ন্যূনতম মজুরি ১২৫০০ টাকার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেন পোশাকশ্রমিকেরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ১৭
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৩১

সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ১২৫০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে বিভিন্ন পোশাকশ্রমিক সংগঠন। সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকেলে পল্টনের তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের সামনেই বিক্ষোভ মিছিল করেন কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। 

বিক্ষোভে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, ‘মজুরি বোর্ড যে প্রহসনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে তা দেশের ৪০ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যাখ্যান করেছে। শ্রমিকেরা কখনোই ১২ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাব মেনে নেবে না। মালিকপক্ষ ও সরকার কখনোই শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। আগামী শুক্রবার আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছি। সেখান থেকে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’ 

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ মজুরি অপ্রতুল। ১২ হাজার ৫০০ টাকায় এখন কোনোভাবেই একজন শ্রমিকের জীবন চলবে না। এই মজুরি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, মজুরি বোর্ডের প্রতি আমাদের আহ্বান এই মজুরি পরিবর্তন করে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ করুন।’

আজ বিকেলে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। মজুরি বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরি ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা এটা ঘোষণা করছি। ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। ৮ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। সঙ্গে বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।’

এর আগে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নিয়ে গঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ও বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। 

অন্যদিকে মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ। 

সভায় শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উভয় পক্ষ প্রস্তাবনায় তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। 

১৯৮৪ সালে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে মজুরি ৫৭০ থেকে বাড়িয়ে ৯৩০ টাকা করা হয়। ২০০৬ সালে ন্যূনতম মজুরি ১ হাজার ৬৬২ টাকা করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করে। ২০১৩ সালে করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সবশেষ ২০১৮ সালে তা ৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত