এনবিআরের মতিউরকে সোনালী ব্যাংক পর্ষদ থেকে অপসারণ, প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ২১: ০৭
Thumbnail image

ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ রোববার পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান।

জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘পরিচালক সরকারি পদবি।  অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি ইস্যু না হলে চূড়ান্ত অপসারণ হবে না। তবে মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে তাঁকে (মতিউর) সরানো হবে। আমাদের সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অপসারণ প্রজ্ঞাপন ইস্যুর পর কার্যকর হবে। তবে এখন থেকে মতিউর রহমান সোনালী ব্যাংকের কোনো সভায় থাকতে পারবেন না।’

ওই পদ থেকেও তাঁকে সরানো হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। এদিকে আজ পরিচালক পর্ষদের বৈঠকে অংশগ্রহণ না করায় মতিউর রহমানের পরিচালক পদে আর থাকছেন তা মোটামুটি নিশ্চিত।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিম জানান, আজকের বোর্ড মিটিংয়ে আসতে ড. মতিউর রহমানকে মৌ‌খিকভা‌বে নিষেধ করা হয়।

এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সন্তান পরিচয়ে মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে এক তরুণের ঈদুল আজহার সময় ১২ লাখ টাকায় ছাগল, ৫২ লাখ টাকায় গরু কেনা ও গাড়িবিলাসের কথিত ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এই ইফাত তাঁর সন্তান নন। এমনকি তিনি এই তরুণকে চেনেনও না। তবে পরে জানা যায়, ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর দ্বিতীয় সন্তান।

এ ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজ তাঁকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তিন সদস্যের তদন্ত দল এরই মধ্যে মতিউরের বিষয়ে তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে।

একাদশ বিসিএসের (শুল্ক ও আবগাড়ি) কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের মনোনীত পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। 

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তা বাস্তবায়ন করে। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন হয়ে প্রস্তাব আকারে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকে। সেখান থেকে শুধু নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, (সংশোধিত ২০২৩)–এর ১৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষায়িত ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীকে  পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত, পুনঃনিযুক্ত বা পদায়নের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে এবং এইরূপ নিযুক্ত কর্মকর্তাগণকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে তাহার পদ হইতে অব্যাহতি দেওয়া, বরখাস্ত করা বা অপসরাণ করা যাইবে না।’

বিধি অনুযায়ী, এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ নিয়ে মতিউরকে পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে সোনালী ব্যাংক। 

বতর্মানে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। বাকি পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ।

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দৌলতুন্নাহার খানম, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোল্লা আবদুল ওয়াদুদ ও হিসাববিদ (সিএ) প্রতিষ্ঠান বসু ব্যানার্জি নাথ অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার গোপাল চন্দ্র ঘোষ। আর পদাধিকার বলে পরিচালক ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত