তিরন্দাজ রোমান-দিয়ার বিয়ে, একে অপরকে ছুড়েছিল ‘ভালোবাসার তির’

নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৩, ২০: ২৬
Thumbnail image

দেশের দুই তিরন্দাজ এত দিন তির ছুড়েছেন সামনে থাকা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। দেশে-বিদেশের মাটিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এনে দিয়েছেন সম্মান। জিতেছেন সোনা, ব্রোঞ্জ, রৌপ্যপদক। তবে এরই মধ্যে একে অপরের দিকে ছুড়ে দিয়েছিলেন ভালোবাসার তির। দুজনের সেই প্রেম যেন পূর্ণতা পেল আজ। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ে হয়ে গেল দেশের সেরা দুই আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকীর।

আজ বুধবার দুপুরে নীলফামারীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশত বরযাত্রী নিয়ে আয়োজিত বিয়ের আসরে বরবেশে আসেন রোমান সানা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা বিউটি বেগম, বড় ভাই বিপ্লব সানা, বোন লুবনা আক্তার, চাচা রোকন সানা। আর্চারি ফেডারেশনের পক্ষে ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল, ট্রেজারার আনিসুর রহমান দিপু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রশিদুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সহসাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিরন, আর্চারি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সাবকমিটির চেয়ারম্যান ফারুক ঢালী, প্রধান কোচ মিস্টার মার্টিন ফেডারিক।

মূল ফটকে বর রোমান সানাসহ বরযাত্রী এবং অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, দিয়া সিদ্দিকীর বাবা নূর আলম সিদ্দিকী, মা শাহানাজ বেগম, মামা আনজারুল ইসলাম জুয়েল।

তিরন্দাজ দিয়া সিদ্দিকীর বেড়ে ওঠা নীলফামারী শহরে। পৌর শহরের নীলকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় তাঁর বাড়ি। দিয়ার বাবা নূর আলম সিদ্দিকী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত। তিন ভাইবোনের মধ্যে দিয়া সবার বড়।

অন্যদিকে রোমান সানার বাড়ি খুলনার রূপসায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। বর্তমানে আনসারে ল্যান্সনায়েক পদে কর্মরত রোমান। দিয়াও বিকেএসপির পাঠ চুকিয়ে এ বছরই যোগ দিয়েছেন আনসারে।

 ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসে খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো গেমসেরই কোনো ইভেন্টে বাংলাদেশ বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারেনি। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ আর্চারি দল বাছাইপর্ব পেরিয়ে খেলেছে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টের চূড়ান্ত পর্বে। ওই ইভেন্টে রোমান সানার সঙ্গী ছিলেন দিয়া। বাছাই পেরিয়ে মেয়েদের এককের প্রথম রাউন্ডেও খেলেন তিনি।

পছন্দের পাত্রের কাছে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে খুশি দিয়ার বাবা নূর আলম সিদ্দিকী ও মা শাহনাজ বেগম। তাঁদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য দেওয়া চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। এ সময় তাঁরা জানান, কয়েক মাস ধরেই এ বিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। অবশেষে তা চূড়ান্ত হলো।

বিয়ের অনুভূতিতে দিয়া সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিয়ে করলে বরকত বাড়ে। সে হিসেবে ডুয়েল পেয়ারে কাজ হবে। আমরা দুজন একসঙ্গে দেশের প্রতিনিধিত্ব করব। আল্লাহ যদি চান, তাহলে আমাদের হাত দিয়ে অলিম্পিকে গোল্ড আসবে।’

বর রোমান সানা বলেন, ‘এর আগে আমাদের একটা সম্পর্ক ছিল, সেটা আজকে পরিপূর্ণতা পেল। আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি মনে করি, বিয়ের পর বরকত বাড়ে। আমরা দুজন মিলে চেষ্টা করব নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বাংলাদেশকে আর্চারিতে অন্য লেভেলে নিয়ে যেতে পারি।’

তিরন্দাজ রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকীরোমান আরও বলেন, ‘সব সময় আমরা চেষ্টা করেছি। দিয়ার ডেডিকেশন সব সময় আমার থেকে বেশি থাকে। আমি যতটুকু সাপোর্ট দিতে না পেরেছি, ও সব সময় আমার থেকে বেশি সাপোর্ট দিয়েছে। এখন যেহেতু সে আমার সহধর্মিণী, সে হিসেবে আশা করি আরও দ্বিগুণভাবে সাপোর্ট দিতে পারবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব আহমেদ চপল বলেন, ‘আমরা যাঁরা অভিভাবক আছি, আমাদের সবার কামনা একটাই, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করুক। ক্রীড়াঙ্গনে আমরা অনেক ভালো ভালো স্বপ্ন তো দেখছি। তারা যেন স্বাধীনভাবে খেলতে পারে। তাহলে উন্নতি হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের। তাদের গতি বাড়ানোর জন্যই এই বিবাহের আয়োজন। এ জন্যই রোমান সাম্রাজ্যে দিয়ার আবির্ভাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর্চারি আমাদের দেশে একটা নতুন খেলা। এর বয়সের তুলনায় আমাদের অর্জন বেশি। এটা কিন্তু ক্রমান্বয়ে তাদের জন্যই হয়েছে। আমরা সবার পক্ষ থেকে দোয়া করব, তারা যেন সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে এবং আর্চারি খেলার জন্য আরও বেশি মনোনিবেশ করে। সামনে অলিম্পিক কোয়ালিফিকেশন আছে। তারা যেন অধিক মনোনিবেশ করে। তাহলে তাদের স্বপ্ন ছোঁয়া সফল হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত