শখের ফাঁদে বিকলাঙ্গ মিজানুরের মানবেতর জীবন

মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৭: ১৯
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৯: ১৬

ঘুড়ি উড়ানোর শখ ছিল মিজানুর রহমানের। ১৯৮৮ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে একদিন সকালে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ বিদ্যুতের তারে আটকে যায় শখের ঘুড়িটি। বৈদ্যুতিক খুঁটি বেয়ে ঘুড়িটা নামাতে গিয়ে নিজেই আটকে পড়েন বিদ্যুতের তারে। পরে চিকিৎসায় জীবন বেঁচে গেলেও কেটে ফেলতে হয় বাম হাত ও বাম পা। তারপর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে শখের ঘুড়িই হয়ে গেল তাঁর দুটি অঙ্গহানির কারণ।

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমান। তাঁর বয়স এখন ৫২ বছর। চৌদ্দ বছর ধরে তিনি বাস করছেন একই ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামে। চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, বাকিরা সবাই ছোট। 

বর্তমানে বেশ দারিদ্র্যের মধ্যে কাটছে মিজানুর রহমানের জীবন। চলাফেরার জন্য নেই একটা হুইল চেয়ার। অন্যের ভিটেয় ছোট্ট একটা ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বসবাস। থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল ছাড়া ঘরে নেই কোন আসবাবপত্র। দুটি চকিতে কাটে পরিবারের সব সদস্যের রাত। ঘরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। নেই খাবার পানির চাহিদা মেটানোর কোনো ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতাও পান না তিনি। সহায়-সম্বলহীন অসহায় প্রতিবন্ধী মিজানুরের কপালে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটা ঘর। 

সরেজমিন দেখা যায় মিজানুরের দুঃসহ জীবন। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাঁর খোঁজ নেয়নি কেউই। বেঁচে থাকার তাগিদে এক হাত আর এক পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে তাঁর জীবন-সংগ্রাম। 

জীবিকার তাড়না, ঘর না থাকলেও একটি ঘোড়া পালেন মিজানুর। পালেন না বলে পালতে বাধ্য হচ্ছেনও বলা যায়। কারণ, ধান ও শস্যের মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহন করে সংসার চালান তিনি। যা উপার্জন হয় তার বেশির ভাগই ঘোড়ার পেছনে লেগে যায়। আর বর্ষাকালে হাতে কোন কাজ না থাকায় সন্তানাদি নিয়ে চলতে হয় আরও কষ্টে। অসহায় এই মানুষটি জানান, তিনি শুনেছেন যাদের ঘর নেই, দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ঘর কপালে জোটেনি তাঁর। একটা হুইল চেয়ারের অভাবে চলাফেরা করতেও কষ্ট হয় তাঁর। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ্ব উদ্দিন জানান, প্রতিবন্ধী মিজানুর একজন অসচ্ছল মানুষ। তাঁর কোন জায়গা-জমি না থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে সরকারি ঘর দেওয়া যায়নি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত