জৈন্তাপুরে দুই টিসিবি ডিলারের অস্তিত্ব নেই

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ২৩: ০২

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার মেসার্স রাম ও মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি টিসিবি ডিলারের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। টিসিবি আঞ্চলিক কেন্দ্র মৌলভীবাজারের শেরপুর হতে দুটি প্রতিষ্ঠান পণ্য উত্তোলন করে জৈন্তাপুরে বিতরণ না করার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে টিসিবি ডিলারের নির্ধারিত ঠিকানা জৈন্তাপুর বাজারের ফতেহখাঁ রোড এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এমনকি পুরো জৈন্তাপুর বাজার খুঁজে এই প্রতিষ্ঠান দুটির হদিস পাওয়া যায়নি। জৈন্তাপুর স্টেশন বাজার ও জৈন্তাপুর পূর্ববাজার ব্যবসায়ী সমিতিও প্রতিষ্ঠান দুটির কোন তথ্য দিতে পারেনি। সমিতি দুটির দায়িত্বশীলরা জানান মেসার্স রাম ও মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান উপজেলার কোন বাজারে নেই। এগুলো মৌসুমি ও সরকারি পণ্য জালিয়াত চক্রের সৃষ্ট ভুয়া প্রতিষ্ঠান।

অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জৈন্তাপুর বাজারের টিসিবি এর লাইসেন্সধারী মেসার্স রাম ও মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠান দুটির অস্তিত্ব উপজেলার কোথাও খুঁজে পায়নি। টিসিবির লাইসেন্স যাচাই করে দেখা যায়, জালিয়াত চক্রের সদস্য সিলেট জেলার দাড়িয়া পাড়ার বাসিন্দা গিরিন্দ্র পুরকায়স্থ ছেলে হরেন্দ্র পুরকায়স্থ। তিনি ১ অক্টোবর ২০২০ সালে নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ফতেহখাঁ রোডে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মর্মে মেসার্স রাম এন্টারপ্রাইজ (২৪৭ / ২০২০-২০২১) এবং দাড়িয়া পাড়ার অপর বাসিন্দা রঞ্জন দাসের ছেলে ঝলক দাস মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ (২৪৫ / ২০২০-২০২১) দুটি ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে। মূলত জৈন্তাপুরে এই নামে কোন দোকান নেই এবং ছিল না বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে নিজপাট ইউপি এর ফতেহখাঁ রোডে কাগজপত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে টিসিবি এর ডিলারশিপের আবেদন করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায় টিসিবির এর লাইসেন্স প্রাপ্তিতে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসের তিনজন কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ইতিমধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রাপ্তিতে একজনের টাকা গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন হতে নীরবে অপকর্ম করে যাচ্ছে। টিসিবির লাইসেন্স বরাদ্দে তাঁদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান দুটির টিসিবি এর লাইসেন্স হয়। লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে কয়েক দফা টিসিবি আঞ্চলিক কেন্দ্র মৌলভীবাজারের শেরপুর হতে পণ্য উত্তোলন করে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২৬টি বিক্রয় পয়েন্টের মধ্যে তারা টিসিবি এর পণ্য বিক্রয় করেনি।

টিসিবি এর লাইসেন্সধারী মেসার্স ফয়েজ ভেরাইটিজ সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মোক্তার আহমদ বলেন, `টিসিবি এর লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনের পর উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা সরেজমিনে প্রতিষ্ঠান ও গোদাম যাচাই-বাছাই করে। আবেদনটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসক হতে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক ভাবে প্রতিষ্ঠান যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দিলে আমাকে টিসিবি এর লাইসেন্স প্রদান করা হয়। টিসিবির লাইসেন্সটি পেতে দুই বছর লেগেছে। লাইসেন্স প্রাপ্তির পর আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ উপজেলার ২৬টি পয়েন্টে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শিডিউল মোতাবেক টিসিবি এর পণ্য বিক্রয় করে আসছি। টিসিবির আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে জানতে পারি জৈন্তাপুরে আরও দুটি প্রতিষ্ঠার টিসিবির লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে পণ্য উত্তোলন করেছে। তাঁরা কোথায় পণ্য বিক্রয় করেছে তা আমার জানা নেই।'

নিজপাট ইউপি এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইয়াহিয়া বলেন, `নিজপাট ইউপির জৈন্তাপুর বাজারে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী রয়েছে। তাঁরা আমার ইউপির ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পাথর, কয়লা, বালু সহ বাজারে বিভিন্ন রকমের ব্যবসা বাণিজ্য করছে। টিসিবি এর ডিলার প্রাপ্তির জন্য লাইসেন্স নিয়েছে তা আমার জানা নেই।'

তিনি আরও বলেন, `উপজেলা পরিষদের প্রতিটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকি। আমার ইউপিতে দুটি টিসিবি এর লাইসেন্স প্রদান করা হবে চেয়ারম্যান হিসেবে অবশ্যই আমার জানান কথা। উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে টিসিবি এর লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে আমার জানা নেই। বর্তমানে প্রতিষ্ঠার দুটির বিপরীতে বরাদ্দকৃত লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ। নতুন করে লাইসেন্স নবায়ন করতে না পরে সে জন্য ইউপি সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

জৈন্তাপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, ফতেহখা রোডটি তাঁদের সমিতির আওতাভুক্ত। সমিতির আওতাভুক্ত এলাকায় মেসার্স রাম ও মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই এবং অতিতেও ছিল না। এমনকি ফতেখা রোডে স্বাধীনতার পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন মোদি দোকান কিংবা ডিলারশিপ ব্যবসা নেই।

তারা আরও জানান, তাঁদের জানামতে জৈন্তাপুর উপজেলায় “রাম ও কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ” নামে প্রতিষ্ঠান গুলির কোন অস্থিত নেই এগুলো জালিয়াত চক্রের সৃষ্ট ভুয়া প্রতিষ্ঠান। অবিলম্বে প্রতিষ্ঠান দুটির নামে ইস্যুকৃত টিসিবি এর লাইসেন্সে বাতিল সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।

মেসার্স রাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হরেন্দ্র পুরকায়স্থ লাইসেন্সে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে ১৫ দিন যাবৎ ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে কথা না বলে কয়েক সেকেন্ড পর কল কেটে দেন।

মেসার্স কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঝলক দাসের লাইসেন্সের উল্লেখিত নম্বরে ফোন করলে তিনি বলেন, `এটি কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজের নম্বর নয়। আমি কৃষ্ণ এন্টারপ্রাইজকে চিনি না। ফোন দিয়ে আমাকে অযথা বিরক্ত না করবেন না।'

টিসিবি আঞ্চলিক কেন্দ্র মৌলভীবাজারের শেরপুর উপপরিচালক মো. ইসমাঈল মজুমদার বলেন, `বিধি মোতাবেক পত্র প্রাপ্তির পর আমরা প্রতিষ্ঠান দুটিকে টিসিবি’এর পণ্য দিয়েছি।'

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত আজমেরী হক বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত