বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ায় চীনের ‘ধীরে চলো’ নীতি

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০৯: ২১

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, বাজেট সহায়তা ও বাণিজ্যে সহযোগিতার জন্য চীনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অথবা সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা ঋণ হিসেবে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আশা করেছিল সরকার। কিন্তু চীনের সঙ্গে আগে আলাপ না করে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনায় বিস্মিত হয়েছেন দেশটির নেতারা। এমন অবস্থায় বড় অঙ্কের সুনির্দিষ্ট সহায়তার আশ্বাস আসেনি। বাণিজ্য সহযোগিতার নামে কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও তা কম, ১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা (১০০ কোটি ইউয়ান)। এতে বিব্রত বাংলাদেশ। আর তাই সহযোগিতার পরিমাণ জানাতে গিয়ে কিছুটা তালগোলও পাকিয়ে যায়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই পক্ষের মধ্যে কোথাও একটি ঝামেলার ব্যাপার আছে। এতে চীনারা সতর্ক হয়েছে। এতে স্পষ্টতই ঋণের প্রতিশ্রুতি দিতে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ সফর থেকে যা আশা করা হয়েছিল, আর যা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে বেশ ফারাক আছে।... মনে হচ্ছে, কোথাও কিছু একটা ঘটেছে, যা এখনো স্পষ্ট নয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার বেইজিং সফরে যান। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি শিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও হয়। সফর শেষে গত বুধবার দিবাগত রাতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফেরেন।

এই সফরের আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা চাইবে সরকার।

বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চীন আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরে সেদিন রাতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চীন ১০০ কোটি ইউয়ান (চীনা মুদ্রা) দেবে।

সফরের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেইজিং ও ঢাকা থেকে একযোগে ২৭ অনুচ্ছেদের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে।

বিবৃতি অনুযায়ী, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। চীন বিআরআই কাঠামোর আওতায় এতে যুক্ত হতে নীতিগত সম্মতির কথা জানিয়েছে। চীনের এই সম্মতিকে একটি অর্জন মনে করছে বাংলাদেশ পক্ষ।

তবে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, চীনারা বিষয়টিতে কিঞ্চিৎ আগ্রহী ছিল। বিস্তারিত জানতে চেয়েছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় বিশদ জানানো যায়নি। তাই এমন বিস্তৃত বিষয়ে ঢালাও প্রস্তাবে সীমিত না রেখে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা চীনকে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।

বিবৃতি অনুযায়ী, দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। এটিও একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছে উভয় পক্ষ। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ২০১৬ সালের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশ সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করে।

চীন মিয়ানমারের সামরিক শাসক ও রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সেখানে ফেরাতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এভাবে রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে ফেরানো ‘অতি উচ্চ আশা’ বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির।

তাইওয়ান এল প্রথমবার
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ ‘এক-চীন নীতির’ প্রতি বছরের পর বছর দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে আসছে। এবারের সফরে ‘এক-চীনকে’ মূল নীতি হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাইওয়ানকে দেশটির অংশ হিসেবে বিবৃতিতে উল্লেখ করার জন্য চীনারা চাপ দেয়। তাইওয়ান প্রসঙ্গটি বিবৃতিতে থাকবে কি না, থাকলে কীভাবে থাকবে, শুধু এ বিষয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দর-কষাকষির পর বাংলাদেশ সম্মতি জানায়। অবশ্য বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই) ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগে (জিএসআই) যুক্ত হওয়ার জন্য চীন প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, বিবৃতিতে তাইওয়ানের অন্তর্ভুক্তি চীনের একটি কৌশলগত অর্জন।

তিস্তা আসেনি
তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনের আগ্রহ থাকলেও তারা বিষয়টি আলোচনায়ই আনেনি। ভারত এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করায় এবং তাতে বাংলাদেশের স্পষ্ট সায় থাকায় চীনারা পিছিয়ে গেছে, এমনটিই মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

বিবৃতিতে দুই দেশ জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা, একে অপরের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোয় পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। চীন এবং বাংলাদেশ দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়। এর বাইরে বাংলাদেশে সাবওয়ে, মেট্রোরেল, সড়ক, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, হাসপাতাল, পানিসম্পদ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, টেলিটকের ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ, নতুন জাহাজ সংগ্রহ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপন, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রস্তাবে চীন তার সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিতে সম্মত হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ধর্ম অবমাননা: একই স্ট্যাটাসের জন্য দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত হৃদয়

আমিরাতে অবৈধদের সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আর মাত্র দুদিন

৫ আগস্ট সশস্ত্র সংগ্রামের ভিডিও বার্তা দিয়ে রেখেছিলাম: উপদেষ্টা নাহিদ

ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ইরানের সামরিক বাজেট তিনগুণ

রাজধানীতে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় লেগুনা চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

আরও
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত