আশফাক নিপুন
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কোনো অতীত ইতিহাস ছিল না আমাদের দেশে। তাই বলতে গেলে এর সামনে শুধুই ভবিষ্যৎ। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছে। আমরা যা কখনো চিন্তাও করতে পারতাম না, সেই ঘরে বসে অফিস করাও আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিনোদনের মাধ্যমেও এক বড় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। যেহেতু কঠোর লকডাউনে বাড়ির বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না, সেহেতু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও নতুন নতুন অনুষ্ঠান তৈরি করতে পারছিল না। সেই সময় দর্শকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, যার পুরো ফর্ম হচ্ছে ‘ওভার দ্য টপ’ প্ল্যাটফর্ম। ওটিটি মডেল আমাদের জন্য নতুন হলেও খাপ খাইয়ে নিতে কারও অসুবিধা হয়নি।
ওটিটির প্রথম শর্ত, এখানে ফ্রি কনটেন্ট দেখার উপায় নেই। ব্যবহারকারীকে অবশ্যই কোনো স্মার্ট ডিভাইসের (ফোন, ট্যাব বা টিভি) শরণাপন্ন হতে হবে। তারপর পছন্দের নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সাবস্ক্রাইব বা সংযুক্ত হতে হবে। তারপর পছন্দমতো কনটেন্ট দেখা যাবে।
প্রথমেই বলে রাখি, টেলিভিশন আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দুটি পুরোপুরি ভিন্ন মাধ্যম। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের নির্মাতাদের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে কোনো আর্টওয়ার্ক বা কনটেন্ট ফ্রি হওয়া উচিত নয়। কনটেন্ট কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয় যে আজীবন ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাবে। একটা কনটেন্ট ভাবতে, তৈরি করতে, সর্বোচ্চ কারিগরি প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দর্শকদের সামনে তা উপস্থাপন করতে যে শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়, সেটা ফ্রি কেন হবে? আমরা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গেলে টিকিট কেটে দেখি। কনসার্টে গান শুনতে গেলে টিকিট কেটে যাই। রান্না করতে গেলে টাকা খরচ করে বাজার করি। শুধু কনটেন্ট দেখার বেলায়, শোনার বেলায় ফ্রি চাইব—এটা পুরোপুরি অন্যায্য।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাই কোনোভাবেই ফ্রি মিডিয়াম নয়, টেলিভিশন বা ইউটিউবের মতো। এখানে অর্থলগ্নির পরিমাণও যেকোনো টিভি বা ইউটিউব কনটেন্টের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। কারণ, এখানে দর্শকের প্রিমিয়াম এক্সপেরিয়েন্সের কথা চিন্তা করা হয় কোনো কনটেন্ট পরিকল্পনার সময়, যা টিভি বা ইউটিউবে সচরাচর করা হয় না। সব সময় সব কনটেন্ট হয়তো দর্শকদের আগ্রহকে পরিপূর্ণভাবে মেটাতে পারে না, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কনটেন্ট দর্শকদের সেসব এক্সপেরিয়েন্স দেয়, যা ফ্রি মিডিয়ামে সম্ভব হয় না।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বাধীনতা। সেটা নির্মাতা ও দর্শক—দুই পক্ষেরই। যেহেতু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম টেলিভিশনের মতো ফ্রি কোনো ড্রয়িংরুম মিডিয়া নয় এবং বিনা মূল্যে দেখাও যায় না, কাজেই কোনো দর্শক যখন কোনো কনটেন্ট দেখতে চান, তিনি স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করে এই কনটেন্ট দেখতে পারেন। এটা তাঁর সর্বোচ্চ স্বাধীনতা। তাঁর এই স্বাধীনতাই একজন নির্মাতাকে স্বাধীনতা দেয় এমন নতুন নতুন অনেক বিষয় নিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে গল্প বলার, যা নানা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সরকারি চাপে অন্য মাধ্যমে বলা যায় না।
আমাদের দর্শক এখন অনেক পরিণত। বৈশ্বিক নানা ধরনের কনটেন্ট দেখে তাঁদের চোখ খুলে গেছে আগেই। আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পুরোপুরি পার্সোনালাইজড একটা প্ল্যাটফর্ম। আপনাকে ঘরের একটিমাত্র ডিভাইস (টিভি) দিয়ে সবার সঙ্গে বসে কমিউনিটি ভিউয়িং করতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা এখানে নেই। আপনি নিজের ডিভাইসে (মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব) রুমে বসে পছন্দমতো অনেক কনটেন্ট নিজেই উপভোগ করতে পারবেন, যা দর্শক ও নির্মাতাদের স্বাধীনতার জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। তাহলে নির্মাতার স্বাধীনতা কি স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় না? উত্তর হচ্ছে, ‘না’। কারণ, নির্মাতা যদি এমন কিছু নির্মাণ করেন, যা ওই দর্শক বা ব্যবহারকারীর রুচিতে আঘাত করে, তাহলে দর্শকেরও স্বাধীনতা আছে সেই কনটেন্ট বর্জন করার, উৎসাহ না দেওয়ার। এবং এই পদ্ধতি এতটাই গণতান্ত্রিক যে কিছুদিন গেলেই সবাই বুঝে যায় দর্শক কোন কনটেন্টকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, আর কোনটাকে করেননি।
আমাদের দেশে এখন বেশ কিছু বিদেশি এবং দেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কনটেন্ট প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে কনটেন্ট নির্মাণও করছে। বিদেশি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে হইচই-এর নাম আসবে সর্বাগ্রে। ‘ঢাকা মেট্রো’, ‘মানি হানি’, ‘তাকদির’, ‘মহানগর’, ‘বলি’, ‘সাবরিনা’, ‘রিফিউজি’-এর মতো ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে হইচই। এ ছাড়া আরেক বিদেশি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ-এর ‘মাইনকার চিপায়’ আর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’-ও ছিল বেশ আলোচিত। আমাদের দেশে বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাদের কাজ শুরু করেছে গত দু-তিন বছরে। প্রথমেই বলতে হয় ‘চরকি’র কথা। ‘ঊনলৌকিক’, ‘জাগো বাহে’, ‘শাটিকাপ’, ‘ষ’ ইত্যাদি ওয়েব সিরিজ এবং ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘আধখানা ভালোবাসা আধা মস্তান’, ‘৭ নম্বর ফ্লোর’ ইত্যাদি ওয়েব ফিল্ম দিয়ে এক বছরের কম সময়ে দর্শকদের আস্থা অর্জন করেছে চরকি। এ ছাড়া বায়োস্কোপ, বিঞ্জ, টফি, সিনেমাটিক প্ল্যাটফর্মগুলোও কাজ করে যাচ্ছে ওটিটির প্রতি দর্শকচাহিদার কথা মাথায় রেখে।
দর্শকদের এই বাড়তি আগ্রহই হয়তো সরকারকে উৎসাহী করেছে ওটিটি নীতিমালা প্রণয়নে। আমরা সবাই জানি, নীতিমালা কীভাবে শুভংকরের ফাঁকির মতো গলায় ফাঁস হয়ে চেপে বসেছে আগেও, এখনো। যেহেতু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সাহসী গল্পের সম্ভাবনা বিপুল, তাই শাসকশ্রেণির অস্বস্তিও হয়তো একটু বেশি।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই এই প্ল্যাটফর্ম বা পে ফর কনটেন্ট সার্ভিসের সঙ্গে এখনো পরিচিত নয়। তাদের এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ কখনোই করা যাবে না, যদি নানামুখী এসব নিয়মনীতি, আর চাপ নির্মাতা ও দর্শকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের সিনেমাশিল্প বলতে গেলে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশি টিভি ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাও ভালো নয়। মানুষ অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বেলায় যদি নিয়মনীতির খড়্গ শুরু থেকেই চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এখানেও দর্শক বাংলাদেশি প্ল্যাটফর্ম বাদ দিয়ে বিদেশি নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম-এর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যা আখেরে আমাদেরই ক্ষতি।
একটা দেশ পুরোপুরি আমদানিভিত্তিক হয়ে বেশি দিন চলতে পারে না। নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে নিজস্ব পণ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করলেই বলা যায় সফল উন্নয়ন হচ্ছে। কনটেন্ট বা বিনোদনের বেলায়ও আমরা যেন শুধু নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, হইচই-এর আমদানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাও সাহসী, ডাইনামিক কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারি, সেই দায়িত্ব দর্শক, নির্মাতার চেয়ে সরকারেরই সবচেয়ে বেশি। কাজেই বিকাশমান এই শিল্পের গলা শুরু থেকে যেন চেপে না ধরা হয়, সেটাই আমাদের কাম্য।
আশফাক নিপুন, নির্মাতা
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কোনো অতীত ইতিহাস ছিল না আমাদের দেশে। তাই বলতে গেলে এর সামনে শুধুই ভবিষ্যৎ। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছে। আমরা যা কখনো চিন্তাও করতে পারতাম না, সেই ঘরে বসে অফিস করাও আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিনোদনের মাধ্যমেও এক বড় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। যেহেতু কঠোর লকডাউনে বাড়ির বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না, সেহেতু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও নতুন নতুন অনুষ্ঠান তৈরি করতে পারছিল না। সেই সময় দর্শকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, যার পুরো ফর্ম হচ্ছে ‘ওভার দ্য টপ’ প্ল্যাটফর্ম। ওটিটি মডেল আমাদের জন্য নতুন হলেও খাপ খাইয়ে নিতে কারও অসুবিধা হয়নি।
ওটিটির প্রথম শর্ত, এখানে ফ্রি কনটেন্ট দেখার উপায় নেই। ব্যবহারকারীকে অবশ্যই কোনো স্মার্ট ডিভাইসের (ফোন, ট্যাব বা টিভি) শরণাপন্ন হতে হবে। তারপর পছন্দের নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সাবস্ক্রাইব বা সংযুক্ত হতে হবে। তারপর পছন্দমতো কনটেন্ট দেখা যাবে।
প্রথমেই বলে রাখি, টেলিভিশন আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দুটি পুরোপুরি ভিন্ন মাধ্যম। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের নির্মাতাদের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে কোনো আর্টওয়ার্ক বা কনটেন্ট ফ্রি হওয়া উচিত নয়। কনটেন্ট কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয় যে আজীবন ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাবে। একটা কনটেন্ট ভাবতে, তৈরি করতে, সর্বোচ্চ কারিগরি প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দর্শকদের সামনে তা উপস্থাপন করতে যে শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়, সেটা ফ্রি কেন হবে? আমরা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গেলে টিকিট কেটে দেখি। কনসার্টে গান শুনতে গেলে টিকিট কেটে যাই। রান্না করতে গেলে টাকা খরচ করে বাজার করি। শুধু কনটেন্ট দেখার বেলায়, শোনার বেলায় ফ্রি চাইব—এটা পুরোপুরি অন্যায্য।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাই কোনোভাবেই ফ্রি মিডিয়াম নয়, টেলিভিশন বা ইউটিউবের মতো। এখানে অর্থলগ্নির পরিমাণও যেকোনো টিভি বা ইউটিউব কনটেন্টের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। কারণ, এখানে দর্শকের প্রিমিয়াম এক্সপেরিয়েন্সের কথা চিন্তা করা হয় কোনো কনটেন্ট পরিকল্পনার সময়, যা টিভি বা ইউটিউবে সচরাচর করা হয় না। সব সময় সব কনটেন্ট হয়তো দর্শকদের আগ্রহকে পরিপূর্ণভাবে মেটাতে পারে না, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব কনটেন্ট দর্শকদের সেসব এক্সপেরিয়েন্স দেয়, যা ফ্রি মিডিয়ামে সম্ভব হয় না।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বাধীনতা। সেটা নির্মাতা ও দর্শক—দুই পক্ষেরই। যেহেতু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম টেলিভিশনের মতো ফ্রি কোনো ড্রয়িংরুম মিডিয়া নয় এবং বিনা মূল্যে দেখাও যায় না, কাজেই কোনো দর্শক যখন কোনো কনটেন্ট দেখতে চান, তিনি স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করে এই কনটেন্ট দেখতে পারেন। এটা তাঁর সর্বোচ্চ স্বাধীনতা। তাঁর এই স্বাধীনতাই একজন নির্মাতাকে স্বাধীনতা দেয় এমন নতুন নতুন অনেক বিষয় নিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে গল্প বলার, যা নানা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সরকারি চাপে অন্য মাধ্যমে বলা যায় না।
আমাদের দর্শক এখন অনেক পরিণত। বৈশ্বিক নানা ধরনের কনটেন্ট দেখে তাঁদের চোখ খুলে গেছে আগেই। আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পুরোপুরি পার্সোনালাইজড একটা প্ল্যাটফর্ম। আপনাকে ঘরের একটিমাত্র ডিভাইস (টিভি) দিয়ে সবার সঙ্গে বসে কমিউনিটি ভিউয়িং করতে হবে, এই বাধ্যবাধকতা এখানে নেই। আপনি নিজের ডিভাইসে (মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব) রুমে বসে পছন্দমতো অনেক কনটেন্ট নিজেই উপভোগ করতে পারবেন, যা দর্শক ও নির্মাতাদের স্বাধীনতার জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। তাহলে নির্মাতার স্বাধীনতা কি স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় না? উত্তর হচ্ছে, ‘না’। কারণ, নির্মাতা যদি এমন কিছু নির্মাণ করেন, যা ওই দর্শক বা ব্যবহারকারীর রুচিতে আঘাত করে, তাহলে দর্শকেরও স্বাধীনতা আছে সেই কনটেন্ট বর্জন করার, উৎসাহ না দেওয়ার। এবং এই পদ্ধতি এতটাই গণতান্ত্রিক যে কিছুদিন গেলেই সবাই বুঝে যায় দর্শক কোন কনটেন্টকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, আর কোনটাকে করেননি।
আমাদের দেশে এখন বেশ কিছু বিদেশি এবং দেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কনটেন্ট প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে কনটেন্ট নির্মাণও করছে। বিদেশি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে হইচই-এর নাম আসবে সর্বাগ্রে। ‘ঢাকা মেট্রো’, ‘মানি হানি’, ‘তাকদির’, ‘মহানগর’, ‘বলি’, ‘সাবরিনা’, ‘রিফিউজি’-এর মতো ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে হইচই। এ ছাড়া আরেক বিদেশি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ-এর ‘মাইনকার চিপায়’ আর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’-ও ছিল বেশ আলোচিত। আমাদের দেশে বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাদের কাজ শুরু করেছে গত দু-তিন বছরে। প্রথমেই বলতে হয় ‘চরকি’র কথা। ‘ঊনলৌকিক’, ‘জাগো বাহে’, ‘শাটিকাপ’, ‘ষ’ ইত্যাদি ওয়েব সিরিজ এবং ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘আধখানা ভালোবাসা আধা মস্তান’, ‘৭ নম্বর ফ্লোর’ ইত্যাদি ওয়েব ফিল্ম দিয়ে এক বছরের কম সময়ে দর্শকদের আস্থা অর্জন করেছে চরকি। এ ছাড়া বায়োস্কোপ, বিঞ্জ, টফি, সিনেমাটিক প্ল্যাটফর্মগুলোও কাজ করে যাচ্ছে ওটিটির প্রতি দর্শকচাহিদার কথা মাথায় রেখে।
দর্শকদের এই বাড়তি আগ্রহই হয়তো সরকারকে উৎসাহী করেছে ওটিটি নীতিমালা প্রণয়নে। আমরা সবাই জানি, নীতিমালা কীভাবে শুভংকরের ফাঁকির মতো গলায় ফাঁস হয়ে চেপে বসেছে আগেও, এখনো। যেহেতু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সাহসী গল্পের সম্ভাবনা বিপুল, তাই শাসকশ্রেণির অস্বস্তিও হয়তো একটু বেশি।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই এই প্ল্যাটফর্ম বা পে ফর কনটেন্ট সার্ভিসের সঙ্গে এখনো পরিচিত নয়। তাদের এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ কখনোই করা যাবে না, যদি নানামুখী এসব নিয়মনীতি, আর চাপ নির্মাতা ও দর্শকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের সিনেমাশিল্প বলতে গেলে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশি টিভি ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাও ভালো নয়। মানুষ অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বেলায় যদি নিয়মনীতির খড়্গ শুরু থেকেই চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এখানেও দর্শক বাংলাদেশি প্ল্যাটফর্ম বাদ দিয়ে বিদেশি নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম-এর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যা আখেরে আমাদেরই ক্ষতি।
একটা দেশ পুরোপুরি আমদানিভিত্তিক হয়ে বেশি দিন চলতে পারে না। নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে নিজস্ব পণ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করলেই বলা যায় সফল উন্নয়ন হচ্ছে। কনটেন্ট বা বিনোদনের বেলায়ও আমরা যেন শুধু নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, হইচই-এর আমদানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাও সাহসী, ডাইনামিক কনটেন্ট তৈরি করে তা বিশ্বব্যাপী প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারি, সেই দায়িত্ব দর্শক, নির্মাতার চেয়ে সরকারেরই সবচেয়ে বেশি। কাজেই বিকাশমান এই শিল্পের গলা শুরু থেকে যেন চেপে না ধরা হয়, সেটাই আমাদের কাম্য।
আশফাক নিপুন, নির্মাতা
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪