ভেজাল কীটনাশকে পুড়ল চাষির কপাল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০৯
Thumbnail image

দুই-তিন সপ্তাহ পর খেত থেকে আলু ঘরে তোলার কথা। কিন্তু আলুখেতের গাছ চুপসে যাচ্ছে। ডগা শুকিয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। এসব জমিতে কিছু আলু ধরলেও বড় হয়নি। এবারের শীত মৌসুমে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে আলুর ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচতে অঙ্কুর কোম্পানির সিস্‌টিন কীটনাশক প্রয়োগের পরেই এ অবস্থা হয়েছে আলুগাছের। কৃষকের মতে, প্রায় ৫০ একর জমির আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে। 

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নে বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ও রমিছা দম্পতি। বর্গা নেওয়া এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন আলু। জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আলুকে ছত্রাকজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরামর্শে অঙ্কুর কোম্পানির সিস্‌টিন কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এর পর থেকেই মরে যাচ্ছে আলুগাছ। এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন এই দম্পতি। 

আলুখেত বসে আছেন হতাশ চাষি। ছবি: আজকের পত্রিকাসম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী রমিছা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘরের গরু ও ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলি আলু লাগাইছি দুইটা টাকা লাভের আশায়। শীতোত ক্ষ্যাত যাতে নষ্ট না হয়, ওই জন্য হামার ময়নার বাপ বাজার থাকি ঔষধ (কীটনাশক) কিনি আনি জমিত দিছে। সেই ঔষধ (কীটনাশক) দেওয়া পর থাকি আলুর গাছগুলা ক্যানবা পচি যায় চোল। ছওয়ার মতন যত্ন করি ক্ষ্যাত আবাদ করি আইজ এই অবস্থা। এখন তো আলুও হইবে না আর ধান লাগাবার পামো না। আগত যদি জানানো হয় যে ঔষধ (কীটনাশক) দিয়া এমন হইবে তাইলে কী আর ঔষধ দেই।’ 
 
রমিছা বেগমের মতো ইউনিয়নের আরও শতাধিক কৃষক একই পরিস্থিতে পড়েছেন। সিস্‌টিন নামের কীটনাশকটি ব্যবহার করার দুই-তিন দিন পর থেকেই আলুর গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়া শুরু করে। শেকড়ে পচন ধরে সব শেষ হয়ে গেছে। ধারদেনা করে আবাদ করা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা সবাই। এখন ওই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। 

কৃষকদের অনেকই স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা যদি মাঠে আসতেন, পরামর্শ দিতেন, তাহলে এই অবস্থা হতো না। 

এদিকে কীটনাশক কোম্পানির কয়েকজন ডিলার মালিকও জানান, অঙ্কুর কোম্পানির ছত্রাকনাশক সিস্‌টিন কীটনাশক ব্যবহারের পর এ রকম অভিযোগ আসছে সব জায়গা থেকে। 

নিজেদের আলু খেতে রমিছা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকাকীটনাশক ব্যবসায়ী ও কীটনাশকটির ডিলার জুয়ারুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শীতের সময় আলুখেতে ছত্রাকের আক্রমণ বাড়ে। তাই আমার কাছে যারা কীটনাশক নিতে আসে, তাদের অঙ্কুর কোম্পানির সিস্‌টিন নামক কীটনাশক দেই। তবে যাদেরই ওই কীটনাশক দিয়েছি, তাদেরই খেতে সমস্যা হয়েছে। আমি কোম্পানির প্রতিনিধিকে জানাইছি। তারা এসে ওই কীটনাশক নিয়ে গেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানা আছে। আমাদের কাছে কৃষকেরা আর অভিযোগ করেনি। আমরা গিয়ে কীটনাশকগুলোর স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত