ডাকের কোয়ার্টার: রংপুরে ১৪ ফ্ল্যাটের ৯টিতেই থাকেন বহিরাগতরা

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৩৭
Thumbnail image

রংপুর ডাক বিভাগের সরকারি কোয়ার্টারের বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে থাকেন না ডাক বিভাগের কর্মচারীরা। তবে নিজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন বহিরাগতদের। সেই সঙ্গে পরিত্যক্ত তিনটি ভবনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। এসব দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল ইসরাত জাহান নূর। কিন্তু এসবে তাঁর চোখ তো পড়েই না, বরং সাড়ে তিন বছর ধরে কোয়ার্টারের ফ্ল্যাটে থেকেও দেননি কোনো ভাড়া।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকায় ডাক বিভাগের পোস্টাল কোয়ার্টার রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি পরিত্যক্ত। একটি তিনতলা ও একটি চারতলা কোয়ার্টারে ফ্ল্যাট রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ৯টি ফ্ল্যাট বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একজনের নামে বরাদ্দ নিয়ে অন্যজন বসবাস করছেন। কেউ কেউ দিয়েছেন সাবলেটও।

অভিযোগ উঠেছে, পোস্টাল কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের আসরসহ নানা অনৈতিক কার্যক্রম সংঘটিত হয়। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কোয়ার্টারে থাকা অন্য কর্মচারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোয়ার্টারের এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাতে পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে মাদকসেবীদের আসর বসে। অনৈতিক কার্যকলাপও হয়। তাদের উৎপাতে আমরাও শঙ্কিত।’

সম্প্রতি কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, কোয়ার্টারের চারতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. আল মাসুমের নামে বরাদ্দ থাকলেও থাকছেন স্কুলশিক্ষক আফরোজা খাতুন বেবি।

ডাক বিভাগের কোয়ার্টারে কীভাবে ভাড়া থাকেন জানতে চাইলে স্কুলশিক্ষক বেবি বলেন, ‘আমি এখানে ভাড়া থাকি। যার নামে বরাদ্দ, প্রতি মাসে তাকে ভাড়ার টাকা দেই। ডাক বিভাগের কোয়ার্টার কেন, সব সরকারি কোয়ার্টারেই ভাড়া থাকা যায়।’

একই তলার অপর ফ্ল্যাট অফিস সহায়ক জহির উদ্দিনের নামে বরাদ্দ হলেও সেখানে থাকেন শিমু আক্তার নামের এক নারী। একই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট প্রধান ডাকঘরের প্যাকার লুৎফর হাবিব রানার নামে বরাদ্দ। কিন্তু ভাড়া থাকেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম। ওই ফ্ল্যাটে গেলে জাহাঙ্গীরকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক নারী বলেন, ‘এক ভাইয়ের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে এখানে থাকছি।’

আরেক ভবনের নিচতলায় প্রধান ডাকঘরের অফিস সহায়ক শাহিনুর ইসলামের নামে বরাদ্দ নেওয়া ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভাড়া থাকেন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমরাই না, এখানে বহিরাগত অনেকেই ভাড়া থাকেন। ১৪টা বাসার মধ্যে ৩টা ছাড়া বাকি সবগুলো বরাদ্দ নিয়ে অন্যদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমি ১৫ বছর ধরে এ কোয়ার্টারে ভাড়া আছি।’

সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে কীভাবে ভাড়া দিলেন—জানতে চাইলে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল অফিসের অফিস সহায়ক জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ ছিল, এটা আমি জানতাম না। কোয়ার্টারের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়া দিচ্ছেন না রংপুর বিভাগীয় অফিসের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল ইসরাত জাহান নূর। তাঁর ফ্ল্যাটের প্রতি মাসে ভাড়া ১৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৪৩ মাসে ভাড়া বাবদ ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেননি। এমনকি বিদ্যুৎ ও পানির বিলও দেননি বলে জানা গেছে।

ডাক বিভাগের কোয়ার্টার বহিরাগতদের ভাড়ার বিষয়ে ইসরাত জাহান বলেন, ‘ডাক বিভাগের কোয়ার্টারের বিষয়গুলো জানা ছিল না। বিধিবহির্ভূত যদি কোনো কিছু হয়ে থাকলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

সরকারি কোয়ার্টারে দীর্ঘদিন থেকেও ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে নূর বলেন, ‘আমার প্ল্যান আছে, শুরু থেকে যা টাকা হয়, আমি দিয়ে দেব। ভাড়ার টাকা আমার কাছে জমা আছে।  বিদ্যুতের আলাদা মিটারের জন্য লেখালেখি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিটার দেয়নি। তাই বিল দিতে পারিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত