আয়কর প্রদান সহজ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হলো বেসরকারি সংস্থার ডিজিট্যাক্স ওয়েব অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই আয়কর হিসাব, রিটার্ন ফরম পূরণ, দাখিল এবং কর দেওয়াও যাবে।

আজ শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ডিজিট্যাক্স অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে এম আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন, ডিজিট্যাক্সের পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু ও ইআরএফ সেক্রেটারি এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেছেন, প্রক্রিয়া সহজ না হলে করের আওতা বাড়বে না। কত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে করের হার কমানো হচ্ছে। কর প্রদান প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে। যার ইতিবাচক ফল আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে ৬১ লাখ ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। বিপুল সংখ্যক করদাতাকে প্রচলিত পদ্ধতিতে করসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। করদাতাদের সেবা দানে সব কিছু অনলাইনে করা ও রিটার্ন দাখিলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বিকল্প নেই। 

তিনি বলেন, আমরা অনলাইনের মাধ্যমে রিটার্ন ফরম পূরণ, দাখিল ও পেমেন্ট সিস্টেম চালু করছি। এনবিআর অনেক আগেই এ উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারিভাবে ডিজিট্যাক্স এগিয়ে আসায় কর সেবা ডিজিটাল করার উদ্যোগ আরও সহজ হবে। 

শিগগিরই আয়কর আইন বাংলায় প্রণয়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে এনবিআর কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, সব ঠিক থাকলে আগামী মাসেই জনগণের মতামতের জন্য আইনটির খসড়া প্রকাশ করা হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং করদাতাদের সুবিধার্থে আয়কর আইন বাংলায় করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, আয়কর রিটার্ন দাখিল আরও সহজ করতে দেশ ইউনিভার্সাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে ‘ডিজিট্যাক্স’ নামে এমন ওয়েব অ্যাপ। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন ফরম এবং সম্পদের হিসাব-নিকাশ অনলাইনে পূরণ করা যাবে। ঘরে বসেই করা যাবে আয়কর পরিশোধ এবং রিটার্ন ফাইল দাখিল। বাসায় বসেই নেওয়া যাবে আয়কর সংক্রান্ত যেকোনো সেবাও। 

ডিজিট্যাক্সের মূল ফিচার বর্ণনা করে প্রতিষ্ঠানটির টিম মেম্বার সৈয়দা নুসরাত হায়দার বলেন, আমাদের সিস্টেমে আইন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় আয়কর গণনা পদ্ধতি এবং যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে বাংলা ভাষায়ও সফটওয়ারটি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করদাতা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রিটার্ন ফরম পূরণ করে নিজে আয়কর অফিসে জমা দিতে পারেন অথবা ডিজিট্যাক্সের পেশাদার আইনজীবীর মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। 

করদাতার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিষয়ে নুসরাত হায়দার বলেন, প্রত্যেক করদাতার ব্যক্তিগত আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকবে। তিনি ছাড়া আর কেউ এ তথ্য দেখতে পাবেন না। করদাতা তাঁর তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। চাইলে যেকোনো সময় আবার লগইন করে সংশোধনও করতে পারবেন। আয়কর আইনজীবীরাও ডিজিট্যাক্সের মাধ্যমে তাঁদের গ্রাহকদের কর সেবা দিতে পারবেন বলে জানান তিনি। 

আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু বলেন, আয়কর আইন পৃথিবীর কঠিনতম একটি আইন। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। এ আইন নিয়ে এতো বড় ‍উদ্যোগ নেওয়ায় ডিজিট্যাক্স প্রশংসার দাবি রাখে। ডিজিট্যাক্সের উদ্যোগটি করদাতাদের জন্য সহায়ক হবে এবং মানুষকে রিটার্ন দাখিলে আগ্রহী করবে। 

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ডিজিট্যাক্সের উপদেষ্টা ও দেশ ইউনিভার্সালের নির্বাহী পরিচালক মোসারাত নাইমা বলেন, ডিজিট্যাক্স একটি স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ফরম পূরণের ওয়েব অ্যাপলিকেশন। রেজিট্রেশন করার পর করদাতা তাঁর আয়ের তথ্য দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর গণনা হয়ে যাবে।