বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ৪২
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৩২

বেশি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টিসিবি আয়োজিত দেশব্যাপী এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে জানুয়ারি মাসের পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ কথা বলেছেন।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের অবৈধ মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট করা যাবে না। যারা বেশি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’ 

আসন্ন রমজান মাসে তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, রমজানকে সামনে রেখে যারা মজুতদারি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবে, তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে একটুও পিছপা হওয়া হবে না। 

টিটু বলেন, ‘ভয়ভীতি বা জরিমানা করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আমাদের উদ্দেশ্য উৎপাদন এবং রপ্তানিকারকদের থেকে রিটেইলারের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে সহজে সব পণ্য যেন পৌঁছে যায়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একটি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা। যারা সৎভাবে ব্যবসা করবে, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু যে সকল ব্যবসায়ী সুযোগ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

টিটু আরও বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ডিলাররা। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা সম্ভব হতো না। এ জন্য তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডিলারদের অবশ্যই জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ডিলারশিপ প্রতিবছর পুনর্নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, প্রমাণিত হলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক কোটি স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। ২০ লাখ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বাকি কার্ড জুনের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের জন্য আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা করব। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী মানুষ, তাঁরা যেন বিকেলেও নিতে পারেন—সেই ব্যবস্থাগুলো আমরা সামনে নিয়ে আসব। আমরা শুরু করেছিলাম ট্রাক দিয়ে। সেখান থেকে দোকানে এসেছি। পরবর্তী সময় এটা যেন ন্যায্যমূল্যের দোকানের মতো হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

টিসিবির কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য এ সময় তিনি জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানান। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ মো. সলিম উল্লাহ সলু উপস্থিত ছিলেন। 

পরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

সভায় দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এককভাবে কাউকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া হবে না। এটা দেখার জন্য আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশন আছে। আমাদের যুদ্ধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে। যারা অতি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে পণ্য মজুত করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে। যেসব পণ্যের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে সরকার সেগুলো আমদানির অনুমতি দেবে।’

চাল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধির অভিযোগের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাল ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে চাল ক্রয় করেন, তার পাকা রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে। যদি স্বাভাবিক বাজারের তুলনায় সংকট দেখিয়ে বেশি দামে নেয়, তাহলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। টাকা থাকলেই পণ্য মজুত করার লাইসেন্স বা অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা করতে হলে নিয়ম মেনে করতে হবে। রমজানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কোনোভাবেই মজুত করা যাবে না। পবিত্র এ মাসে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য সব ব্যবসায়ীর প্রতি আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। 

এ সময় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পাইকারি চালের বাজার পরিদর্শন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত