Ajker Patrika

১৫ আগস্ট: আমাদের সম্মিলিত পাপ

নূহ-উল-আলম লেনিন
১৫ আগস্ট: আমাদের সম্মিলিত পাপ

স্বদেশের মানচিত্রজুড়ে একটি মানুষ—নিথর, নিস্পন্দ। পাশে একগুচ্ছ ফুলের শব। কোথাও কেউ নেই। অনুগ্রহভাজন, কৃপাপ্রার্থী, স্তাবক, ভক্ত, অনুরাগী, পারিষদবর্গ—কেউ নেই। চারদিকে কেবল নৈঃশব্দ্যের তর্জনী।

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সাল। রাতের প্রায় শেষ প্রহর। পরম নিশ্চিন্তে নিদ্রামগ্ন বাংলাদেশ। অকস্মাৎ রিকয়েললেস রাইফেল আর কামানের মুহুর্মুহু গর্জন। ভেঙে খান খান রাতের মৌনতা। তারপর আবার সব সুনসান। কেবল বাতাস কেঁদে ফেরে শব্দহীন আর্তনাদে। নিত্যদিনের মতোই সূর্য উঁকি মারে। অদূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের সকরুণ ধ্বনি। ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ৬৭৭ নম্বর বাড়িটির ওপর আলো পড়তেই শিউরে ওঠে নিখিল চরাচর। সিঁড়িতে পড়ে আছেন রক্তাপ্লুত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। কালো গিলাফে ঢাকা পড়ে বাংলাদেশের বাঙালির ইতিহাস।

বদলে যায় দৃশ্যপট। বেতারে খুনি মেজর ডালিমের সদম্ভ ঘোষণা। ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুঃসংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে গ্রামগঞ্জে, শহরে-বন্দরে। অসম্ভব! অবিশ্বাস্য! রুদ্ধশ্বাস মানুষ অপেক্ষা করেন, হয়তো এক্ষুনি শোনা যাবে সেই বজ্রকণ্ঠের অভয় বাণী। অথবা নতুন যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান। না, তার বদলে এ কার কণ্ঠস্বর! বেদখল বাংলাদেশে স্বঘোষিত শিখণ্ডী ‘প্রেসিডেন্ট’ খন্দকার মোশতাকের বেতার ভাষণ। এ-ও কি সম্ভব? অবিশ্বাস কাটে না মানুষের। বেলা বাড়ে। ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে ট্যাংকের ঘর্ঘর শব্দ। বেতারে, মাইকে কারফিউর ঘন ঘন ঘোষণা। সারা দেশে সামরিক আইন জারি।

অপরূপ সাজে সজ্জিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবেন। রাত জেগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত জাতীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দিনের আলো না ফুটতেই এল সেই দুঃসহ মর্মচেরা বার্তা। কলাভবনে অবস্থানকালেই সবাই জানতে পারেন, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। একটা অকথিত অসাড়, অবসন্নতা গ্রাস করে সমস্ত দেহমনকে। কিন্তু সে কেবল পল কয়েকের জন্য। আকস্মিক বেদনার ঘোর কাটিয়ে উঠে প্রতিজ্ঞায় টান টান হয়ে ওঠে উপস্থিত কেউ কেউ: ‘আমাদের একটা কিছু করতে হবে।’ এই প্রবল তাড়না তাদের করে তোলে সংক্ষুব্ধ। কিন্তু না, কেউ দায়িত্ব নিয়ে, সাহস নিয়ে এগিয়ে এল না। ভীতসন্ত্রস্ত শেখ শহীদুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধুর ভাগনে, অক্ষম আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিশেহারা। আমরা জাতীয় ছাত্রলীগের নেতারা, যে যেখানে ছিলাম, চেষ্টা করি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তাঁদের কেউ কেউ আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। তাৎক্ষণিক মোকাবিলার নির্দেশ দিতে, ভরসা দিতে অক্ষম। অথচ এই আমরাই ১৯৭১-এ কারও নির্দেশের অপেক্ষা করিনি।

সত্য বটে, সকাল ৬টার বেতার ঘোষণা শুনেও সাহস হারাইনি। আমরা ছোটাছুটি করেছি। একটা কিছু করার তাড়না অনুভব করেছি। চেয়েছি, কেউ আমাদের বলে দিক। মনে মনে তখনো আশা ছিল, হয়তো সব সত্য নয়। হয়তো এখনই রক্ষীবাহিনী বেরিয়ে পড়বে। তোফায়েল ভাই তো আছেন। হয়তো জেনারেল সফিউল্লাহ কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্রোহ দমনের ঘোষণা দেবেন। আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়বেন কিছুক্ষণের মধ্যেই।

কিন্তু না, এসবের কিছু হয়নি সেদিন। বেলা বাড়তেই শুরু হয় নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের। ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা। কিছুক্ষণ পর নেপথ্য থেকে সরাসরি বাস্তব দৃশ্যপটে আবির্ভূত স্বয়ং মোশতাক। জাতির উদ্দেশে নতুন রাষ্ট্রপতির বেতার ভাষণ।

 অতঃপর চমক। একের পর এক। সত্যি সত্যিই বেতারে নতুন ‘প্রেসিডেন্টের’ প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা। সেনা, বিমান, নৌবাহিনীসহ সব বাহিনীর প্রধানেরা। একের পর এক দৃশ্য। মঞ্চজুড়ে কুশীলবদের পদভারে ক্ষতবিক্ষত স্বদেশের মানচিত্র, ফুসমন্তরে মন্ত্রী হলো রাজা। পারিষদেরা রইল ঠিক। বাংলাদেশ বেতার হলো ‘রেডিও বাংলাদেশ’। বুকজুড়ে আমাদের সংক্রমিত হলো হিমশীতল ভয়—এই না দেশটা পাকিস্তান হয়ে যায়।

নিস্তব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বত্র শঙ্কা ও ঘোর অনিশ্চয়তার ছায়া। ট্যাংক এল বিশ্ববিদ্যালয়ে। হলের সামনে ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে, কোথাও হল গেটে খুনি মেজরদের বক্তৃতা। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি: সাবধান, মার্শাল ল ভাঙার চেষ্টা করলেই গুলি! কেউ ঘর থেকে বেরোবে না।

আগেই বলেছি, ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন ও বিশেষ সমাবর্তনে ভাষণ দেওয়ার কথা। বস্তুত রাষ্ট্রপতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা জানানোর লক্ষ্যে বেশ কদিন আগে থেকেই আমরা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম। ১৪ আগস্ট রাতেও ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব জামান, জাতীয় ছাত্রলীগের নেতা ইসমাত কাদির গামা, ওবায়দুল কাদের, রবিউল মুকতাদির চৌধুরী, কাজী আকরাম হোসেন, অজয় দাশগুপ্ত, আমিসহ ৫০-৬০ জন কর্মী কলাভবনের ডিন অফিস ও ডাকসু অফিসে সারা রাত অবস্থান করি এবং প্রস্তুতির কাজ সারি। রাত ১১টা পর্যন্ত সদ্য বিবাহিত শেখ কামালও ছিলেন। তাঁকে আমরা একরকম জোর করেই বাসায় পাঠিয়ে দিই।

রাত সাড়ে ৪টার দিকে প্রাতঃকৃত্য ও গোসল সেরে জহুরুল হক হলে আসি। মিহি অন্ধকার থাকতে থাকতেই খুনিরা ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে ৩২ নম্বরের ভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন। নিহত হন বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয়ও। গোসল করতে করতে উত্তর দিক থেকে প্রচণ্ড গুলির শব্দ শুনেছি। কিন্তু অনুমানও করতে পারিনি, কী নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। রেডিও থেকে অভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর দৌড়ে এসে জানায় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মান্নান খান। আমিও দৌড়ে সম্ভবত ১৩৭ নম্বর কক্ষে ওদের রেডিও শুনতে গেলাম। শুনলাম হিমশীতল করা সেই খবর ও মেজর ডালিমের ঘোষণা।

মুহূর্তেই স্থির করলাম, কলাভবনে সহকর্মীদের কাছে যাব। কলাভবনে গিয়ে দেখি, ছাত্রনেতারা কেউ নেই। পেলাম জাতীয় ছাত্রলীগের সদস্য চন্দন চৌধুরীকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। পরে শুনেছি, সেলিমসহ জাতীয় ছাত্রলীগের নেতারা সেন্ট্রাল রোডে শেখ শহীদের বাসায় যান ইতিকর্তব্য ঠিক করতে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতা ও ভয়াবহতায় ভীতসন্ত্রস্ত শেখ শহীদ কোনো নির্দেশ বা পরামর্শ দিতে অপারগতা জানান। ওঁরা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মোহাম্মদ ফরহাদের এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলে আপাতত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।

এদিকে আমি চন্দন চৌধুরীকে নিয়ে পুরান ঢাকায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের বাসায় যাই। সে পার্টি হাইকমান্ডের কোনো খবর জানাতে পারল না। আমি প্রথমে বাকশাল নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বাসায় এবং পরে তোফায়েল আহমেদের বাসায় ফোন করি। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে কমিউনিস্ট নেতা মোহাম্মদ ফরহাদকে ফোন করি। ফরহাদ ভাইকে পেয়ে যাই। তিনি আপাতত নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিলেন। জালাল, চন্দন ও আমি ঠিক করলাম হলে বা বাসায় না থেকে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার। চন্দনকে নিয়ে বকশীবাজারে কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী মোস্তাহিদ ভাইদের বাসায় উঠি। ওই বাসায় থেকেই টেলিভিশনের পর্দায় নাটকের অন্যান্য দৃশ্য দেখলাম।

সন্ধ্যার আবছায়া নামার আগেই বঙ্গভবনে উন্মোচিত ১৫ আগস্ট প্রহসনের শেষ দৃশ্য। খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ। পরিচিত সব মুখ। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য—আব্দুল মান্নান, আব্দুল মমিন, আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, আসাদুজ্জামান খান, ড. এ আর মল্লিক, ড. মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী, ফণীভূষণ মজুমদার, মনোরঞ্জন ধর ও সোহরাব হোসেন পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, দেওয়ান ফরিদ গাজী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং কে এম ওবায়দুর রহমান। ছায়াচ্ছন্ন সন্ধ্যায় টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল ঝাড়বাতি শোভিত বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন রাষ্ট্রপতি ও তার মন্ত্রিসভার অভিষেক ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দৃশ্য। ৩২ নম্বরের বাড়িতে তখনো বঙ্গবন্ধুর লাশ সিঁড়িতে পড়ে।

এসব দেখেশুনে আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের সকল আশা ভেঙে পড়ে। এর মধ্যেই ২০ আগস্ট খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আরও পাঁচজন। আমরা ছাত্রসমাজও কিছু করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এটি ছিল আমাদের সম্মিলিত পাপ। তবে প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে দ্রুতই আমরা, জাতীয় ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও কর্তব্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই ঢাকা মহানগরীর পাড়ায় পাড়ায় যোগাযোগ করি। টার্গেট, বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু করব।

সে কাজটি আমরা করেছি। ভীরুতা ও কাপুরুষতা ছুড়ে ফেলে আমরা আমাদের পাপ মোচনের জন্য নতুন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। 

লেখক: সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত