রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবদুল বারী তিন বছর পর আবার স্বপদে ফিরেছেন। সেবাপ্রার্থীদের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তখন তাঁকে বদলি করা হলেও একই স্থানে একই পদে তাঁকে পুনর্বহাল করায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি রাজশাহীর এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেন এক আদেশে আবদুল বারীকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ হিসেবে বদলি করেন। এর আগে তিনি পুঠিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বদলির আদেশ পেয়ে আজ রোববার সকালে আবদুল বারী প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করেন।

প্রেমতলী বাজারে ২০২০ সালের এপ্রিলে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘সে সময় করোনা ছিল। এলাকার এক ব্যক্তি বাইরে থেকে এসে কোয়ারেন্টাইন মানছিলেন না। বিষয়টি তদন্ত কেন্দ্রে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ জন্য আমি এসপিকে ফোন করে বলেছিলাম। তৎকালীন এসপি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ইনচার্জ আবদুল বারী। তিনি তিনজন এএসআইকে দিয়ে আমাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে সবার সামনে মারধর করেন।’

বাদশাকে পেটানোর বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্ত কেন্দ্র থেকে সে সময় তিনজন সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) প্রত্যাহার করা হয়। ওই সময় ইনচার্জ আবদুল বারীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এলাকাবাসী। কোনো কাজে ফাঁড়িতে গেলেই পুলিশের এই কর্মকর্তা দুর্ব্যবহার করতেন।

এ নিয়ে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই ফরাদপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তৎকালীন এসপি মো. শহিদুল্লাহর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, তিনি একটি কাজে প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে পরিদর্শক আবদুল বারী তাঁকে গালাগাল করেন। তিনি এলাকার আরও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের দুর্ব্যবহার করে থাকেন।

এই অভিযোগ পড়ার পর বিষয়টির তদন্ত হয়। তদন্তে বারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ কারণে তাঁকে তদন্ত কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলাও করা হয়। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, তিন বছর আগে বারীর বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের শায়েস্তা করতেই তিনি আবার তদবির করে এই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ফিরেছেন। এ কারণে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

স্থানীয়রা জানান, আবদুল বারী ওই সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি তুষার সরকারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। অভিযোগ দিতে গেলে খেতুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম নামের এক বৃদ্ধাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছিলেন। দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল রানাও।

অভিযোগ তদন্তের সময় তাঁরা বলেছিলেন, কেউ অভিযোগ নিয়ে গেলেই একপক্ষের অবস্থান নিয়ে বারী গালাগাল করেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘আমরা যারা বারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, তাদের এখন আবার বারী হেনস্তা করতে পারেন। এ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই, দ্রুত তাঁকে প্রত্যাহার করা হোক। তা না হলে এলাকার লোকজন বিক্ষোভ করবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অহেতুক কাউকে হয়রানি করবে, পুলিশের এমন দিন আছে নাকি? আমরা আছি না? আমরা দেখে রাখব। বারী এলাকার কাউকে অহেতুক হয়রানি করতে পারবেন না।’

বিতর্কিত ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে স্বপদে আগের স্থানে পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে রাজশাহীর এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘বারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল, সে শাস্তিও পেয়েছে। আইনে তো বলা নেই যে যেখান থেকে প্রত্যাহার হয়েছিল সেখানে আর যেতে পারবে না। এলাকার যারা বারীর কারণে ভয় পাচ্ছে, তারা আমার কাছে এলে ভয় দূর করে দেব।’