‘সরই হেতু মতে ওড়া সাজাওঁ’

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘সরই হেতু মতে ওড়া সাজাওঁ (বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি সাজাচ্ছি), সিকাতে রঙইং ক্রিংয়া পাইসা বানু তিয়া (টাকা নেই কী আর করা, চুন দিয়ে এভাবে আলপনা আঁকছি) ’ কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী এলেথিউস বাস্কে। 

আর মাত্র দুদিন পর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। দিনটি জাঁকজমকভাবে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালনের লক্ষ্য নিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৭২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল, অধ্যুষিত খ্রিষ্টান প্রধান আদিবাসী পাড়ার ৫৮টি গির্জায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। 

চারদিকে নানা রঙে সাজানো হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লিগুলো। এগুলোর মধ্যে সূর্যপাড়া, পারইল, বাসুদেবপুর, নথন, সিরামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে বড়দিনের উৎসব পালন করা হবে। এখানকার বাসিন্দারা নানা রকমের ফুল, বেলুন, নকশা করা কাগজ ও জরি দিয়ে কয়েক দিন ধরেই সাজাচ্ছেন তাদের গির্জা। উপজেলার সবগুলো গির্জায় বর্ণিল সাজে কয়েক দিন ধরেই চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। তাদের বিশ্বাস, যিশুর জন্ম হয়েছিল গোয়ালঘরে বা গোশালায়। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে তৈরি করা হয়েছে প্রতীকী গোয়ালঘর। 

আজ শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার আলাদীপুর সূর্যপাড়া ও পারুইল, সিরামপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লি ঘুরে দেখা যায়, পল্লির লোকজন বাড়ির সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত। অনেকের কেনা-কাটা শেষপর্যায়ে। কেউ এখনো কেনা-কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সূর্যপাড়া গ্রামে এলেথিউস বাস্কে ও ভেনু বাস্কে তাদের মাটির ঘরে কয়লাগুড়ো দিয়ে কালো রং এবং বাজার থেকে কিনে আনা লাল, নীল রং করছেন। 

কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কোদবীর মিশনপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আলবিনা বাস্কে তার মাটির ঘরে লেপন দিচ্ছেন এবং চুন দিয়ে আলপনা আঁকছেন। 

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা বাড়িতে আলপনা আঁকছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

তার সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধির। তিনি সাঁওতালি ভাষায় বলেন, ‘সরই হেতু মতে ওড়া সাজাওঁ, আনে রেংগেই হড় বানু তালে টাকা পাইসা আনাতে যাহা লেকাতে পরবও কানা লে।’ বাংলা অর্থ করলে যা দাঁড়ায় সেটি হলো—‘বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি সাজাচ্ছি, আমরা গরিব মানুষ টাকা-পয়সা কম থাকলেও উৎসব পালন করছি।’ 

উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতা কমল কিসকু আজকের পত্রিকাকে জানান, উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত পাড়া রয়েছে ৭২টি। লোকসংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। এসব লোকজন ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে উপজেলার ব্যাপ্টিস্ট, ক্যাথলিক, লাথারন, এফসিসি এবং চার্চ অব গডের ৫৮টি চার্চে প্রার্থনা করবেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, উপজেলার ৫৮টি গির্জার প্রতিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি করে জিআরের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা বাড়িতে আলপনা আঁকছেন। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কোদবীর ক্যাথলিক চার্চের ইনচার্জ ফাদার জসিম ফিলিপ মুর্মু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দিবসটি উপলক্ষে গির্জায় নানা আয়োজন করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকে প্রার্থনা শুরু করা হবে, পরের দিন ২৫ ডিসেম্বর সারা দিন বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্‌যাপন শেষ হবে। এই দিনে তারা মানুষের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করে যিশুকে স্মরণ করেন।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ তমাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে উপজেলার ৫৮টি গির্জার প্রতিটিতে ৫০০ কেজি হিসাবে ২৯ হাজার টন চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা যাতে শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে দিবসটি উদ্‌যাপন করতে পারে, সেদিক খেয়াল রাখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত