আইসিটি খাত: হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২: ৩৬

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ জুলাই ব্রডব্যান্ড এবং ২৮ জুলাই বিকেল থেকে সীমিত পরিসরে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। ইন্টারনেটের সেবা বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রযুক্তি খাত এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য। ১৭ জুলাইয়ের পর থেকে গত ১০ দিনে এ খাতের বিভিন্ন উপখাতে ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্টভাবে আর্থিক ক্ষতির মূল্যমান নিরূপণ সম্পন্ন হয়নি, হিসাব কষাকষি চলছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের কথায় ক্ষতির সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব অনুমান করা যায়। তবে এখন আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আস্থা ফেরাতে তিনটি পরামর্শ উঠে এসেছে উদ্যোক্তাদের বক্তব্যে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রযুক্তি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ৫ দিনেই ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এটা শুধু যাঁরা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ওই পাঁচ দিনের ক্ষতি। 

প্রযুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং ই-কমার্স উপখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির উপাত্ত মেলে বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের কথায়। তিনি বলেন, সরকারের বলা তথ্যমতে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার আছে। ধরে নিলাম, এর মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ কাজ করছেন। তাঁরা ন্যূনতম প্রতি ঘণ্টায় ১০ ডলার ফি হিসেবে ৮ ঘণ্টা কাজ করলেও দিনে ১৩ মিলিয়ন ডলার হয়, সেটা ক্ষতি হয়েছে। তা-ও সেটি কম কর্মঘণ্টা, মজুরি এবং ফ্রিল্যান্সারদের এক-চতুর্থাংশ ধরে। ফ্রিল্যান্সার সংখ্যায় এবং কর্মঘণ্টার হিসেবে এর চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেন এবং মজুরি পান। 

প্রাতিষ্ঠানিক খাতের ক্ষতির বর্ণনায় তিনি বলেন, যাঁরা বিপিও বা সফটওয়্যার বা আইটি সেবা রপ্তানি করছেন, তাঁদেরও যদি ১৩ মিলিয়ন ডলার ধরি, তাহলে প্রতিদিন গড়ে এই দুটি ক্ষেত্রেই কেবল ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। 

ই-কমার্স এবং ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্সসহ ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষতির বিষয়ে সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, এ খাতে প্রতিদিন ডেলিভারি হতো ৭-৮ লাখ। গড়ে একটা ডেলিভারির টিকিটের মূল্য ৫০০ টাকা ধরলে (অনেক ডেলিভারির টিকিটের মূল্য দুই-তিন হাজারে বেশি হয়) প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাহলে ১০ দিনে প্রায় ৪০০-৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। 

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আকতার নিশা বলেন, ই-কমার্সে ৭০০ কোটি, এফ-কমার্স খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকা। লজিস্টিক খাত পুরোই বন্ধ। সেখানে ১০০ কোটি, ই-ট্যুরিজমে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ দিনেই ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি দেশের অস্থিতিশীল অবস্থার ক্ষতির আঁচে পুড়েছেন এ খাতের খেটে খাওয়া মানুষজন। এ বিষয়ে আলমাস কবির বলেন, শুধু উদ্যোক্তারাই জড়িত নেই, দিন এনে দিন খাওয়া ডেলিভারিম্যান বা রাইডাররাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

নাসিমা আকতার নিশা বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনেকের গ্রাহক চলে গেছে। যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আজকের আয় দিয়ে পরের দিনের বাজার করেন, তাঁরা খুবই বিপদে পড়েছেন। 

তবে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে রাসেল টি আহমেদ বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের কেউ অন্য জায়গায় চলে গেছেন, কেউ যাওয়ার চিন্তা করছেন। কারণ, অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চান না কেউই। এই আশঙ্কার সার্বিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে আরও ২-৩ সপ্তাহ যাওয়ার পরে কিংবা বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে। 

সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, আমাদের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেটা কত দিনে কাটিয়ে উঠব, তা বলা যাবে না। এটা কাটাতে বেগ পেতে হবে। 

বেসিসের আরেক সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম বলেন, ব্যবসায়িক ক্ষতির চেয়ে বড় হলো আস্থা থাকবে না। এই সংকটের জের বহু দিন থাকবে। 

ভাবমূর্তি শক্ত করে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে তিনটি পরামর্শ তুলে ধরেন সৈয়দ আলমাস কবির। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে যাতে ইন্টারনেট সেবা থাকে, তার জন্য ভি-স্যাট (স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ভূকেন্দ্র) লাইসেন্স দিতে হবে। লাইসেন্স দেওয়া শুরু করলে আমরা বিদেশি ক্রেতাদের এটা বলতে পারব, তারাও আস্থা পাবে। তিনি বলেন, ডেটা সেন্টারের পাশাপাশি রিকভারি সাইট রাখার জন্য সরকারকে বলতে হবে। দুটি ডিআর (ডেটা রিকভারি) সাইট থাকতে হবে। ডেটা সেন্টারে সমস্যা হলেও ডিআর সেন্টার থেকে সার্ভিস অটোমেটিক্যালি চালু হয়ে যাবে। তাহলে বিদেশিরা আস্থা পাবে। 

তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে আলমাস কবির বলেন, সরকার যদি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে কয়েক হাজার নতুন টেকনোলজির ওপর দক্ষতাসম্পন্ন জনবল তৈরি করতে পারে, তাহলে আমরা বিদেশিদের কাছে বলতে পারব, আমাদের এখানে ব্লকচেইন, আইওটি, বিগ ডেটা, নতুন টেকনোলজি জানা লোক আছে, আমাদেরকে কাজ দাও। 

এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে দেশের যেকোনো সংকটে ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ চালুর রাখার স্বার্থে সুনির্দিষ্ট অঞ্চল বা ভবন নির্ধারণ করে স্যান্ডবক্স তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন আলমাস কবির। তিনি বলেন, এতে করে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হলেও সেখানে থাকবে, যাতে করে আমরা সেখানে গিয়ে জরুরি কাজ করতে পারি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত