সৈয়দপুরে পানি মিশিয়ে মাংস বিক্রির অভিযোগ, দেখার কেউ নেই

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৪৮
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৪১

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিশেষ কায়দায় গরু ও খাসির মাংসে পানি পুশ করে ওজন বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ওজন বাড়াতে মাংস রাখা হয় বরফে। এক কেজি মাংসে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রামের বেশি পানি থাকে। এভাবে একদল অসাধু মাংস ব্যবসায়ী ওজন বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসব কারবার চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। 

মাংস ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানান, উপজেলার সাহেবপাড়া, গোলাহাট, ঢেলাপীড়, মৌজার মোড়, ২ নম্বর রেলক্রসিং এলাকায় গড়ে উঠেছে অসাধু মাংস ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। পৌরসভার কসাইখানায় গরু জবাই করার নিয়ম থাকলেও ওই ব্যবসায়ীরা চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সনদ ছাড়াই নিজেদের মতো করে পশু জবাই করেন। এভাবে রোগাক্রান্ত পশুও জবাই করেন তাঁরা। এ কারণে তাঁরা দিনের বেলায় গরু জবাই না করে ভোরবেলায় জবাই করেন। 

এরপর চামড়া ছাড়িয়ে ভুঁড়ি বের করার পর গরুর হৃৎপিণ্ডে সংযুক্ত আর্টারি বা ধমনির নালিতে সরাসরি পাইপ দিয়ে পানি ভরে দেন। সেই পানি পৌঁছে যায় গরুর শরীরের প্রতিটি ধমনিতে। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রাখেন। একইভাবে তাঁরা পানি প্রবেশ করান গরুর হৃৎপিণ্ডে সংযুক্ত ভেইন বা শিরায়, যার ফলে পানি দীর্ঘ সময় মাংসের ভেতরে থেকে যায়। ওজনভেদে একটি গরুর শরীরে বাড়তি এক থেকে দেড় মণ পানি নানা কৌশলে প্রবেশ করান তাঁরা। এরপর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি মাংস বিক্রি করেন। আর অবিক্রীত মাংস বরফভর্তি কর্কশিটের বক্সের ভেতরে রাখা হয়। এতে মাংস শক্ত হয় এবং ওজন বাড়ে। পরদিন সদ্য জবাই করা গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে ওই মাংস বাজারে বিক্রি করা হয়।  

সূত্রটি আরও জানায়, ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারণে ভোক্তার কাছে যে মাংস পৌঁছায়, এর ছয় ভাগের এক ভাগ থাকে পানি। অর্থাৎ প্রতি কেজি মাংসে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রামের বেশি পানি থাকে। যার মূল্য দাঁড়ায় ১০৫ টাকা আর ছাগলের মাংসের ক্ষেত্রে দাম আসে ১৫০ টাকা। অভিনব কৌশলে ভোক্তাকে ঠকিয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। 

শহরের আতিয়ার কলোনি এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাজার থেকে এক কেজি মাংস কিনি। বাসায় গিয়ে দেখি মাংস থেকে তাজা পানি বের হচ্ছে। এতে আমার মনে সন্দেহ হয়। পরে মেপে দেখি এক কেজি মাংসে প্রায় ১০০ গ্রাম কম।’ 

শহরের গেট বাজারের এক মাংস বিক্রেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু গরু নয়, এখন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ছাগলের মাংসেও একই কায়দায় পানি দিয়ে বিক্রি করে ওই ব্যবসায়ীরা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ওরা (অসাধু মাংস ব্যবসায়ী) ভোর হওয়ার আগেই গরু-ছাগল জবাই করে, মাংসে পানি ঢুকায়। যারা পাইকারি নেয়, তাঁরা ভোরে চলে আসে।’ 

এ বিষয়ে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নাদিম আশরাফি (ছোটু) বলেন, ‘আমাদের সমিতির আওতাভুক্ত কোনো মাংস ব্যবসায়ী এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। যদি কেউ জড়িত থাকে, সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোনাক্কা আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাংসে এভাবে পানি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি ওজন বাড়াতে মাংসে পানি দেওয়া হয় কিংবা পানিতে মাংস ভিজিয়ে রাখা হয়, তাহলে মাংসের কোষগুলোতে ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পানি জমে থাকে। মাংস ছোট ছোট টুকরা করলে পানি বের হয়ে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পানি দিয়ে মাংসের ওজন বাড়ানোর বিষয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সৈয়দপুর পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন করছি। এখানকার কসাইখানার দীর্ঘদিন ধরে পৌর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ শূন্য। সব সমস্যা সমাধান করে পৌর কসাইখানা পুরোদমে সচল করার চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক শামসুল আলমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের কাছে কেউ যদি তথ্য দেয়, আমরা অভিযান পরিচালনা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত