গাইবান্ধা সদরে কাচারিবাজারের পুরাতন জজ কোর্টের জায়গায় দখল-বেদখল ও কথিত লিজ প্রক্রিয়ার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতারা। জায়গাটির তত্ত্বাবধায়ক জেলা ও দায়রা জজ আদালত কর্তৃপক্ষের ‘নির্বিকার ভূমিকা’ উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কথিত লিজের প্রক্রিয়ার বৈধতাসহ সকল প্রশ্নের জবাব প্রকাশ করতে হবে। এ সব তথ্য জানার অধিকারকে নাগরিক অধিকার বলে মনে করেন তাঁরা। 

রাজনীতিবিদেরা বলেন, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সম্প্রতি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গাইবান্ধার কাচারিবাজারে পুরাতন জজ কোর্টের জায়গায় দখল-বেদখল ও মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তন করা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রথমত-কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে, কবে, কখন মূল্যবান জায়গাটি লিজ দেওয়া হয়েছে তা অস্পষ্ট। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর কেন হঠাৎ করে লিজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল তাও অস্পষ্ট। রাতারাতি সেখানকার পুরোনো গাছ-গাছালি কেটে হরিলুট করার পরও আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান-জায়গাটির তত্ত্বাবধায়ক জেলা ও দায়রা জজ আদালত কর্তৃপক্ষের নির্বিকার ভূমিকা জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।’ 

আরও বলা হয়, ‘সরকারি জায়গায় গাছ কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। শোনা যায়-প্রতি স্কয়ার ফুট আট টাকা ফি দরে লিজ দেওয়া হয়েছে, এই লিজ ফি কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানা দরকার। নিয়ম অনুযায়ী পৌর এলাকার যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করা বাধ্যতামূলক হলেও এ ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না সেটিও অজানা। ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রভাবশালী বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষকে এই জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের অনেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ হাতবদল করেছে।’ 

বিবৃতিতে বাম নেতারা বলেন, ‘এমনও শোনা গেছে, কর্তৃপক্ষ নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কথিত ভাড়াটেদের কাছে শর্ত দিয়েছেন, যে কোনো সময় বিনা নোটিশে এ জায়গা ছাড়তে হবে। তাহলে যারা বুঝে কিংবা না বুঝে লাখ লাখ টাকায় বা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বরাদ্দকৃত জায়গার বদলে লেনদেন করছে। ভবিষ্যতে চুক্তির শর্ত অনুপাতে আর্থিক ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’ 

আরও বলা হয়, ‘উপরিউক্ত প্রশ্নসমূহের উত্তর প্রকাশ করা কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। আমাদের বিশ্বাস কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কথিত লিজের প্রক্রিয়ার বৈধতাসহ সকল প্রশ্নের জবাব প্রকাশ করবেন। আর এ সব তথ্য জানার অধিকারকে আমরা নাগরিক অধিকার বলে মনে করি।’ 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ আমরা জায়গা দখল ও অবৈধভাবে লিজের প্রতিবাদে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছি। এরপর লিগ্যাল নোটিশ করা হবে। এরপরও যদি পুরাতন জজ কোর্টের জায়গায় ঘর নির্মাণ বন্ধ না হয়। তাহলে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’ 

বিবৃতিদাতা বাম রাজনৈতিক নেতারা হলেন—বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আমিনুল ইসলাম গোলাপ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গাইবান্ধা জেলা সভাপতি প্রনব চৌধুরী, বাসদ, (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক মৃনাল কান্তি বর্মন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ জেলা সম্পাদক রেবতি বর্মন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক অ্যাড. নওশাদুজ্জামান এবং বাসদ, (মার্কসবাদী) জেলা কমিটির সদস্য অ্যাড. নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী।