রেজাউর রহিম, ঢাকা
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের বড় অর্জন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। কোভিড মহামারির মধ্যেও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত বাদে সবার ওপরে থাকা নিঃসন্দেহে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে জিডিপি যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশটিকে আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা ও দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তাচ্ছিল্য করেছিল। সেই দেশ যখন নানা আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে উন্নয়নের প্রশংসা কুড়াচ্ছে, গত ৫০ বছরে সেটি কম অর্জন নয়। মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি, সামাজিক সুরক্ষা সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
কৃষিতে দারুণ অগ্রগতি, শিল্প খাতের অবদানে ধারাবাহিক বৃদ্ধি, করোনার দুঃসময়েও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখাকে বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভেও রেকর্ড হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার।
এ ছাড়া বিশাল জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতাও উল্লেখ করার মতো। ব্যাংকিং সেবার পরিধি শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকাতেও বিস্তৃত হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা চলে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায়।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫ তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বড় ধরনের সফলতা অর্জন করেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাইলফলক।
তবে দেশে মারাত্মকভাবে আয়বৈষম্য বেড়েছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় আয়বৈষম্য দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আর শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়েই একটি দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় না।’
ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যে বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ স্বাধীন হয়েছিল, বাংলাদেশের ৫০ বছর পর এসে সেসব বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে এ বৈষম্য দূর করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিপর্যয়সহ দিন দিন বেড়ে চলা আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করাও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
এ রাজনীতিক বলেন, বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রযুক্তির বিকাশকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উৎসে রূপান্তরের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করাও ভবিষ্যতের আরেক চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘এখন বাঙালি-বাঙালির মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সরকারি দল ও সরকারি দলের বাইরে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এখনো আমাদের সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডেভেলপমেন্টের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। বিভিন্ন খাতে দক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে শিক্ষা কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনতে হবে।’
সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যে গতিশীলতার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে তার সুফল সাধারণ মানুষকে দিতে হলে তা হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। পাশাপাশি সামাজিক সমতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি দূর করা জরুরি।’
এদিকে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি), ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সহ বিদ্যমান বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা সীমিত হয়ে আসতে পারে। রপ্তানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় পেয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১০০-র অধিক দেশে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানি করছে। তবে অধিকাংশ ওষুধের পেটেন্ট বিদেশিদের। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বিদেশিদের পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন করতে হলে বাড়তি অর্থ দিতে হবে। এ জন্য রপ্তানি খাতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এলডিসি স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্টের (এসঅ্যান্ডডিটি) আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পায়। এ চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব অধিকারে (ট্রিপস) এলডিসিগুলো বিশেষ ছাড় পায়। এ কারণে বিদেশি পেটেন্ট পাওয়া পণ্যসামগ্রী, বিশেষ করে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া ২০৩২ সালের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর এসব সুবিধা আর বাংলাদেশ পাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, দক্ষতার উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ, দক্ষ শ্রমশক্তির জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও বিস্তৃত করতে হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আন্তযোগাযোগ বৃদ্ধি ও অংশীদারি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের রপ্তানিকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা মোকাবিলা করতে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক ঋণের উৎস খুঁজতে হবে। কারণ এ সময় বাংলাদেশ এখনকার মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না।
আর প্রস্তুতির সময়টাতে বাংলাদেশের জন্য ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা লাভের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী পাঁচ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে বিভিন্ন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।’
এদিকে, ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ফেলেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াতেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
এ ছাড়া স্বাধীনতা অর্জনের সময় দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করত, এখন সে অনুপাত ৬২ শতাংশ। পরিকল্পিত নগরায়ণ না হওয়ায় এ বিষয়টি ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের বড় অর্জন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। কোভিড মহামারির মধ্যেও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত বাদে সবার ওপরে থাকা নিঃসন্দেহে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’।
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে জিডিপি যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশটিকে আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা ও দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তাচ্ছিল্য করেছিল। সেই দেশ যখন নানা আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে উন্নয়নের প্রশংসা কুড়াচ্ছে, গত ৫০ বছরে সেটি কম অর্জন নয়। মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি, সামাজিক সুরক্ষা সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
কৃষিতে দারুণ অগ্রগতি, শিল্প খাতের অবদানে ধারাবাহিক বৃদ্ধি, করোনার দুঃসময়েও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখাকে বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভেও রেকর্ড হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার।
এ ছাড়া বিশাল জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতাও উল্লেখ করার মতো। ব্যাংকিং সেবার পরিধি শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকাতেও বিস্তৃত হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা চলে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায়।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫ তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বড় ধরনের সফলতা অর্জন করেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাইলফলক।
তবে দেশে মারাত্মকভাবে আয়বৈষম্য বেড়েছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় আয়বৈষম্য দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আর শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়েই একটি দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় না।’
ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যে বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ স্বাধীন হয়েছিল, বাংলাদেশের ৫০ বছর পর এসে সেসব বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে এ বৈষম্য দূর করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিপর্যয়সহ দিন দিন বেড়ে চলা আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করাও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
এ রাজনীতিক বলেন, বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রযুক্তির বিকাশকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উৎসে রূপান্তরের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করাও ভবিষ্যতের আরেক চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘এখন বাঙালি-বাঙালির মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সরকারি দল ও সরকারি দলের বাইরে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এখনো আমাদের সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডেভেলপমেন্টের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। বিভিন্ন খাতে দক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে শিক্ষা কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনতে হবে।’
সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যে গতিশীলতার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে তার সুফল সাধারণ মানুষকে দিতে হলে তা হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। পাশাপাশি সামাজিক সমতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি দূর করা জরুরি।’
এদিকে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি), ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সহ বিদ্যমান বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা সীমিত হয়ে আসতে পারে। রপ্তানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় পেয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১০০-র অধিক দেশে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানি করছে। তবে অধিকাংশ ওষুধের পেটেন্ট বিদেশিদের। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বিদেশিদের পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন করতে হলে বাড়তি অর্থ দিতে হবে। এ জন্য রপ্তানি খাতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এলডিসি স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্টের (এসঅ্যান্ডডিটি) আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পায়। এ চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব অধিকারে (ট্রিপস) এলডিসিগুলো বিশেষ ছাড় পায়। এ কারণে বিদেশি পেটেন্ট পাওয়া পণ্যসামগ্রী, বিশেষ করে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া ২০৩২ সালের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর এসব সুবিধা আর বাংলাদেশ পাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, দক্ষতার উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ, দক্ষ শ্রমশক্তির জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও বিস্তৃত করতে হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আন্তযোগাযোগ বৃদ্ধি ও অংশীদারি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের রপ্তানিকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা মোকাবিলা করতে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক ঋণের উৎস খুঁজতে হবে। কারণ এ সময় বাংলাদেশ এখনকার মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না।
আর প্রস্তুতির সময়টাতে বাংলাদেশের জন্য ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা লাভের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী পাঁচ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে বিভিন্ন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।’
এদিকে, ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ফেলেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াতেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
এ ছাড়া স্বাধীনতা অর্জনের সময় দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করত, এখন সে অনুপাত ৬২ শতাংশ। পরিকল্পিত নগরায়ণ না হওয়ায় এ বিষয়টি ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সাইবার সোর্স নামে একটি ভিসা পেমেন্ট গেটওয়ে সলিউশন চালু করেছে। এর মাধ্যমে ব্যবসা ও বিক্রেতাদের জন্য উন্নত পেমেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা হবে। ইউসিবির গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে এই আধুনিক সলিউশনটি তৈরি করা হয়েছে। এটি সুরক্ষিত, কার্যকরী এব
২ ঘণ্টা আগেঠাকুরগাঁওয়ের পঞ্চগড় রোডে অবস্থিত রাহাবার মার্কেটে সম্প্রতি শোরুম চালু করেছে বৈশ্বিক ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রিভো বাংলাদেশ। এ অঞ্চলের মানুষ এখন থেকে খুব সহজেই এই শোরুম থেকে তাঁদের পছন্দের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন।
২ ঘণ্টা আগেইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রিজওয়ান রহমান। গতকাল বুধবার ইস্টল্যান্ডের ২২৫ তম বোর্ড সভায় তাঁকে নির্বাচিত করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভার আয়োজন করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে