গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় বিলীন ১০০ পরিবারের ঘর-বাড়ি, পনিবন্দী হাজারো মানুষ

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১: ০৪
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৮: ৩৪

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর ভারতের সিকিম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০ পরিবারের ঘর-বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ২৫০টিরও বেশি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, রান্নার চুলা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। পানিবন্দী পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক বিঘা জমির বাদামখেত ও আমন ধানের বীজতলা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির প্রবাহ সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি, আলফাজটারী, নরশিং, হরিণচরা কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চর ছিলাখাল, মধ্য ছিলাখাল, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলি, পশ্চিম ইচলি, চল্লিশসাল ও নোহালী ইউনিয়নের বাগডহরা, মিনার বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় বানভাসি ও বন্যায় ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর দুর্বিষহ জীবন। গবাদিপশু-পাখি সঙ্গে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা রাস্তার ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বিভিন্ন খোলা স্থানে। ভাঙন হুমকিতে থাকায় আগে-ভাগেই অনেক পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘর-বাড়ি নৌকায় করে সরিয়ে নিচ্ছে একটি পরিবার। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকাকথা হয় তিস্তার বন্যায় বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের (৭৫) সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঈদের আগ থাকি নদীত পানি আসছে। হামরা মনে করছি এবার মনে হয় এদিকে ভাঙন আসবার নেয়। তিস্তা কয় থাকিস তোর বাড়িটায়, আগত ভাঙি নিয়া যাং। চোখের ইশারায় সবকিছু ভাঙি নিয়া গেইল যে বাবা।’

বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় শিশু দুটিকে নিয়ে নিরাপদ ও উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন মা। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকাএ সময় তিস্তার বন্যায় বাড়ি-ঘর ভেঙে যাওয়া আজিজুল (৪০) নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সেই ছোট্ট থাকি শুনি আসবার নাগছি যে সরকার হামার নদীটা বান্দি দেবে। কয়েক দিনে আগে শুননো, এবার নাকি নদীর কাজ শুরু করবে। এ জন্য পাকা বাড়ি বানাইনো, সে পাকা বাড়িত আর থাকিবার পাইনো না। খালি ইটগুলো খুলি নিছি তা ছাড়া সউগগুলো ভাসে নিয়া গেইছে।’

কোলকোন্দ ইউনিয়নের দুলালী বেগম জানান, তিস্তা নদী থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে তাঁর বাড়িটি ছিল। গতকাল রাতে রান্নাঘরসহ তিনটি ঘর নিমেষেই তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তিনি এখন তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন।

বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় গবাদিপশুসহ চৌকির ওপর আশ্রয় নিয়েছে একটি পরিবার। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাজটারী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকামর্ণেয়া ইউনিয়নের বানভাসী মন্জুম আলী (৪৮) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আজ ১০ দিন থাকি পানিবন্দী হয়া আছি। কেনো চেয়ারম্যান, মেম্বার সরকারি লোক ভুলকি মারিবারও আইসে নাই। ছোট্ট বাচ্চা, গরু-ছাগল এগুলা নিয়া খুব কষ্টে দিন পার করছি।’

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের এখন পর্যন্ত ২০টি পরিবারের তালিকা আছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করছি। তবে ভাঙনের হুমকিতে থাকায় কোলকোন্দ, নোহালী, মর্ণেয়া, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ২৫০টির মতো পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।’

ভাঙনের আতঙ্কে ঘর-বাড়ি নৌকায় করে সরিয়ে নিচ্ছে একটি পরিবার। মর্ণেয়া ইউনিয়নের হরিণচরা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকারংপুর-১ গঙ্গাচড়া আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমার এলাকার তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি সংসদ অধিবেশনের কারণে ঢাকায় আছি। আশা করছি আগামী ১১ তারিখে আমি নিজেই গিয়ে আমার তিস্তাপারের ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখব। আমি এখান থেকে সব সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কোথাও ভাঙনের খবর পেলে আমি সেখানে তাদের দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলতে বলতেছি এবং তারাও সেখানে দ্রুত ভাঙন রক্ষায় কাজ করছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত