কনডমেই নিরাপদ ফেনসিডিল 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৩৪
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, ১৭: ৩৩

ফেনসিডিলের বোতলের লেবেল যেন মুছে না যায়, সে কারণে বোতল কনডমের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়। আর এটিকে সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেন মাদক কারবারিরা। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের মাদকদ্রব্য ধ্বংসের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাহিদ হোসেন।

বিজিবির এই কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে মাদকের বোতলগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে রাখে অথবা পুকুরের পানিতে ফেলে রাখে তারা। এ ছাড়া ভারত সীমান্ত পার হয়ে কয়েক হাত বদলের পরও লেবেল যাতে উঠে না যায় এ কারণে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা।

সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ সীমান্তের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হলেও অরক্ষিত রয়েছে নদীপথ ও চর এলাকা। এসব এলাকা দিয়েই রাতে ও দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশেষ কৌশলে ঢুকছে ভারতীয় ফেনসিডিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির অভিযানে উদ্ধার হওয়া কনডমে ঢোকানো ফেনসিডিলশিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি এলাকার মাদক কারবারি নাইমুর রহমান (ছদ্মনাম) বলেন, ‘ভারত থেকে বস্তা এবং কার্টনে ভরে ফেনসিডিল আনা হয় বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে কয়েক হাত বদল করতে হয়। এতে ফেনসিডিলের গায়ে লাগানো লেবেল নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে ক্রেতাদেরও সন্দেহ তৈরি হয়। সন্দেহ দূর করতেই প্রতিটি ফেনসিডিলের বোতলকে কনডমের ভেতর ঢুকিয়ে আনা হয়। এতে লেবেল ঠিক থাকায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপাদনের তারিখ এবং মেয়াদ ঠিক থাকে। ফলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়।’

গাইপাড়া এলাকার মাদক কারবারি সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ফেনসিডিলগুলো পুকুর, নদী এমনকি মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হয়। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় বোতলের গায়ের লেবেল উঠে যায়। লেবেল বাঁচাতে এ পারে এনেই দোকান থেকে কনডম কিনে ফেনসিডিলের বোতল ঢুকিয়ে রাখা হয়। এতে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকে।’

সোনামসজিদ এলাকার কামালপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একজন কাস্টমার ফেনসিডিল নিতে এসে প্রথমে দেখে উৎপাদনের তারিখ ঠিক আছে কি না। তারিখ ঠিক থাকলেই আর দাম দর করতে হয় না। দ্রুতই বিক্রি হয়ে যায় ফেনসিডিল।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির অভিযানে উদ্ধার হওয়া কনডমে ঢোকানো ফেনসিডিলআনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একটি ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। দাম বাড়ার পর থেকে লেবেল ঠিক রাখার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ৫৩ বিজিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাদক পাচারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে চোরাকারবারিরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে কনডমের ভেতর ফেনসিডিলের বোতল ঢুকিয়ে পাচার করছে। চোরাকারবারিদের ঠেকাতে বিশেষ নজর দিচ্ছে বিজিবি সদস্যরা।’

আরও খবর পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত