ছেলের ১০ মাসের বড় মা, এনআইডির ভুলে বৃদ্ধার ভাতা বাতিল 

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৩১
Thumbnail image

খুদেজা বিবির বয়স সত্তরের বেশি কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল তথ্যে তিনি হয়েছেন তাঁর ছেলের বয়সী। জন্মনিবন্ধনে তাঁর জন্ম সাল ১৯৫৩ লেখা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল করে ১৯৭৪ লেখা হয়। আর এই ভুলের মাশুল হিসেবে জীবনের শেষ সময়ে এসে বয়স্কভাতার কার্ডটি বাতিল হয়েছে তাঁর। 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ঐয়ারকোনা গ্রামে ঘটেছে এমন ঘটনা। 

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঐয়ারকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী মোছা. খুদেজা বিবি বয়স্কভাতার কার্ডটি বরাদ্দ পান। প্রায় ১২ বছর ভাতার অর্থ উত্তোলনও করেছেন তিনি। কিন্তু গত বছর অনলাইন ডেটাবেইসে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর বয়স কম উল্লেখ করা হয়। আর এ কারণে বাতিল হয়ে যায় তাঁর ভাতার কার্ডটিও। ফলে বিগত ৬ মাস ধরে বিধবা ওই নারী বয়স্কভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। 

সেই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃদ্ধা খুদেজা বিবির জন্মতারিখ দেওয়া হয়েছে ১০ নভেম্বর ১৯৭৪। আর তাঁর একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫। সে অনুযায়ী ছেলে মো. আব্দুল মুহিত তাঁর মায়ের চেয়ে মাত্র ১০ মাসের ছোট। 

এদিকে বয়সের এমন পার্থক্য সংশোধন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবারটিকে। নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার বেড়াজালে পড়েছে তারা। যার ফলে বয়স কম-বেশির কারণে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। 

ভুক্তভোগী বৃদ্ধা খুদেজা বিবি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমার বিয়ে হয়। যুদ্ধের সবকিছু এখনো মনে পড়ে। এতদিন ভাতা পাইলাম। এখন মরার সময় ওষুধের টাকাই পাই না।’ 

ওই বৃদ্ধার প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুল মুহিত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বয়সই ৫০ হয়ে যাচ্ছে। মার বয়স ৭০-এর ওপরে হলেও কার্ডে ভুল করে ৪৯ করে দিছে। একই দিনে মা-ছেলে ভোটের ছবি তুলেছিলাম। মা-ছেলের বয়স কি সমান হয়? এটা কোনো কথা হলো। এ ভুলের জন্য মায়ের ভাতার কার্ডটাও বাতিল হইছে। এখন খুব কষ্টের মাঝে আছি।’ 

মুহিত আরও বলেন, ‘গত ৬ মাস থেকে সংশোধনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি। বর্তমানে আবেদনটি সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আছে। এই কাগজ, ওই কাগজ, কত কাগজ দিলাম। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রটি ঠিক হলো না।’ 

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুদ্দীন বলেন, ‘এটি ২০০৮ সালের ডাটা এন্ট্রিতে এমনটা হতে পারে। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সব কাগজপত্র নিয়ে গেলে সংশোধন হয়ে যাবে।’ 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে নির্ধারিত বয়সের কম হওয়ায় কারণে অনলাইনে ডাটা করা যায়নি। ফলে তাঁর বয়স্কভাতার কার্ডটি বাতিল হয়েছে। তবে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হলে পুনরায় তাঁর ভাতার কার্ড ইস্যু করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত