মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহে জোর অন্তর্বর্তী সরকারের

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১: ০৪

দেশে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরবরাহব্যবস্থাকে আরও সুগঠিত ও জোরদার করতে যাচ্ছে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার। পরিকল্পনার আওতায় গত জুলাই মাসে ভেঙে পড়া সরবরাহব্যবস্থাকে দ্রুত স্বাভাবিক ও সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন পণ্য ও সেবার সরবরাহব্যবস্থাকেও একটি টেকসই কাঠামোয় রূপ দেওয়া হবে, যা মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৬৮ শতাংশের ঘরে। জুন মাসে এই হার ছিল ৯.১৫%। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪.১০% হয়েছে, যা আগের জুন মাসে ছিল ১০.৪২%। 

শুধু এক-দুই মাসই নয়, এভাবে প্রায় দুই বছর ধরে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির মুখে দেশ। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের বেঁচে থাকায় প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার ভোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে। বাজারে সব জিনিসই মিলছে, কিন্তু সরবরাহ কম। এতে পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির রাহুগ্রাসও চেপে ধরছে মানুষকে।  

এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজারে সরবরাহে বিশৃঙ্খলার কারণেই জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। একই কারণে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও সামান্য বেড়েছে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

আমরা মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে করণীয় সবকিছুই করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকার 

দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার তথ্য দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাতে নীতিগত সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তার সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করা হবে।  

ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কমিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে করণীয় সবকিছুই করবে অন্তর্বর্তী সরকার।’ 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা সার্বিক বিষয় অবহিত হয়েছি। সেই অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরবরাহ বাড়ানোর স্বার্থে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সার, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য আমদানির পথ সহজ করতে। এলসি খোলার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে। এলসির বিপরীতে ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত মানা হবে না।’

মূল্যস্ফীতি কমাতে এবং মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে সরবরাহব্যবস্থায় উন্নতির পাশাপাশি সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্যাব  

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ভোক্তারা বাজার ব্যবস্থাপনায় অতিমুনাফা, সিন্ডিকেট, কারসাজির শিকার হচ্ছিল। আবার আইন, বিধিবিধান থাকলেও তার যথাযথ প্রতিকার পেত না। ভোক্তার ভোগান্তির কারণ হওয়া ব্যবসায়িক শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেই এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা দেখে অন্যরা এ ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে পারত। তাই মূল্যস্ফীতি কমাতে এবং মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে সরবরাহব্যবস্থায় উন্নতির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অতিমুনাফাখোর, সিন্ডিকেটও কারসাজির হোতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত