যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৪ লাখ টাকা ফেরত দিলেন চেইন মাস্টার

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৫৯
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ১৯

সৈয়দপুরে ইজিবাইক সোসাইটির চেইন মাস্টার মো. ছটু (৩০)। শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করেন তিনি। কষ্টেশিষ্টে সংসার চাললেও অসততা স্পর্শ করেনি তাঁকে। এক যাত্রীর ফেলে যাওয়া পৌনে ৪ লাখ টাকার ব্যাগ ফেরত দিলেন ছটু। 

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঘটেছে ঘটনাটি। ছটুর বাড়ি সদর উপজেলার কামারপুকুরে।

উদ্ধার হওয়া টাকার মালিক কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম চৌধুরী জানান, তিনি শহরের নিয়ামতপুর সরকারপাড়ার বাসিন্দা। তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার কৃষি অফিস অর্থাৎ কর্মস্থল থেকে বাসে করে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁর সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে নেওয়া ঋণ ও বেতন-বোনাসের প্রায় পৌনে ৪ লাখ টাকার একটি ব্যাগ ছিল। পরে বাস টার্মিনালে নেমে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চেপে নিয়ামতপুরের বাসায় যান। কিন্তু ভুল করে তাঁর সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগটি অটোরিকশায় রেখেই বাড়িতে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর তাঁর মনে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে অটোরিকশাটির সন্ধানে বের হন। কিন্তু সেই ব্যাগ পাননি। এদিকে ওই অটোরিকশার চালক খেয়াল না করেই অটোরিকশা নিয়ে শহরের দিকে চলে যান। পথে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মুন্সিপাড়া মোড়ে টাকার ব্যাগটি রাস্তায় পড়ে যায়। এ সময় চেইন মাস্টার মো. ছটুর নজরে পড়ে ব্যাগটি। পরে লোকজনের উপস্থিতিতে সেটি খুলে দেখতে পান ওই ব্যাগে টাকা রয়েছে। 

পরে তিনি সংগঠনটির তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার সভাপতি মঞ্জুর হোসেন সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরজু রহমানকে বিষয়টি জানান। এমন ঘটনায় তাঁরাও টাকার মালিকের সন্ধান করতে থাকেন। এরই মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী বিষয়টি থানায় অবগত করেন। 

পরে বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি সৈয়দপুর উপজেলা তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার নেতৃবৃন্দ টাকার মালিক কাইয়ুম চৌধুরীকে খুঁজে বের করেন। রাতে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে টাকার মালিককে ডেকে আনেন তাঁরা। এ সময় নীলফামারী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরীর মাধ্যমে ব্যাগে থাকা পৌনে ৪ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন ওই কৃষি কর্মকর্তাকে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরির বাবা, ইজিবাইক সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. আশরাফ কোরায়শী ছাড়াও বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সৈয়দপুর তামান্না মোড় হাজারীহাট শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 

কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সাংসারিক কাজে প্রয়োজন হওয়ায় প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নেওয়া ৩ লাখ ও বেতন বোনাসের প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ছিল ওই ব্যাগে। সবগুলো টাকাই অক্ষত রয়েছে।’ এ সময় খুশি হয়ে টাকার ব্যাগ পাওয়া ওই অটোবাইক শ্রমিক মো. ছটুকে পুরস্কৃত করেন তিনি। 

এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি মঞ্জুর হোসেন সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরজু রহমান জানান, কুড়িয়ে পাওয়া টাকার ব্যাগ প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দিতে পেরে তাঁরা খুবই আনন্দিত। এর জন্য তাঁরা তাঁদের সংগঠনের সদস্য ছটুকে তাঁর সততার জন্য ধন্যবাদ জানান। 

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের নীলফামারীর পরিদর্শক মো. আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘ইজিবাইক শ্রমিক ছটুর সততা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর জন্য তাঁকে আমরা ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁর এই সততা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত