মানহীন বিদেশি প্রসাধনীর ‘ডাম্পিং স্টেশন’ বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
রাজধানী ঢাকার একটি প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান। সংগৃহীত

দেশে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভেজাল, নকল, মানহীন, অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রী। বাংলাদেশ যেন বিদেশি এসব পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন। প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন এসব পণ্যে সয়লাব হচ্ছে বাজার। বিদেশ থেকে চোরাই পথে বিপুল পরিমাণে নিম্নমানের ভেজাল প্রসাধনী ঢুকছে দেশে। নকল ও মানহীন বিদেশি পণ্য ব্যবহার করে একদিকে ভোক্তারা যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি দেশীয় শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘মানহীন বিদেশি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন নাকি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মানসম্মত পণ্য: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, দেশীয় পণ্য দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। এজন্য আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। নিজেরা পণ্য উৎপাদন করতে না পারলে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যায় না। মানুষ সবাইকে নিজের মতো ভালোবাসলে পণ্য উৎপাদনে জালিয়াতি করতে পারত না। দেশে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও হোমকেয়ার পণ্য উৎপাদন হলে এর সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সেমিনারে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সেমিনারে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, বিদেশি মানহীন পণ্য আমদানির ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা চলে গেছে বিদেশে। তবে দেরিতে হলেও আন্তর্জাতিক পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব কারখানায় মানসম্মত পণ্য বাজারজাতকরণে এরই মধ্যে তারা সাড়াও ফেলেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম রিমার্ক এইচবি। তাদের পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ইসহাকুল হোসেন সুইট বলেন, রিমার্ক-হারল্যানের মতো দেশীয় কোম্পানি মানসম্মত অথেনটিক পণ্য উৎপাদন করায় ক্রেতাদের মধ্যে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে আগ্রহও বাড়ছে। এ খাতে আরও বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকারের নীতি-সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।

এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত না হওয়ায় বিদেশি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন হয়েছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থা চলতে পারে না। খুশির কথা, দেশে এখন মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়ছে। সুতরাং দেশে উৎপাদিত গুণগত মানের পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যেন বাড়ে, সে উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভেজাল রোধে কাজ করছে। ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। চাহিদা তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পণ্যের। মানহীন বিদেশি পণ্যের সয়লাব ঠেকাতে তাদের আরও কার্যকর ভূমিকা দেখতে চান দেশের মানুষ। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে মানহীন পণ্যের বাজারজাতকরণ ঠেকাতে না পারলে দেশীয় বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত