ফের আচরণবিধি ভাঙলেন এমপি ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ৫৮

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আবারও আচরণবিধি ভেঙে সরকারের বিভিন্ন উপকারভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন। আজ শনিবার নিজের নির্বাচনী এলাকা তানোরে দুটি সভা করে আসন্ন নির্বাচনে সবাইকে নৌকার পক্ষে থাকার আহ্বান জানান। অথচ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে পারবেন না।

ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য রয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি ভেঙে তানোর ও গোদাগাড়ীতে উপকারভোগীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করে নৌকায় ভোট চান। 

এসব সমাবেশ দৃষ্টিতে পড়লে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেন। এর ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতিবেদন দেন। ইসি এই সংসদ সদস্যকে সতর্ক করার জন্য একটি চিঠি দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে সতর্কও করেন। কিন্তু কয়েক দিন পার না হতেই তিনি আবার আচরণবিধি ভাঙলেন। 

কমিশনের সতর্কতাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী শনিবারও তানোরে দুটি সমাবেশ করেন। কৌশলে সভা দুটির কোথাও ব্যানার লাগানো হয়নি। এ দিন তিনি তানোর পৌরসভার গোকুল ও বুরুজ এলাকার সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির উপকারভোগীদের নিয়ে দুটি সমাবেশ করে নিজের জন্য ভোট চান। বিকেলে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোকুল-মধুরাপুর দাখিল মাদ্রাসা মাঠে একটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওমর ফারুক চৌধুরী। পরে তিনি তানোর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বুরুজ এলাকায় গিয়ে আরেকটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। 

গোকুল-মথুরাপুর দাখিল মাদ্রাসার সমাবেশে ফারুক চৌধুরী বলেন, আগে মানুষ বছরে একবার দু’বার গরুর গোশত খেতে পেরেছেন। এখন মানুষ বছরে দুই ঈদ ছাড়াও কম করে প্রতি মাসে ছয়বার সাতবার করে গরুর গোশত খেতে পারেন। যদিও এক কেজি গোশতের দাম ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। তাতেও মানুষের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এখন ধানের মণ হাজার টাকা থেকে হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। 

ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, বর্তমান সরকার ১০ টাকা কেজি চাল ছাড়াও অনেক প্রকারের ভাতা চালু করেছেন। এতে হাজার হাজার মানুষ ভাতা সুবিধা পেয়ে বেশ ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছে। গৃহহীনদের পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। নৌকা জিতলে ভাতা আরও বাড়বে। ফলে সকলকে একযোগে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। সকলের মনে রাখা দরকার নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। নৌকার সরকার হলে দেশের উন্নয়ন হয়। আরও উন্নয়ন পেতে চাইলে নৌকাতেই সিল মারতে হবে। 

অন্যদিকে বুরুজ এলাকার সমাবেশে ফারুক চৌধুরী এমপি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি আরেকটি অগ্নিপরীক্ষা আসছে। এই পরীক্ষায় সবাইকে জিততে হবে। জিতলে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমি তানোরের মাটির সন্তান। নৌকা মার্কায় বিপুল ভোট দিয়ে আমাকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিতে হবে। আবারও নৌকায় ভোট দিলে সরকারি ভাতা দ্বিগুণ করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এই দুই সমাবেশে এমপির পক্ষের আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। কেউ করলে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সমাবেশের বিষয়টি এখনই জানলাম। আমি ইসিতে প্রতিবেদন দেব। তারপর যে নির্দেশনা দেওয়া হবে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে গণমাধ্যমের শিরোনামে আসার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, এক শ্রেণির সাংবাদিকেরা তাকে আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত