অফিসে বসার জন্য চেয়ার পাননি, শ্রান্তি-বিনোদনের ছুটিতে কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
Thumbnail image

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) হিসেবে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ। সম্প্রতি বিএমডিএতে নতুন ইডি দিয়েছে সরকার। আব্দুর রশীদ নতুন ইডির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এখন তিনি বসবেন কোথায় তা ঠিক হয়নি ১০ দিনেও। বসার চেয়ার না পেয়ে আব্দুর রশীদ ১৫ দিনের শ্রান্তি-বিনোদন ছুটিতে চলে গেছেন।

চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ ২০২১ সালের মে মাস থেকে ইডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিএমডিএর প্রতিষ্ঠাকালেই তিনি এখানে যোগ দেন। আর মাত্র কয়েক মাস চাকরি আছে তাঁর। এর আগে তাঁকে ইডির পদ থেকে সরিয়ে নিচের পদে নামিয়ে এনে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিএমডিএর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আব্দুর রশীদ। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমি ১৫ দিনের শ্রান্তি-বিনোদন ছুটিতে আছি। যেদিন দায়িত্ব ছাড়ি, সেদিন আমি কোথায় বসব তা দেখিনি। তারপর থেকে আর অফিসে যাইনি। আমার বসার জায়গা কেন ছিল না তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। ছুটি শেষে অফিস যাব। তখন দেখা যাবে।’ 

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে সেচ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বিএমডিএতে চেয়ারম্যান ও সচিবের পদ থাকলেও প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ইডিই দায়িত্ব পালন করেন। এখানে চুক্তিভিত্তিক চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। টানা দুই মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান। 

বিএমডিএ সূত্র জানায়, সংস্থায় সব সময় ৬-৭টি প্রকল্পের কাজ চলে। এসব প্রকল্পের কাজ পছন্দের ঠিকাদারদের দিতে রাজনৈতিক চাপ থাকে। প্রকল্প পরিচালকেরা (পিডি) সাধারণত ইডির নির্দেশনামতো কাজ করেন। এতে সুবিধা করতে পারছিলেন না চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান। আর বিভিন্ন সময় পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য আব্দুর রশীদকে চাপ দিতেন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী বনি। রশীদ ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় বনিও চটে যান। সম্প্রতি এক প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে রশীদকে ইডির পদ থেকে সরানো হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। 

গত ২৬ জুন বিএমডিএর ইডি হিসেবে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) মহাপরিচালক শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ১৫ জুলাই শফিকুল ইসলাম এই পদে যোগ দেন। ওই দিনেই শফিকুলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আব্দুর রশীদ। সকালে দায়িত্ব নিয়ে শফিকুল ইসলাম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দুপুরে মতবিনিময় শেষে আব্দুর রশীদ আর বসার জন্য কোনো চেয়ার পাননি। তাঁর জন্য কোনো কক্ষ বরাদ্দ ছিল না। এ জন্য পরদিন থেকে আব্দুর রশীদ আর বরেন্দ্র ভবনে যাননি। এখন তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানা গেছে। 

বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ইডির দায়িত্ব হস্তান্তর করলেও আব্দুর রশীদ এখনো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তাঁর বসার জন্য আলাদা কক্ষ বরাদ্দ থাকার কথা। কিন্তু ইডির দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি বসার জন্য চেয়ার পাননি, এটা দুঃখজনক। নতুন ইডি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পরও দুই সপ্তাহ পর তিনি যোগ দেন। এই সময়ের মধ্যেও চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদের বসার ব্যবস্থা করেননি। চাকরির শেষ সময়ে রশীদকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএমডিএর এক কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী বনি বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না।’ 

এ বিষয়ে বিএমডিএর সচিব যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘নতুন ইডি স্যারকে জানিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ শ্রান্তি-বিনোদন ছুটিতে আছেন বলে শুনেছি। সে জন্য হয়তো অফিসকক্ষ প্রস্তুত করা হয়নি। তিনি ছুটি শেষে আসার পরে হয়ে যাবে।’ ইডির দায়িত্ব হস্তান্তরের পর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কেন বসার চেয়ার পাননি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত