রেজাউর রহিম

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রেজাউর রহিম

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি শুরুর পর চার দশক কেটে গেলেও এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কাঠামোগত দিক থেকে দৃঢ় ভিত তৈরি করতে পারেনি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হলেও কাঁচামালের জন্য এ শিল্পকে বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর এই নির্ভরতা মুখ্যত চীনকেন্দ্রিক। পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দেশই কাঁচামাল আমদানির প্রধান উৎস হওয়ায় এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এ ক্ষেত্রে কাঁচামালের নিজস্ব উৎস তৈরি করা না গেলে সামনে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শতকের আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে এই তৈরি পোশাক শিল্পই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস। মোট বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসছে পোশাক রপ্তানি থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগে বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান।
রপ্তানি বাজারের এই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে শুরু করে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, এমনকি নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্যের বড় আমদানি উৎস চীন। দেশের পোশাক শিল্পের ওভেন খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বস্ত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর নিট পোশাকের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল এবং প্রায় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক ও এক্সেসরিজ চীন থেকে আমদানি হয়।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন থেকেই এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।
এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ যে চীনের বিকল্প খুঁজবে, স্বল্প মেয়াদে সে সুযোগও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বল্প সময়ে এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে চীনের মতো বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা বেশির ভাগ দেশের নেই। কিন্তু এই অতিনির্ভরতার কারণে যেকোনো কারণে তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাহত হলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে উভয়সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে কাঁচামালে অন্তত একটা মাত্রা পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কিন্তু চার দশকেও সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থেকে এখনো পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে এ খাতকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার বড় কারণ সাশ্রয়ী মূল্য। চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়। আর রপ্তানি বাজার ধরতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকেরা চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে অনেকটা বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে জমি স্বল্পতার কারণে শিল্প খাতের জন্য তুলা উৎপাদন সম্ভব নয়। এটিই সুতা ও বস্ত্রের জন্য আমদানি নির্ভরতার কারণ। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল আনতে পারবে, সে দেশের দিকেই ঝুঁকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কাজ করছে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ
রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানি ধরে রাখতে স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত সুতা ও কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্য উৎপাদনে আমাদের অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। না হলে বিশ্ববাজারে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণই হতে না পারি, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হব? আর শিল্পের কাঁচামালের জন্য নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নও করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারি নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাসের অন্য শর্তের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মতো শর্ত থাকছে। এ জন্য রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। আর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হলেও বর্তমান সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চীনেও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর
অর্থনৈতিক গতিশীলতা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি। এ জন্য ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের আরেক বড় দেশ রাশিয়ার বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চীনের বাজারের দিকেও তাকানো যেতে পারে। চীন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি হয়, সে পরিমাণে রপ্তানি হয় না। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তালিকায় চীন রয়েছে ১৫ তম অবস্থানে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া গেলে চীনের বাজারেও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে বিনা শুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ দেশটির সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চীন ক্রমেই কম দামের পোশাক তৈরির চেয়ে বেশি দামের পোশাক তৈরি ও রপ্তানির দিকে ঝুঁকছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তীকালে বৈদেশিক বাণিজ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে সরকার। এ ছাড়া চীন এরই মধ্যে এফটিএ করার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।
এরই মধ্যে এফটিএর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু দেশ ও বাণিজ্য জোটের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে চীন ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ও দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মার্কাসুর। এফটিএর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী বিশ্ব বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজ
৬ ঘণ্টা আগে
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
১১ ঘণ্টা আগে
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
১১ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৭ ঘণ্টা আগেরোকন উদ্দীন, ঢাকা

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনো মাত্র ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ৫ শতাংশ।
এই অবস্থান আরও স্পষ্ট হয় ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়। ইউরোপের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় অর্ধেকই আসে বাংলাদেশ থেকে, আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শীর্ষ সরবরাহকারীর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তবু জাপানের মতো স্থিতিশীল ও উচ্চমূল্যের বাজারে বাংলাদেশ এখনো ব্যবহৃত সুযোগের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। পরিসংখ্যান তা-ই বলে—এখানে এখনো বড় জায়গা খালি রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও সেই সম্ভাবনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ২০২৪ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার; যার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জাপান এখন বাংলাদেশের ১২তম রপ্তানি গন্তব্য।
তবে চলতি অর্থবছরের গত কয়েক মাসের প্রবণতা বাজারের পরিবর্তন আরও স্পষ্ট করে। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া এ সময়ে দ্বিতীয় বৃহৎ অপ্রচলিত বাজার হলেও সেখানে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। ফলে জাপান এখন অপ্রচলিত রপ্তানি বাজারে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা গন্তব্য হিসেবে সামনে আসছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও স্থিতিশীল একটি বাজার হলো জাপান। সরকারের পর্যালোচনায়ও বিষয়টি রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে দ্রুত কাজে লাগাতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আমরা দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, যা সম্পন্ন হলে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ানো সম্ভব হবে।’
জাপানের এই উত্থান কাকতাল নয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ-ঝুঁকি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায় আমদানিকারকেরা নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। আর জাপান এমন একটি বাজার, যেখানে মূল্য-সুবিধার পাশাপাশি গুণগত মান, কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশন-চাহিদার প্রতি গুরুত্ব বেশি। এসব মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে বাজারটি দীর্ঘমেয়াদি ও নিশ্চিত প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেয়।
কিন্তু এখানেই চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। জাপানি ক্রেতারা ছোট পরিমাণের অর্ডার দেন, মূল্য নিয়ে আগাম ছাড় পাওয়া সহজ নয়, আর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে শতভাগ কমপ্লায়েন্স অপরিহার্য। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম প্রস্তুতকারক টিম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল নকিব জানান, ‘অর্ডারের কঠোর ইন্সপেকশন বাংলাদেশে জাপানের অর্ডার ধরার সবচেয়ে বড় বাধা। মান নিশ্চিত না হলে তারা একটিও পণ্য নেয় না।’
এই কঠোরতা একদিকে বাধা, আবার অন্যদিকে সুবিধা। কারণ যে প্রতিষ্ঠান একবার জাপানের মান ধরে রাখতে পারে, তাদের জন্য বাজারটি স্থিতিশীল থাকে। জাপানি ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারী খুব সহজে বদলায় না, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, বৈশ্বিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে পারলে অপ্রচলিত বাজারগুলোই ভবিষ্যতের বড় নিরাপত্তা হয়ে উঠবে।

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনো মাত্র ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ৫ শতাংশ।
এই অবস্থান আরও স্পষ্ট হয় ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়। ইউরোপের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় অর্ধেকই আসে বাংলাদেশ থেকে, আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শীর্ষ সরবরাহকারীর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তবু জাপানের মতো স্থিতিশীল ও উচ্চমূল্যের বাজারে বাংলাদেশ এখনো ব্যবহৃত সুযোগের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। পরিসংখ্যান তা-ই বলে—এখানে এখনো বড় জায়গা খালি রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও সেই সম্ভাবনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ২০২৪ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার; যার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জাপান এখন বাংলাদেশের ১২তম রপ্তানি গন্তব্য।
তবে চলতি অর্থবছরের গত কয়েক মাসের প্রবণতা বাজারের পরিবর্তন আরও স্পষ্ট করে। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া এ সময়ে দ্বিতীয় বৃহৎ অপ্রচলিত বাজার হলেও সেখানে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। ফলে জাপান এখন অপ্রচলিত রপ্তানি বাজারে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা গন্তব্য হিসেবে সামনে আসছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও স্থিতিশীল একটি বাজার হলো জাপান। সরকারের পর্যালোচনায়ও বিষয়টি রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে দ্রুত কাজে লাগাতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আমরা দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, যা সম্পন্ন হলে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ানো সম্ভব হবে।’
জাপানের এই উত্থান কাকতাল নয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ-ঝুঁকি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায় আমদানিকারকেরা নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। আর জাপান এমন একটি বাজার, যেখানে মূল্য-সুবিধার পাশাপাশি গুণগত মান, কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশন-চাহিদার প্রতি গুরুত্ব বেশি। এসব মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে বাজারটি দীর্ঘমেয়াদি ও নিশ্চিত প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেয়।
কিন্তু এখানেই চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। জাপানি ক্রেতারা ছোট পরিমাণের অর্ডার দেন, মূল্য নিয়ে আগাম ছাড় পাওয়া সহজ নয়, আর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে শতভাগ কমপ্লায়েন্স অপরিহার্য। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম প্রস্তুতকারক টিম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল নকিব জানান, ‘অর্ডারের কঠোর ইন্সপেকশন বাংলাদেশে জাপানের অর্ডার ধরার সবচেয়ে বড় বাধা। মান নিশ্চিত না হলে তারা একটিও পণ্য নেয় না।’
এই কঠোরতা একদিকে বাধা, আবার অন্যদিকে সুবিধা। কারণ যে প্রতিষ্ঠান একবার জাপানের মান ধরে রাখতে পারে, তাদের জন্য বাজারটি স্থিতিশীল থাকে। জাপানি ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারী খুব সহজে বদলায় না, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, বৈশ্বিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে পারলে অপ্রচলিত বাজারগুলোই ভবিষ্যতের বড় নিরাপত্তা হয়ে উঠবে।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
১১ ঘণ্টা আগে
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
১১ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।
মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।
মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজ
৬ ঘণ্টা আগে
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
১১ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।
অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।
অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজ
৬ ঘণ্টা আগে
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
১১ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’
সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’
তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’
সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’
তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

রপ্তানি বাজারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনই আবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সবচেয়ে বড় উৎস। এই নির্ভরতা এত বেশি যে, এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০৯ নভেম্বর ২০২১
ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজ
৬ ঘণ্টা আগে
এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।
১১ ঘণ্টা আগে
চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
১১ ঘণ্টা আগে