মুহাম্মদ আবদুল বাছেদ
মানবজাতি অন্য সব প্রাণিকুলের থেকে আলাদা শুধু তার ভাষার কারণেই। মানুষ তাদের ভাষার লিখিত রূপও উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু অন্য কোনো প্রাণী সেটি পারেনি। সীমিত শব্দভাণ্ডার দিয়ে অসীম সংখ্যক জটিল বাক্য গঠনের দক্ষতা আছে মানুষের। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ সুখ, দুঃখ ও চিন্তা-চেতনা প্রকাশ করে। ফলে তার যোগাযোগ দক্ষতা অত্যন্ত কার্যকর এবং ব্যাপক বিস্তৃত।
পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জেনে নেওয়া যাক এমন এক ভাষা সম্পর্কে যেই ভাষাকে বলা হয় ‘সুখের ভাষা’। যে ভাষায় নেই কোনো অতীত, ভবিষ্যৎ ও সংখ্যাগত ধারণা।
এই ভাষা আবিষ্কারের পর নড়েচড়ে বসেছিলেন বিশ্বের তাবড় ভাষাবিদেরা। আমেরিকার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও ভাষাতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কিও ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন। কেননা ভাষাটির কাঠামো চমস্কির প্রণীত ইউনিভার্সাল গ্রামারের (সর্বজনীন ব্যকরণ) সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভাষাটির নাম পিরাহা। ব্রাজিলের গভীর আমাজন বনের এক নদীর ধারে পিরাহা জনগোষ্ঠীর বাস। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁদের সদস্য সংখ্যা ৮০০। ভাষাবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এক নৃগোষ্ঠী।
পিরাহারা সাধারণ কুঁড়েঘরে বাস করে। সেই ঘরে কয়েকটি পাত্র, থালা এবং ছুরি থাকে। তীরের মাথা ধারালো করার জন্য এক ধরনের ছুরি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র সরঞ্জাম সঙ্গে রাখেন না তাঁরা। আলগাভাবে বোনা তাল-পাতার ব্যাগ, ধনুক, তীর ও বর্শা তৈরি করেন তাঁরা। তাঁরা ২৪ ঘণ্টায় ১৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা ঘুমান। সারা রাত ঘুমানোর ঘটনা খবুই বিরল।
পিরাহাদের জীবনযাপন খুব সরল। জীবনধারণের জন্য পশু–পাখি শিকার আর মাছ ধরেন তাঁরা। ক্ষুধা না থাকলে সাধারণত অলস সময় পার করেন। অতীত নিয়ে যেমন নেই কোনো খেদ, ভবিষ্যৎ নিয়েও তাঁরা ভাবেন না। জীবন বলতে তাঁরা শুধু বর্তমানকেই বোঝেন। একটি নির্ভার, নিশ্চেষ্ট ও উদ্যমহীন জীবন যাপন করেন পিরাহারা। তাঁদের কোনো গোষ্ঠী নেতা নেই। কেউ কারও ওপর খবরদারি করে না।
৩০ বছর ভাষাবিজ্ঞান পড়িয়েছেন অধ্যাপক ডেনিয়েল এভারেট। এই নৃগোষ্ঠীর ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন এই অধ্যাপক। যদিও ৭০–এর দশকের শেষ দিকে সেখানে গিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করতে। পিরাহাদের বসতির কাছাকাছি অবস্থান করে খ্রিষ্টের বাণী প্রচারের চেষ্টা করেন। কিন্তু পিরাহারা যিশুখ্রিষ্টকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে এভারেটকে তাড়িয়ে দেন।
যিশুখ্রিষ্টকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারটি অধ্যাপক এভারেটকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। তিনি পিরাহাদের ভাষা ও কৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁদের ভাষা ও জীবন নিয়ে কয়েক বছর গবেষণার পর অধ্যাপক এভারেট দাবি করেন, পিরাহা ভাষায় কোনো অতীত-ভবিষ্যৎ নেই। রং এবং সংখ্যার জন্য কোনো শব্দ নেই। নেই পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া কোনো গল্প/রূপকথা, শিল্প বা স্মৃতি।
পিরাহারা বিমূর্ত কোনো ধারণা বুঝতে পারে না। যেমন, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ঈশ্বর ইত্যাদি। পিরাহা ভাষার মধ্যে ঈশ্বরের ধারণাই নেই! অর্থাৎ তাঁরা প্রত্যক্ষ বস্তু জগতের বাইরে আর কিছুই কল্পনা করেন না। এর মানে এই নয় যে পিরাহারা নির্বোধ। বরং ব্যাপারটা এমন যে, জীবন ও বাস্তবতাকে তাঁরা এক ভিন্ন উপায়ে উপলব্ধি করেন। আমাজনের হাজার হাজার উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে তাঁদের বিস্তৃত জ্ঞান রয়েছে। তাঁরা জঙ্গলে নগ্ন অবস্থায় কোনো অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারেন। এভাবে দুই-তিন দিন ঘোরার পর ফল, বাদাম এবং খেলনা নিয়ে ডেরায় ফেরেন। কখনো পথ ভুলে হারিয়ে যান না।
অধ্যাপক এভারেটের মতে, পিরাহারা অতীত এবং ভবিষ্যৎকে এড়িয়ে চলেন। প্রতিটি দিন আনন্দের মধ্য দিয়ে উপভোগ করেন। সব সময় বহিরাগতদের প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবেই সুখে শান্তিতে আছেন তাঁরা।
দুর্বোধ্য পিরাহা ভাষাকে নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন— গানের পাখির প্রগলভতা, সুমধুর ডাকডাকি এবং সহজে বোঝা যায় না— বলে বর্ণনা করেছে।
যাই হোক, ডেনিয়েল এভারেট যখন পিরাহা ভাষার ব্যাকরণ আমেরিকার ভাষাবিজ্ঞানীদের সামনে উপস্থাপন করেন তখন আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কেননা এ ভাষার ব্যাকরণ নোয়াম চমস্কির ‘সর্বজনীন ব্যাকরণ তত্ত্ব’কে চ্যালেঞ্জ করে। এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করা মানে— আইনস্টাইন আপেক্ষিকতাকে ভুল বুঝেছেন বলার মতো।
এভারেট দাবি করেন, পিরাহা ভাষায় কোনো ‘পুনরাবৃত্তি’ (Recurssion) নেই। ভাষাবিজ্ঞানে ‘পুনরাবৃত্তি’ হলো, একই কাঠামোর পুনরাবৃত্তি করে বাক্যকে যত খুশি দীর্ঘ করা। যেমন, ‘মায়িশা আনিকাকে রাস্তায় দেখেছে’ একটি বাক্য। কিন্তু যখন বলা হবে, ‘শিলা বলেছে যে মায়িশা আনিকাকে রাস্তায় দেখেছে।’ এভাবে একটি সরল বাক্যকে যতো খুশি দীর্ঘ করা সম্ভব। একেই বলে ‘পুনরাবৃত্তি’।
পিরাহা ভাষায় কোনো জটিল বাক্য নেই। সবই সরল ও বর্তমান। চমস্কি পুনরাবৃত্তিকে পৃথিবীর সব ভাষার মৌলিক ভিত্তি বলে চিহ্নিত করেছেন। চমস্কি বলেন, ভাষার এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষের জিনেই রয়েছে। এটি বংশগতির মতোই প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়। যার ফলে মানুষের ভাষা অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। তখন প্রশ্ন ওঠে পিরাহা ভাষার ভিত্তি কি তবে জৈবিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক?
এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড. স্টিভ পিয়ানটোডসি কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে পিরাহা ভাষার কাঠামো পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যা এ ভাষায় আসলেই কোনো পুনরাবৃত্তি নেই।
এরপর নোয়াম চমস্কি বলেছিলেন, ‘সব ভাষাতেই পুনরাবৃত্তি রয়েছে। এটি ছাড়া ভাষা গঠিত হতে পারে না। তবে পিরাহাদের ভাষা এক ভিন্ন গল্প।’
সংগীতশিল্পী থেকে ধর্মপ্রচারক হিসেবে জীবন শুরু করা ডেনিয়েল এভারেট এই ঘটনার পর থেকে হয়ে ওঠেন এক বিদ্রোহী একাডেমিক। পিরাহা ভাষার ব্যাকরণকে তিনি আখ্যা দেন ‘দ্য গ্রামার অব হ্যাপিনেস’। এই নামে পিরাহাদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এভারেটের এই আবিষ্কার যদি সত্য হয়ে থাকে তবে মানুষ ও তার ভাষা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ধারণাকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
মানবজাতি অন্য সব প্রাণিকুলের থেকে আলাদা শুধু তার ভাষার কারণেই। মানুষ তাদের ভাষার লিখিত রূপও উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু অন্য কোনো প্রাণী সেটি পারেনি। সীমিত শব্দভাণ্ডার দিয়ে অসীম সংখ্যক জটিল বাক্য গঠনের দক্ষতা আছে মানুষের। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ সুখ, দুঃখ ও চিন্তা-চেতনা প্রকাশ করে। ফলে তার যোগাযোগ দক্ষতা অত্যন্ত কার্যকর এবং ব্যাপক বিস্তৃত।
পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জেনে নেওয়া যাক এমন এক ভাষা সম্পর্কে যেই ভাষাকে বলা হয় ‘সুখের ভাষা’। যে ভাষায় নেই কোনো অতীত, ভবিষ্যৎ ও সংখ্যাগত ধারণা।
এই ভাষা আবিষ্কারের পর নড়েচড়ে বসেছিলেন বিশ্বের তাবড় ভাষাবিদেরা। আমেরিকার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও ভাষাতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কিও ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন। কেননা ভাষাটির কাঠামো চমস্কির প্রণীত ইউনিভার্সাল গ্রামারের (সর্বজনীন ব্যকরণ) সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভাষাটির নাম পিরাহা। ব্রাজিলের গভীর আমাজন বনের এক নদীর ধারে পিরাহা জনগোষ্ঠীর বাস। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁদের সদস্য সংখ্যা ৮০০। ভাষাবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এক নৃগোষ্ঠী।
পিরাহারা সাধারণ কুঁড়েঘরে বাস করে। সেই ঘরে কয়েকটি পাত্র, থালা এবং ছুরি থাকে। তীরের মাথা ধারালো করার জন্য এক ধরনের ছুরি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্র সরঞ্জাম সঙ্গে রাখেন না তাঁরা। আলগাভাবে বোনা তাল-পাতার ব্যাগ, ধনুক, তীর ও বর্শা তৈরি করেন তাঁরা। তাঁরা ২৪ ঘণ্টায় ১৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা ঘুমান। সারা রাত ঘুমানোর ঘটনা খবুই বিরল।
পিরাহাদের জীবনযাপন খুব সরল। জীবনধারণের জন্য পশু–পাখি শিকার আর মাছ ধরেন তাঁরা। ক্ষুধা না থাকলে সাধারণত অলস সময় পার করেন। অতীত নিয়ে যেমন নেই কোনো খেদ, ভবিষ্যৎ নিয়েও তাঁরা ভাবেন না। জীবন বলতে তাঁরা শুধু বর্তমানকেই বোঝেন। একটি নির্ভার, নিশ্চেষ্ট ও উদ্যমহীন জীবন যাপন করেন পিরাহারা। তাঁদের কোনো গোষ্ঠী নেতা নেই। কেউ কারও ওপর খবরদারি করে না।
৩০ বছর ভাষাবিজ্ঞান পড়িয়েছেন অধ্যাপক ডেনিয়েল এভারেট। এই নৃগোষ্ঠীর ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন এই অধ্যাপক। যদিও ৭০–এর দশকের শেষ দিকে সেখানে গিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করতে। পিরাহাদের বসতির কাছাকাছি অবস্থান করে খ্রিষ্টের বাণী প্রচারের চেষ্টা করেন। কিন্তু পিরাহারা যিশুখ্রিষ্টকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে এভারেটকে তাড়িয়ে দেন।
যিশুখ্রিষ্টকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারটি অধ্যাপক এভারেটকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। তিনি পিরাহাদের ভাষা ও কৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁদের ভাষা ও জীবন নিয়ে কয়েক বছর গবেষণার পর অধ্যাপক এভারেট দাবি করেন, পিরাহা ভাষায় কোনো অতীত-ভবিষ্যৎ নেই। রং এবং সংখ্যার জন্য কোনো শব্দ নেই। নেই পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া কোনো গল্প/রূপকথা, শিল্প বা স্মৃতি।
পিরাহারা বিমূর্ত কোনো ধারণা বুঝতে পারে না। যেমন, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ঈশ্বর ইত্যাদি। পিরাহা ভাষার মধ্যে ঈশ্বরের ধারণাই নেই! অর্থাৎ তাঁরা প্রত্যক্ষ বস্তু জগতের বাইরে আর কিছুই কল্পনা করেন না। এর মানে এই নয় যে পিরাহারা নির্বোধ। বরং ব্যাপারটা এমন যে, জীবন ও বাস্তবতাকে তাঁরা এক ভিন্ন উপায়ে উপলব্ধি করেন। আমাজনের হাজার হাজার উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে তাঁদের বিস্তৃত জ্ঞান রয়েছে। তাঁরা জঙ্গলে নগ্ন অবস্থায় কোনো অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারেন। এভাবে দুই-তিন দিন ঘোরার পর ফল, বাদাম এবং খেলনা নিয়ে ডেরায় ফেরেন। কখনো পথ ভুলে হারিয়ে যান না।
অধ্যাপক এভারেটের মতে, পিরাহারা অতীত এবং ভবিষ্যৎকে এড়িয়ে চলেন। প্রতিটি দিন আনন্দের মধ্য দিয়ে উপভোগ করেন। সব সময় বহিরাগতদের প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবেই সুখে শান্তিতে আছেন তাঁরা।
দুর্বোধ্য পিরাহা ভাষাকে নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন— গানের পাখির প্রগলভতা, সুমধুর ডাকডাকি এবং সহজে বোঝা যায় না— বলে বর্ণনা করেছে।
যাই হোক, ডেনিয়েল এভারেট যখন পিরাহা ভাষার ব্যাকরণ আমেরিকার ভাষাবিজ্ঞানীদের সামনে উপস্থাপন করেন তখন আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কেননা এ ভাষার ব্যাকরণ নোয়াম চমস্কির ‘সর্বজনীন ব্যাকরণ তত্ত্ব’কে চ্যালেঞ্জ করে। এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করা মানে— আইনস্টাইন আপেক্ষিকতাকে ভুল বুঝেছেন বলার মতো।
এভারেট দাবি করেন, পিরাহা ভাষায় কোনো ‘পুনরাবৃত্তি’ (Recurssion) নেই। ভাষাবিজ্ঞানে ‘পুনরাবৃত্তি’ হলো, একই কাঠামোর পুনরাবৃত্তি করে বাক্যকে যত খুশি দীর্ঘ করা। যেমন, ‘মায়িশা আনিকাকে রাস্তায় দেখেছে’ একটি বাক্য। কিন্তু যখন বলা হবে, ‘শিলা বলেছে যে মায়িশা আনিকাকে রাস্তায় দেখেছে।’ এভাবে একটি সরল বাক্যকে যতো খুশি দীর্ঘ করা সম্ভব। একেই বলে ‘পুনরাবৃত্তি’।
পিরাহা ভাষায় কোনো জটিল বাক্য নেই। সবই সরল ও বর্তমান। চমস্কি পুনরাবৃত্তিকে পৃথিবীর সব ভাষার মৌলিক ভিত্তি বলে চিহ্নিত করেছেন। চমস্কি বলেন, ভাষার এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষের জিনেই রয়েছে। এটি বংশগতির মতোই প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়। যার ফলে মানুষের ভাষা অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। তখন প্রশ্ন ওঠে পিরাহা ভাষার ভিত্তি কি তবে জৈবিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক?
এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড. স্টিভ পিয়ানটোডসি কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে পিরাহা ভাষার কাঠামো পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যা এ ভাষায় আসলেই কোনো পুনরাবৃত্তি নেই।
এরপর নোয়াম চমস্কি বলেছিলেন, ‘সব ভাষাতেই পুনরাবৃত্তি রয়েছে। এটি ছাড়া ভাষা গঠিত হতে পারে না। তবে পিরাহাদের ভাষা এক ভিন্ন গল্প।’
সংগীতশিল্পী থেকে ধর্মপ্রচারক হিসেবে জীবন শুরু করা ডেনিয়েল এভারেট এই ঘটনার পর থেকে হয়ে ওঠেন এক বিদ্রোহী একাডেমিক। পিরাহা ভাষার ব্যাকরণকে তিনি আখ্যা দেন ‘দ্য গ্রামার অব হ্যাপিনেস’। এই নামে পিরাহাদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এভারেটের এই আবিষ্কার যদি সত্য হয়ে থাকে তবে মানুষ ও তার ভাষা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ধারণাকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪