বিজিএমইএ নেতৃত্বে ফের অনাস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
Thumbnail image

ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধাক্কা আসে বেসরকারি খাতেও। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক শিল্পমালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) নেতৃত্বেও পটপরিবর্তন ঘটে। এতে সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিকে। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদে মান্নান কমিটিতে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা খন্দকার রফিকুল ইসলামকে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সমিতি এবং সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশ কিছু দেনদরবারও করেন। এখন নতুন খবর হচ্ছে, মান্নান কমিটির কানেকশনের কারণে বিজিএমইএর পর্ষদে খন্দকার রফিকুল ইসলামকেও সভাপতি হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের একাংশ। 

এ পরিস্থিতিতে টেকসই নেতৃত্বসংকটের মুখে পড়েছে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ অবদান রাখা খাতটি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানেই রয়েছে খাতটি। খাতটির সদস্যদের অন্য একটি অংশ মনে করছে, দুই বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করছে দেশ। এখন ব্যবসায় খরচ কমাতে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নতির প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা চালিয়ে নিতে হবে। মাসব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে খাতটির সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নেতৃত্বপর্যায়ে গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারের কৌশল ঠিক করা জরুরি। আগের রপ্তানি আদেশ ধরে রাখার পাশাপাশি সহজে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়ার বিষয়েও বিভিন্ন ক্রেতার সঙ্গে দেনদরবারের প্রয়োজন হবে।

ঠিক সে সময় নেতৃত্ব নির্বাচনের টানাপোড়েন পোশাক খাতের অগ্রগতিকেই বাধাগ্রস্ত করবে। তাঁরা মনে করছেন, গ্রহণযোগ্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নেতৃত্বের প্রতি এই অনাস্থা দূর করা সম্ভব। 

তবে এ নিয়ে সদস্যদের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তা সংবাদ মাধ্যমেও আনছেন প্রকাশ্যে। এ লক্ষ্যে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যদের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ সদস্যরা দাবির পক্ষে এই সম্মিলিত আওয়াজ তুলে ধরার চেষ্টা ধরেন। তাঁরা অবিলম্বে রফিকুলের সভাপতি পদ বাতিল ও পরিচালনা পর্ষদকে ভেঙে দেওয়াসহ সাত দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এ সময় বিজিএমইএর সদস্য ও মাইশা ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, অনন্ত গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলুসহ কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক উপস্থিত ছিলেন। 

সংক্ষুব্ধদের দাবির বিষয়ে মন্তব্য পুনর্গঠিত পর্ষদের পরিকল্পনা কী, জানার চেষ্টা করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। সংবাদ সম্মেলনের পর এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইমলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে বারবার চেষ্টা করেও প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সদস্য ও মাইশা ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শীর্ষ সংগঠন হচ্ছে বিজিএমইএ। নেতৃত্বে দলীয় প্রভাব থাকায় পোশাক খাত তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে। তিনি জানান, বিজিএমইএর পলাতক সভাপতি এস এম মান্নান কচির পর্ষদ নানা কারণেই বিতর্কিত। গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতি এবং তাঁর দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে কচির নেতৃত্বাধীন পর্ষদ ক্ষমতায় আসে। এ কাজে সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী, মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মো. খসরু চৌধুরী, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের নিজ বাহিনীসহ সরাসরি অংশ নেয়। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও এর সঙ্গে জড়িত, যা সাধারণ সদস্যদের মনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, এ বাস্তবতায় সাধারণ সদস্যরা মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের একজন হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। ফলে ওই পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরাও তাঁর আজ্ঞাবহ। তাই ওই কমিটিকে বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যরা কিছুতেই মেনে নেবেন না। 

এ সময় সদস্যদের দাবিসংবলিত সাত দফা প্রস্তাব করা হয়। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে বিজিএমইএ-তে দলীয় প্রভাবমুক্ত ২০ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী পরিচালনা বোর্ড গঠন করতে হবে, যা হবে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। দুই. অন্তর্বর্তী এই বোর্ড স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। তিন. বিজিএমইএর অতীতের সব দুর্নীতির স্বচ্ছ ও সঠিক তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, চার. বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিইউএফটি) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ বর্তমান বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন, পাঁচ. বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিইউএফটি) নিহত মো. সেলিম তালুকদারসহ নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিইউএফটি) চত্বরকে শহীদ সেলিম চত্বর ঘোষণা করা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত