি সারি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, মুলা, পালংশাকসহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি শোভা পাচ্ছে। শুধু জমিতে নয়, মাছের ঘেরপাড়েও লাউ, করলা, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে।

কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে চারা রোপণ, সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্ষেতখামারে। এসব গ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হলো সবজি চাষ। শাকসবজির ফলনেই নির্ভর করে হাজারো কৃষকের জীবন-জীবিকা।

এ বছর এসব গ্রামে সবজির ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলা থেকেও ব্যাপারীরা এসে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারি বাজারে মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং লাউ ২০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিলনা গ্রামের কৃষক প্রমথ ওঝা বলেন, ‘আমরা মৌসুম অনুযায়ী সবজি চাষ করি। শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো ও শাকসবজি চাষ করে সংসারের খরচ ও সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় মেটাই। এই ফসলের ওপরই আমাদের জীবন।’

সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই গ্রামের শিলা ওঝা বলেন, ‘১৫ কাঠা জমিতে সবজি চাষ করেছি। ফসল ভালো হয়েছে, লাভও ভালো হবে। এই চাষ করেই আমরা ভালো আছি।’

সিলনা গ্রামের কিষানি রিতা কীর্তনিয়া বলেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে সবজি চাষ করছি। ভাসমান বেডেও নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করি। এতে ভালো লাভ হচ্ছে। গোপালগঞ্জসহ বাইরের জেলার ব্যাপারীরা এসেও আমাদের কাছ থেকে সবজি কিনে নেয়।’

সিংগারকুল গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘেরপাড়ে টমেটো ও শসা চাষ করেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। টমেটো প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং শসা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোপালগঞ্জের উপপরিচালক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘জেলার প্রায় ৪০ শতক জমি নিচু হওয়ায় কৃষকেরা সারা বছর ঘেরপাড়ে সবজি চাষ করেন। রবি মৌসুমে জমিতে ব্যাপকভাবে সবজি আবাদ হয়। এ বছর প্রায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের চেয়ে ভালো ফলনের আশা করছি। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেব: ঝিনাইদহে অ্যাটর্নি জেনারেল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ বাজারে কথা বলছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ বাজারে কথা বলছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা ধানের শীষে ভোট করব। ২৮ ডিসেম্বর আমাদের মনোনয়ন জমা দেব। আমি সেই মনোনয়ন জমা দিতে যাব আপনাদের সঙ্গে নিয়ে, আপনাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে। দল ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আমি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে এসে আপনাদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা আগামী দিনগুলোতে সময় কাটাব, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজ যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, অনেকের সঙ্গে হয়তোবা হাত মেলানো হবে না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, ২৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আমি ২৪ ঘণ্টা আপনাদের মাঝে থাকব, পাশে থাকব, সবার সঙ্গে আমি হাত মেলাব, পাশে দাঁড়াব, বুক মেলাব, কথা বলব, কেউ বঞ্চিত হবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য আপনারা কিছু কথা ভোটারদের কানে কানে পৌঁছে দেবেন। সন্ত্রাসকবলিত শৈলকুপাকে গত ১৬ মাসে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত করেছি। আপনারা যাঁরা ভোট চাইতে যাবেন। প্রত্যেক মা-বোনদের বলবেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক পরিবারের মহিলাদের জন্য একটি করে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করা হবে। প্রত্যেক কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আমরা বরাদ্দ করব। যত দিন তিনি জীবিত থাকবেন তত দিন তিনি পাবেন। আমাদের আরেকটি অঙ্গীকার থাকবে কৃষক কার্ড।’

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল আমরা শুনতে পাচ্ছি তাদের মহিলা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেহেশতের টিকিট বিক্রি করছেন। আপনারা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন, এটা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। এটা কোরআনের বাণীর বিপরীতের কথা। যদি এখন বেহেশতের টিকিট দেওয়া হয়, তাহলে রোজ কিয়ামতের দিন কী হবে। এই জিনিসটা আপনারা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার জন্য আপনাদের ভোট চাওয়ার দরকার নেই। আপনি খালি নিশ্চিত করবেন প্রতিটা ভোটার যাতে তার ভোট প্রয়োগ করতে পারে। আমি ভোট চুরির এমপি হতে চাই না। আমি দুর্নীতি করার জন্য এমপি হতে চাইনি। আমি আলিশান বাড়ি, প্রাডো গাড়ি কেনার জন্য এমপি হতে চাইনি। আল্লাহ আমাকে বাড়ি-গাড়ি দিয়েছেন। আমার সন্তান দিয়েছেন। আমি এমপি হতে চেয়েছি এই সমাজকে পরিবর্তন করার অঙ্গীকার নিয়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত