যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি: বাংলাদেশের কমলেও বেড়েছে ভারত–পাকিস্তানের

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ১৫
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়প্রবণতার এই পরিবর্তনকে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের পোশাক খাতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানি করেছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৬১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

অটেক্সার উপাত্ত বলছে, অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ভারতের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পাকিস্তানের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার প্রায় ১৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই বাড়তি প্রবৃদ্ধি এসব দেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে তুলে ধরছে।

অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং মেক্সিকোর রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে সারা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত বছরের তুলনায় ইউরোপ ও আমেরিকায় পোশাক আমদানি কমেছে, যার প্রভাব আমাদের রপ্তানিতেও পড়েছে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শ্রমিক অসন্তোষের মতো অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে আমরা রপ্তানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারতাম।’

মহিউদ্দিন রুবেল আরও জানান, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছিল ৬ শতাংশের বেশি; তবে অক্টোবর থেকে কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবু প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখনো কম। উদাহরণস্বরূপ কম্বোডিয়া ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ছবি: আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স
ছবি: আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে এবং ভারতের রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ। তবে ১০ মাস শেষে ভারত প্রায় ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেখানে বাংলাদেশ এখনো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্র একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, যেখানে মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে।

২০২২ সালে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮০০ কোটি (৩৮ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক বাজারে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ হিস্যার প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৭৩ কোটি ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই রপ্তানি কমে ৭২৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রধান বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস নির্দেশ করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত