শিক্ষক ছাড়া চলছে সিলেট এমসি কলেজের ইতিহাস বিভাগ

সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১: ৩০

স্নাতক ১ম বর্ষের আবশ্যিক বিষয় ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’। বিষয়টি সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের প্রায় ২ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় ইতিহাস বিভাগে এসে। অথচ গত ৬ মাস ধরে একজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে ইতিহাস বিভাগটি। বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো সুরাহা না পেয়ে এবার আন্দোলনে নামছে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, এমসি কলেজের ১৫টি বিভাগে প্রতি বছর স্নাতক প্রথম বর্ষে দুই সহস্রাধিকেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। আর ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও মাস্টার্সে ১০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ হতে এমসি কলেজের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক আর ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষ হতে (নিয়মিত) মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে স্নাতক, ডিগ্রি (পাস), মাস্টার্স ১ম পর্ব (নিয়মিত, প্রাইভেট), মাস্টার্স শেষ পর্ব (নিয়মিত/প্রাইভেট) কোর্স চালু রয়েছে। 

আরও জানা যায়, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাফিয়া আক্তার চৌধুরী ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেট সরকারি কলেজে বদলি হয়ে গেলে সহকারী অধ্যাপকের সৃষ্ট দুই পদের একটি শূন্য হয়। শূন্য পদটি পূরণ করতে পরের মাস অক্টোবরে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স সম্পন্ন করা শাওন সরকার দীপ্তকে। পরে গেল বছরের ২৭ জুলাই উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পেয়ে হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে চলে যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শওকত হোসেন। 

ফলে শূন্য হয়ে যায় সহযোগী অধ্যাপকের একমাত্র পদটি। পরে ওই মাসের ৩০ জুলাই বদলি হয়ে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুহেল আহমদ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে চলে গেলে সহকারী অধ্যাপকের পদও শূন্য হয়। সবশেষ ৩১ জুলাই ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নূরে ফারহানা বেগম অবসরোত্তর ছুটিতে গেলে পুরো বিভাগই শিক্ষক শূন্য হয়ে যায়। 

ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘চরম হতাশা এবং অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, গত ৩১ জুলাই থেকে আমাদের ইতিহাস বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। আমাদের বিভাগীয় স্বাভাবিক কিছু কার্যক্রম কোনো রকম চালু থাকলেও পাঠদানসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অধ্যক্ষ স্যার বোর্ডে বারবার আবেদন করলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে রাস্তায় দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোনো উপায় নেই। সে জন্য আমরা রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছি।’ 

ইতিহাস বিভাগের অতিথি শিক্ষক শাওন সরকার দীপ্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একা বিভাগের স্নাতক, মাস্টার্স ও ডিগ্রির সবগুলো ক্লাস নেওয়া কতটুকু সম্ভব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে আবশ্যিক বিষয়ে ক্লাসও নিতে হয়। আপাতত সর্বোচ্চটা দিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে চেষ্টা করছি শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে।’ 

এদিকে গত দুই বছর থেকে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই পাঠদান চলছে কলেজটির পরিসংখ্যান বিভাগে। যার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছেন না ওই বিভাগের পাঁচ শতাধিকেরও বেশি শিক্ষার্থী। বিভাগটিতে স্নাতক ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষকের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে ডিপার্টমেন্টে সহযোগী অধ্যাপক বাদে অন্য কোনো পদে কোনো শিক্ষক নেই। এতে করে বিপাকে আছেন কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা। 

পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মহসিন আলী বলেন, ‘স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া এবং বিভাগকে দেখভাল করতে হয় আমাকে। কোনোভাবেই একজন শিক্ষক দিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে চালানো সম্ভব না।’ 

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বোর্ডে বারবার জানিয়েছি, ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বিভাগ সম্পর্কে। ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চলে যাওয়ার আগে জানিয়ে ছিলাম শিক্ষক সংকটের কথা। কিন্তু, এই সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। সবশেষ গত সপ্তাহে আমি মন্ত্রণালয়ে ফোন করে বিষয়টা জানিয়েছি। কোনো শিক্ষক ছাড়া একজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব না একটি বিভাগের কার্যক্রম চালানো।’ 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (কলেজ অনুবিভাগ) সৈয়দা নওয়ারা জাহান বলেন, ‘ইতিহাস বিভাগের ব্যাপারে আগে জানা ছিল না। রিসেন্টলি ইনারা যোগাযোগ করেছেন। ইলেকশন শেষ হয়েছে। এখন পোস্টিং দেওয়া হবে। পরিসংখ্যানে আসলে পদ ও শিক্ষক কম। ৪১ তম বিসিএসের পুলিশ ভ্যারিফিকেশন প্রসেস চলছে। ওই খান থেকে দেওয়া হবে। এটা বড় কলেজ ঠিক। তবে ছোট কলেজগুলোতেও শিক্ষক নাই। যার কারণে ব্যালেন্স করে সব চলতে হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত