Ajker Patrika

ভোট তো পুলিশ আর অফিসাররা দিয়েছে: বিশ্বনাথের মেয়র মুহিবুর রহমান

লবীব আহমদ, সিলেট
ভোট তো পুলিশ আর অফিসাররা দিয়েছে: বিশ্বনাথের মেয়র মুহিবুর রহমান

‘ভোট কি হয়েছে? ভোট তো হয় নাই। ভোট তো পুলিশ আর অফিসাররা দিয়েছে। আমার জনগণ যখন ভোট দিবে, জনগণ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, তখন আমাকে হারানোর কোনো সুযোগ নাই। এই পপুলারিটি আমার আছে। কিন্তু এখন পুলিশ আর অফিসার গিয়ে যদি ভোট দিয়ে দেয়, সেখানে কার কি করার আছে।’ 

এমন কথা বলেছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। তিনি এবার সিলেট–২ (ওসমানীনগর–বিশ্বনাথ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরের জেলরোডস্থ গ্র‍্যান্ড ভিউ হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। 

মুহিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। আপিলেও বাতিল বহাল থাকলে তিনি হাইকোর্টে যান। উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি আগামী ২৭ ডিসেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে মুহিবুর রহমান বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা পদে থেকে সংসদ নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। এরপর কিন্তু নতুন করে কোনো আইন পাস হয়নি। তাই স্বপদে বহাল থেকে বাংলাদেশের অন্যরা যদি নির্বাচন করতে পারে, তাহলে আমারতো না করার কোনো কারণ নেই।’ 

তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মনোনয়নপত্র শতভাগ নির্ভুল ও বৈধ থাকার পরও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আপিল করলে ১০ ডিসেম্বর শুনানি হয়। অন্য সব আপিলের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিলেও তিনিসহ কয়েকজনের রায় দিতে পাঁচ দিন বিলম্ব করা হয়। রায়ে মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে রায় দেওয়া হলে হাইকোর্টে যান ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর শুনানি হয়। কিন্তু হাইকোর্ট আংশিক শুনানি করে দুই দিন পর পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন। ওই শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল অংশ নেন। দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্ট আগামী ২৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। 

সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষোভ ঝাড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানমুহিবুর বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী সবাই যেখানে প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন, আমি সেখানে দীর্ঘসূত্রতায় ব্যস্ত রয়েছি। জানি না এর অবসান কখন ঘটবে। তবে আমি নৈরাশ্যবাদী নই, আশাবাদী। প্রতীক ছাড়াই আমার নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রেখেছি। আমি বিশ্বাস করি, বিজয়ীও হব ইনশা আল্লাহ।’ 

পূর্ববর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে মুহিবুর রহমান বলেন, ‘আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে চৌদ্দতে কীভাবে নির্বাচন হয়েছিল। যদিও আমি সরকারের সমর্থক। সরকারের সমর্থক হলেও কী হবে, আমি অন্ধ সমর্থক নই। আমি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। সেখানেও সিভিল সার্ভিসে চাকরি করেছি, আমি অফিসার ছিলাম। প্রকৃত রাজনীতি, প্রকৃত গণতন্ত্র আমার দেশে প্রতিষ্ঠিত হোক—এটা আমি চাই। এই মিথ্যা আর রোষানল থেকে আমরা উত্তরণ চাই। এই যে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে গেলেন, বিনাভোটে যদি এমপি নির্বাচিত হওয়ার হতো, তাহলে ১৯৮৬–তে আমি এমপি হতে পারতাম, ৮৭–তে এমপি হতে পারতাম, ৯০–এ এমপি হতে পারতাম। চার–পাঁচবার এমপি হতে পারতাম। বিনা ভোটের এমপি আমি হতে চাই নাই। সে জন্য আমার নমিনেশন অন্যদের দিয়ে দিয়েছি। লামা সাব (মকসুদ ইবনে আজিজ লামা) হয়েছেন আমার নমিনেশনে। কেরানি সাব হয়েছেন আমার নমিনেশনে। আর কী বলব আপনাদের!’ 

বিশ্বনাথের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রথম পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ‘তিনবার আমি নির্বাচিত হয়েছি স্বতন্ত্র। আমি কোনো তন্ত্র–মন্ত্রে নির্বাচিত হই নাই। আমি স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছি। আর তিনবারই আমার চেহারা দেখিয়ে হয়েছি। আর এই দুইবারের কথা আমি বলেছি যে,১৪–এর কথা বলেছি আর ১৮–এর কথা বলেছি। এটা এই দেশের বা বহির্বিশ্বের কারও অজানা কিছু নয়। এটা সকলেরই জানা।’ 

 ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মুহিবুর বলেন, ‘চৌদ্দ সালের নির্বাচনে যে নির্বাচিত হলো, সে আমাকে ফোন করেই বলল, এই ইয়াহ্ইয়া আমাকে ফোন করেই বলল, চাচা ভোট তো সব আপনার। পাস করব আমি। এটা আমি এর আগেও সাংবাদিকদের বলেছি দু–একবার। সে তো তখন পাস করল। সুরঞ্জিত দা (সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত) আমাকে ফোন করে বললেন, মুহিব চলে আসো তুমি সংসদে। সেখানে দেখা হবে। তখন আমি যদি নিশ্চিত না হতাম, সুরঞ্জিত দা–ও যদি নিশ্চিত না হতেন, তাহলে সে কথা বলতেন না। এরপর ইলেকশন যেদিন হলো, সেদিন দেখলাম ইয়াহ্ইয়া আমাকে ফোন করে যেটি বলেছিল সেটাই হলো।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি এত পেছনে যেতে চাই না। চৌদ্দ থেকেই আমরা বলছি, চৌদ্দ থেকেই আমরা ইতিহাস টানছি। আমি যা বলছি তা যদি আপনারা মনে করেন আমি সঠিক বলছি, সত্য বলছি তাহলে আপনারা আমার সাথে থাকবেন। আমাকে সাহস জোগাবেন। আমার পক্ষে আপনারা লেখনী দিয়ে সহযোগিতা করবেন। ইনশা আল্লাহ আমি এ দেশে সংগ্রাম চালিয়ে যাব। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মিথ্যাভিত্তিক কেউ যাতে কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করে এমপি, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান যেন বানানো না হয়।’ 

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২ নভেম্বর বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে ৫ হাজার ২১১ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন মুহিবুর রহমান। ১৯৮৫ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 

 ১৯৭৮ সালে বিশ্বনাথ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক এবং ১৯৮০ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন মুহিব। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে সিলেট–২ আসনে মুহিব তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামার কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে লাঙল প্রতীক নিয়ে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর (নিখোঁজ) কাছে পরাজিত হন মুহিবুর। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন মুহিব। ২০০৮ সালেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত