ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) টানা দুবারের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আসছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও মেয়রের চেয়ারে বসলে দুটিই হবে তাঁর হ্যাটট্রিক। সিসিক নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ২৩ মে, প্রত্যাহার ১ জুন ও ভোটগ্রহণ ২১ জুন। সময় মাত্র আড়াই মাস। তফসিল ঘোষণার পরপরই চাঙা হয়ে উঠেছে নগরে ভোটের রাজনীতি। চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই শুরু হয়েছে আলোচনা। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর হ্যাটট্রিক নাকি নতুন মুখ বসছেন নগর পিতার আসনে। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
অবশ্য, দু-তিন মাস আগেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। তবে জাতীয় পার্টির দুজন ছাড়া মেয়রপদে প্রচার চালানো সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার মধ্যে নীরব বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপিতে ভর করছে এই নীরবতা। আরিফুল হক চৌধুরীর ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। এই অবস্থায় সরব আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রচারণাও একতরফা দেখা দিয়েছে। সিসিকের সর্বশেষ দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। পুরো সময়টাই নগরবাসীর ‘খোঁড়াখুঁড়িজনিত’ ভোগান্তি হলেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে দাবি সমর্থকদের। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দলীয় দোলাচলে রয়েছে নানা আলোচনা। সিটি নির্বাচনে আরিফুল প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন আরিফুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
এদিকে গত রোববার মেয়র আরিফুল যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে মেয়রের হঠাৎ লন্ডন যাওয়া নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়রের এই সফর একান্ত ব্যক্তিগত। মেয়েকে দেখতে এবং মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে মেয়র এক সপ্তাহের মতো লন্ডনে অবস্থান করবেন।’
আরিফ-ঘনিষ্ঠ দলীয় সূত্র জানায়, সিসিক মেয়র বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে লন্ডন গেছেন। নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলীয় হাইকমান্ডের সিগন্যাল পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর এই সফর। তারেক রহমানকে বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। ১০ বছরে তাঁর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলের সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করবেন।
তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আরিফের জন্য আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের দাবি, ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। জেলে থাকাকালীন বড় বড় অফার পেয়েছিলেন; দলের সঙ্গে বেইমানি করে সেগুলো গ্রহণ করেননি। মেয়র হওয়ার জন্যও দলের বাইরে যাবেন না। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-এই কথায় দল অনড়। সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাই লন্ডন থেকে সুখবর না আসার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি।’
আরিফ-ঘনিষ্ঠ নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাও আরিফুলকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছি। লন্ডন থেকে ফেরার পর সিদ্ধান্ত কী হবে জানি না। যতটুকু বুঝেছি, তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত। দলের কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। ”
তবে আরিফুলের পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও ভেতরে-ভেতরে নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আরিফ। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।
বিএনপির নেতাকর্মীর দাবি, সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রয়াত মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফের জয় অনেকটাই সহজ হবে।
সবকিছুই যথাসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাচ্ছেন আরিফ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়নপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফ অংশ নিতে নাও পারেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। এবারও করবেন না, তাই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বলে দাবি, আরিফ বলয়ের দলীয় নেতাদের। আরিফুল বলেন, ‘দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তা ছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’
এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আরিফই মনোনয়ন পাবেন, তাও নিশ্চিত নয়। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুলের বিকল্প নেতা বিএনপিতে খুব একটা নেই বলেও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। আরিফুলের বিকল্প না থাকলেও দলে তাঁর বিরোধী শক্তির অবস্থান অত্যন্ত পাকাপোক্ত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে আরিফুলের ‘নীরব যুদ্ধ’ চলছে বলে রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলেও আরিফুল যেন মনোনয়ন না পান, এ নিয়ে বিপক্ষ বলয়ের নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তৎপর থাকবেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। অবশ্যই তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলবেন। আমরা বিশ্বাস করি আরিফুল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। দল নির্বাচনে গেলে আমিসহ অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী। সর্বশেষ দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা দলের প্রতীককে বিজয়ী করতে মাঠে নামব।’
আরিফুলের ঘনিষ্ঠ লোকজন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা ও তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্বাচন শেষে দলে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনেরও সব প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহেই বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন মেয়র।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন, এমনটা আমরা চিন্তাও করি না। আর দল সিদ্ধান্ত নিলে আরিফুল শুধু হ্যাটট্রিক নয়, সিলেটকে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।’
নির্ভার আওয়ামী লীগে প্রার্থীজট
বিএনপি নীরব থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে। দলটির যে কয়জন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের পোস্টার-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরে। এ ছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল অংশ নাও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। তাঁদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন।
আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি বা আরিফুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা নগরবাসীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিই। ভোটে নগরবাসী তাঁদের সেবক নির্বাচন করবেন। আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’
‘আরিফুলের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই’ এমন বিষয় মানতে নারাজ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আরিফুল স্বশিক্ষিত। ম্যাট্রিকও পাস করেননি। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদসহ অনেক গ্র্যাজুয়েট ও সুযোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) টানা দুবারের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। আসছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও মেয়রের চেয়ারে বসলে দুটিই হবে তাঁর হ্যাটট্রিক। সিসিক নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ২৩ মে, প্রত্যাহার ১ জুন ও ভোটগ্রহণ ২১ জুন। সময় মাত্র আড়াই মাস। তফসিল ঘোষণার পরপরই চাঙা হয়ে উঠেছে নগরে ভোটের রাজনীতি। চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই শুরু হয়েছে আলোচনা। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর হ্যাটট্রিক নাকি নতুন মুখ বসছেন নগর পিতার আসনে। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
অবশ্য, দু-তিন মাস আগেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। তবে জাতীয় পার্টির দুজন ছাড়া মেয়রপদে প্রচার চালানো সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার মধ্যে নীরব বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপিতে ভর করছে এই নীরবতা। আরিফুল হক চৌধুরীর ‘হ্যাটট্রিক মিশনে’ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। এই অবস্থায় সরব আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রচারণাও একতরফা দেখা দিয়েছে। সিসিকের সর্বশেষ দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। পুরো সময়টাই নগরবাসীর ‘খোঁড়াখুঁড়িজনিত’ ভোগান্তি হলেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে দাবি সমর্থকদের। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দলীয় দোলাচলে রয়েছে নানা আলোচনা। সিটি নির্বাচনে আরিফুল প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন আরিফুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
এদিকে গত রোববার মেয়র আরিফুল যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে মেয়রের হঠাৎ লন্ডন যাওয়া নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়রের এই সফর একান্ত ব্যক্তিগত। মেয়েকে দেখতে এবং মেয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে মেয়র এক সপ্তাহের মতো লন্ডনে অবস্থান করবেন।’
আরিফ-ঘনিষ্ঠ দলীয় সূত্র জানায়, সিসিক মেয়র বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে লন্ডন গেছেন। নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলীয় হাইকমান্ডের সিগন্যাল পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর এই সফর। তারেক রহমানকে বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করবেন। ১০ বছরে তাঁর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলের সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করবেন।
তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আরিফের জন্য আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের দাবি, ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। জেলে থাকাকালীন বড় বড় অফার পেয়েছিলেন; দলের সঙ্গে বেইমানি করে সেগুলো গ্রহণ করেননি। মেয়র হওয়ার জন্যও দলের বাইরে যাবেন না। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-এই কথায় দল অনড়। সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাই লন্ডন থেকে সুখবর না আসার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি।’
আরিফ-ঘনিষ্ঠ নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাও আরিফুলকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছি। লন্ডন থেকে ফেরার পর সিদ্ধান্ত কী হবে জানি না। যতটুকু বুঝেছি, তিনিও আমাদের সঙ্গে একমত। দলের কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। ”
তবে আরিফুলের পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও ভেতরে-ভেতরে নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আরিফ। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।
বিএনপির নেতাকর্মীর দাবি, সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রয়াত মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফের জয় অনেকটাই সহজ হবে।
সবকিছুই যথাসময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাচ্ছেন আরিফ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়নপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফ অংশ নিতে নাও পারেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। এবারও করবেন না, তাই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বলে দাবি, আরিফ বলয়ের দলীয় নেতাদের। আরিফুল বলেন, ‘দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তা ছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’
এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আরিফই মনোনয়ন পাবেন, তাও নিশ্চিত নয়। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুলের বিকল্প নেতা বিএনপিতে খুব একটা নেই বলেও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। আরিফুলের বিকল্প না থাকলেও দলে তাঁর বিরোধী শক্তির অবস্থান অত্যন্ত পাকাপোক্ত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে আরিফুলের ‘নীরব যুদ্ধ’ চলছে বলে রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলেও আরিফুল যেন মনোনয়ন না পান, এ নিয়ে বিপক্ষ বলয়ের নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তৎপর থাকবেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। অবশ্যই তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলবেন। আমরা বিশ্বাস করি আরিফুল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। দল নির্বাচনে গেলে আমিসহ অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী। সর্বশেষ দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা দলের প্রতীককে বিজয়ী করতে মাঠে নামব।’
আরিফুলের ঘনিষ্ঠ লোকজন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা ও তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্বাচন শেষে দলে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনেরও সব প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহেই বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন মেয়র।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন, এমনটা আমরা চিন্তাও করি না। আর দল সিদ্ধান্ত নিলে আরিফুল শুধু হ্যাটট্রিক নয়, সিলেটকে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।’
নির্ভার আওয়ামী লীগে প্রার্থীজট
বিএনপি নীরব থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে। দলটির যে কয়জন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের পোস্টার-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরে। এ ছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল অংশ নাও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু। তাঁদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন।
আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি বা আরিফুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা নগরবাসীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিই। ভোটে নগরবাসী তাঁদের সেবক নির্বাচন করবেন। আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’
‘আরিফুলের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তিশালী প্রার্থী নেই’ এমন বিষয় মানতে নারাজ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আরিফুল স্বশিক্ষিত। ম্যাট্রিকও পাস করেননি। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদসহ অনেক গ্র্যাজুয়েট ও সুযোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করলে আমাদের সমর্থন পাবেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এক সেকেন্ডও সময় নেব না আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। দায়সারা কথা বলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রহসন করবেন না।
৩৬ মিনিট আগেলক্ষ্মীপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মাহফিলে জামায়াত নেতাকে প্রধান অতিথি করায় বিএনপি সেটি বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২ ঘণ্টা আগেবগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু ছালেককে হত্যায় মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ বন্দর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২ ঘণ্টা আগেবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ছাত্ররা কথা বলছেন, তবে এটি একটি কমিটির মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য সাংবিধানিক বা সংসদের প্রতিনিধি প্রয়োজন। পাশাপাশি, সবার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন।
২ ঘণ্টা আগে