জাপানের পুরুষেরা কেন বেতনের পুরোটা স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৪৭
Thumbnail image

জাপানে বিয়ের পর নারীদের গৃহিণী হয়ে থাকার ঘটনা খুবই সাধারণ। বিশেষ করে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে নারীরা সাধারণত গৃহস্থালি সামলানোকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। জাপানের গৃহিণীরা সন্তান থেকে শুরু করে সংসারের সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। আর স্বামীর কেবল একটাই দায়িত্ব থাকে, তা হলো—উপার্জন করা। 

জাপানে ঘরের বাজেটও নিয়ন্ত্রণ করেন নারীরা। সংসার ভালোভাবে চালানোর পর কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করেন স্ত্রীরা। তাই, বেতন পাওয়ার পরই সম্পূর্ণ অর্থ স্ত্রীর হাতে তুলে দেন জাপানের পুরুষেরা। স্বামীর হাতখরচ চালানোর জন্য প্রতি মাসে কিছু পকেটমানি দেন স্ত্রী। স্বামীর এই মাসিক হাতখরচকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘ওকোজুকাই’। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সফটব্রেইন ফিল্ডের জরিপ অনুসারে, জাপানে গৃহস্থালির ৭৪ শতাংশ ব্যয় নারীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। পুরুষেরা যে এই হাতখরচ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এমন নয়। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন, যেভাবেই হোক পরিবারের জন্য তাঁদের উপার্জন করতে হবে, নিজের ভোগান্তির বিনিময়ে হলেও! 

প্রথাগতভাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জাপানে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। বেতনভুক্ত নিবেদিত শ্রমশক্তি ও পরিশ্রমী ব্যবসায়ী এবং গৃহস্থালির কাজে নিবেদিত গৃহিণীদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের অর্থনীতি দ্রুতই ফুলেফেঁপে ওঠে। 
 
নাইজেরিয়ার সংবাদমাধ্যম পালস ডট ইউজির প্রতিবেদনে স্ত্রীর হাতে বেতন সঁপে দেওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এই তিনটি কারণ হলো—

লৈঙ্গিক ভূমিকা
জাপানে একটি সাংস্কৃতিক প্রত্যাশা রয়েছে যে, নারীরা পরিবারের আর্থিক বিষয় পরিচালনা করবেন। নারীদের গৃহকর্ত্রী হওয়ার ঐতিহাসিক প্রচলন থেকে এই চর্চার উদ্ভব। প্রধান উপার্জনকারী হিসেবে পুরুষেরা তাঁদের পুরো বেতন স্ত্রীর সংসার পরিচালনার জন্য দিয়ে দিতেন। 

স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততা
সম্পূর্ণ বেতন স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও আস্থা গড়ে ওঠে। স্ত্রী বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল, সঞ্চয় ও স্বামীর হাতখরচের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন। 

বাস্তব চর্চা
স্ত্রীরা সচরাচর সন্তানদের নিয়ে ঘরেই অবস্থান করেন। তাই তাঁরাই সহজে দৈনিক ব্য়য় ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। 

তবে ধীরে ধীরে এই চর্চার পরিবর্তন আসছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এখন আর এই চর্চা সম্ভব হয় না। অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তখনই স্ত্রীর কাঁধে দেওয়া হয়, যখন তিনি সন্তান নিয়ে ঘরেই অবস্থান করেন। কিন্তু তিনিও যদি বাইরে কাজ করেন তবে আর এই চর্চার প্রয়োজন পড়ে না। ধীরে ধীরে উপার্জন সংকুচিত হয়ে আসায় এবং ক্রমে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবারগুলোর পক্ষে একক আয়ের ওপর নির্ভর করা কঠিন হয়ে উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত