এলসিতে কড়াকড়ি, দুই বছরে আমদানি কমেছে ২৪ বিলিয়ন ডলার

  • বন্ধ হয়েছে এলসিতে খেয়ালখুশি মতো মূল্য নির্ধারণ।
  • দুই অর্থবছরে সার্বিক আমদানি কমেছে ২৪ বিলিয়ন ডলার।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ২০
ফাইল ছবি

ভেজাল ও অনুমোদনহীন প্রসাধনপণ্যের আমদানি এখন কঠোরভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আমদানি ঋণপত্রে (এলসি) খেয়ালখুশিমতো মূল্য নির্ধারণ করার অনৈতিক প্রতিযোগিতাও বন্ধ হয়েছে। এতে একদিকে আন্ডার ইনভয়েস এবং ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমেছে, অন্যদিকে এর মাধ্যমে আগের তুলনায় অননুমোদিত প্রসাধনী আমদানিও অনেকাংশে রোধ করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং টিমের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে শুধু অননুমোদিত প্রসাধনী আমদানি বন্ধ হওয়ায় গত দুই বছরে চার বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় হয়েছে।

যদিও দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হচ্ছে প্রসাধনীর বাজার। গবেষণা তথ্য বলছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর এটি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকবে। যার বেশির ভাগ আবার আমদানি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি প্রসাধনীর উপকরণও আসছে বিদেশ থেকে। তবে যেভাবে প্রসাধনপণ্যের আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে, এত দিন সেগুলোর প্রকৃত আমদানি মূল্য এবং গুণগত মান সেভাবে যাচাই হতো না। অবৈধ চ্যানেলে কী পরিমাণ অনুমোদনহীন এবং ভেজাল প্রসাধনী ঢুকছে, তার খোঁজও কারও কাছে ছিল না। এতে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি ইচ্ছেমতো প্রসাধনীর লেবেলে দাম বসিয়ে দেদার পকেট কাটারও সুযোগ পেয়েছে আমদানিকারকেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে লুৎফুল কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নকল, ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বক ও শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি কিডনি বিকল এবং ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তায় প্রসাধনীর উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি জরুরি।

বিদ্যমান বাস্তবতায় কীভাবে অনুমোদনহীন ভেজাল প্রসাধনপণ্যের আমদানি কমানো সম্ভব হলো, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে যখন ডলারের ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। দাম বাড়তে থাকে লাগামহীন। তখন ডলার সাশ্রয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যমান ও দর যাচাই, ভেজাল পণ্য আমদানি প্রতিহত এবং বিলাসবহুল পণ্যের ঋণপত্রে (এলসি) কড়াকড়ি শর্তারোপ করা হয়। বিশেষ করে পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার, প্রসাধনীসহ ভেজাল ও অনুমোদনহীন পণ্যের আমদানি খরচ কমাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে চার বিলিয়ন ডলারের ভেজাল প্রসাধনীর এলসি বিল ঠেকানো গেছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে কালার কসমেটিকসের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার কোটি এবং স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। দুই ধরনের পণ্যের সম্মিলিত চাহিদা বা প্রসাধনী খাতের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা; যা মার্কিন ডলার হিসাবে (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) প্রায় ২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন। তবে কালোবাজারের সব প্রসাধনপণ্যের হিসাব আসে না বলে খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি।

প্রসাধনী আমদানিকারক সমিতির তথ্য বলছে, বিশ্ববাজারে প্রসাধনসামগ্রীর বাজার রয়েছে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে হালাল প্রসাধনী ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের। দেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানি হয়। কালোবাজারে আসে ২৪ হাজার কোটি টাকার।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাজারে বিদেশি একটি লিপস্টিক ২০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অথচ আমদানির সময় আন্ডার ইনভয়েসিং করে একই পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু দেখানো হয় মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনলাইন বাজার মনিটরিং সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৫ টাকার ডলার বর্তমানে ১২০ টাকায় উঠেছে। খোলাবাজারের ১৩১ টাকার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। করোনাকালের ৪৮ বিলিয়নের রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নে এসেছে। যদিও সেটি এখন ২৫ বিলিয়নের ঘরে ওঠানামা করছে। মূলত ব্যবসার আড়ালে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে দামের হেরফেরের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের ডলার পাচারে রিজার্ভে পতন ঘটতে থাকে; যা প্রতিরোধে ২০২২ সালে অনলাইনে আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং টিম গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই ঠেকানো হয় ভেজাল ও অনুমোদনহীন পণ্য। এর মাধ্যমে এলসিতে খেয়ালখুশিমতো মূল্য নির্ধারণও বন্ধ হয়। ফলে প্রায় আড়াই বছরে প্রসাধনসামগ্রীর বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য নির্ধারিত এইচ এস কোড বহির্ভূত ৩৫টি কোডের অপব্যবহারে মিথ্যা ঘোষণা রোধ করা হয়। এতে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার ভেজাল ও অপ্রচলিত প্রসাধনী আমদানি বিল পরিশোধ বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং-সংক্রান্ত কমিটি।

২০২২ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দাবি, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থ পাচারের সিংহভাগ হয় বাণিজ্যিকভিত্তিক লেনদেনের আড়ালে। এমনকি ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থ পাচার করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ এলসির মাধ্যমে দেশে ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু অনলাইনে পণ্যের মানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যাচাইয়ের ফলে পরে দুই অর্থবছরে আমদানি প্রায় ২৪ বিলিয়ন কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ বিলিয়নের ঘরে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের লুবানা এম্পোরিয়ামের আমদানিকারক তাজুল ইসলাম বলেন, যথাযথ মনিটরিং না হওয়ায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভেজাল ও অননুমোদিত প্রসাধনপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। ইচ্ছেমতো দাম লিখে লেবেল লাগানো হচ্ছে। এসব বন্ধ হলে ডলার সাশ্রয় হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত