Ajker Patrika

‘ঢলের ফানি আমার সর্বনাশ কইরা গেছে’

জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
‘ঢলের ফানি আমার সর্বনাশ কইরা গেছে’

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বৌলাই নদীর পাড়ের আহসানপুর গ্রামের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে দুই হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে যেতে বসেছে। যত সময় যাচ্ছে ততই হাওরের পানি প্রবল বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। 

যদিও প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে কিন্তু কৃষকেরা তা মানতে নারাজ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আহসানপুর গ্রামের মাঠে প্রায় ৩০ হাজার মণ ধান শুকানো আর মাড়াইয়ের জন্য রাখা হয়েছিল। গত রোববার রাতে হঠাৎ করেই ধসে পড়ল বাঁধটি। বাঁধটি ধসে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই ডুবিয়ে গেল জমানো ধান। 

এ বিষয়ে আহসানপুর গ্রামের সবচেয়ে বড় কৃষক আব্দুস শহিদ জানান, ধান কাটার পর মাড়াই করে ধান শুকানোর জন্য স্তূপ করে রেখেছিল ৩৩০ মণ ধান। গত রবিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় শুকয়েই গিয়েছিল। দুদিন পরে ঘরে তুলার কথা ছিলো। কিন্তু বাঁধ ভেঙে নিমেষেই সব শুকনো ধান ভেসে গেল। 

কৃষক আব্দুস শহিদ চিৎকার করতে করতে বলেন, ‘দিন ভালা আছিলো। সবধান এক লগে কাটাইয়া খলাত আনছিলাম। ধান মাড়াই কইরা শুকানিও শেষ ওইয়া গেছিলো। এরিমধ্যে ঘরো তুলার কথা আছিলো। ঢলের ফানি আমার সর্বনাশ কইরা গেছে। এখন আমার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।’ 

উপজেলার হালির হাওর পাড়ের আহসানপুর গ্রামের ৫৯ বছর বয়সী সায়েরা খাতুন বলেন, ‘হাসিনা টেখা ছাড়লো আর বড়লোকের পেট ভরলো! নৌকাত ভোট দিছি হারাজীবন আর ফসল ভাসি যায় আমরা কিচ্ছু ফাই না।’

একই গ্রামের হাসিয়া আক্তার বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘জমিত থাইকা ভাইসা গেলেও কষ্ট আছিলো না। ধান শুকানোর পরে যে নিলো এই কষ্ট কেমনে ভুলতাম। যখন শুনছি পানি ডুকতাছে তখন আমার একটা মাত্র মেয়েরে নিয়া ৭০ মন ধানের মধ্যে যতটা পারি তুলার চেষ্টা করিছি।’

হালির হাওর পাড়ের মদনাখান্দি গ্রামের কৃষক সুধির তালুকদার বলেন, ‘আহসানপুর গ্রামের বাঁধ ভাঙছে। আমার গ্রামের একটা মানুষরেও খবর কইলো না। যদি খবরটা আমরা পাইতাম লগে লগে ধান কাটার ব্যবস্থা করতা পারতাম। যখন খবর পাইছি তখন আর কিচ্ছু বাকি নাই। বাইর ওইয়া দেখি পানি আর পানি। আমরা বুড়া বুড়ি যাই পারি রাত্রেই কাইটা আনছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধটি ধসে পড়েছে। বাঁধটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই বাঁধটি সময়মতো সংস্কার করতে পারলে অন্য হাওরে ক্ষতির ঝুঁকি কমবে। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দে জানান, হাওরের ৫ হাজার ২২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪ হাজার ৭২০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত