মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কথা হয়। এ বিষয়ে নীতিপ্রণেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে তাঁদের আন্তরিকতার কথা জানান। কিন্তু এত সব আলোচনার পরও নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাগুলো রয়ে গেছে। করোনা মহামারির সময়ে এই প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বেড়েছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে গেছে, যার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যেও অনেক নারী শত বাধা টপকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি হলেও নারী উদ্যোক্তাদের এমনকি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে যৌন হয়রানি উল্লেখযোগ্য। সরকারের নানা সংস্থা নারীর জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করলেও এগুলোর সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঘর, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব জায়গায় নারীকে তুলনামূলক বেশি বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এই পরিস্থিতি বদলে সত্যিকারের নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাজেটে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। এই বাজেটে নারীর জন্য কী থাকছে বা থাকা উচিত, তা নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকজন নারী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন মন্টি বৈষ্ণব।
মালেকা বানু
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
বাজেট যাই হোক না কেন, সেখানে নারীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাজেটে এর প্রতিফলন থাকতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার আছে। কিন্তু এসব সেন্টারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। এসব সেন্টারে নারীরা আরও বেশি হয়রানির শিকার হন। এ ক্ষেত্রে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এসব সেন্টার কার্যকর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। থানায়-থানায় নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের জন্য যে এসএমই ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে, তা সবাই পান না। নারীরা যেন সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। নারীরা যেন কম টাকায় ব্যবসা করতে পারেন, সে বিষয়ে বাজেটে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
এ ছাড়া বাড়াতে হবে নারী উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ। আবার কৃষিক্ষেত্রে কিষানিরা যেন কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পান, সে বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। সরকার থেকে কিষানিদের যে অধিকার প্রাপ্য, তাঁরা তা পান না। কৃষিক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া নারীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নারীর যাতায়াত নিরাপদ করার পাশাপাশি ভোগান্তি কমাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নারীদের উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বাজেটে এ বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমাদের দেশের নারীরা সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে শোষিত, বঞ্চিত। বাজেটে নারীকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রোকেয়া কবীর
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ
দেশের জনগণের ৫০ শতাংশ নারী। সে হিসাবে বাজেটে নারীর জন্য প্রয়োজনীয় কী কী বরাদ্দ থাকা দরকার, তা নির্দিষ্ট করা উচিত। এ দেশে নারীদের সব দিক দিয়ে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সে কারণে বাজেটের কেন্দ্রে নারী বিষয়টি থাকা দরকার। যেসব নারী গৃহে কাজ করেন, তাঁরা সেই পরিশ্রমের মূল্য পাচ্ছেন না। গৃহস্থালির কাজের জন্য নারীর পেনশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিছু দেশে কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারীর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। নারীর অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সুযোগ অনেকেরই নেই। সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকরে সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে মনে করি। এ ছাড়া নারীর শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যেসব নারী নির্যাতনের শিকার হন, সেসব ভুক্তভোগী নারীর জন্য থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সার্বিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা আছে। তবে নির্যাতনের তুলনায় সেই সংখ্যা অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে নারীর জন্য আইনি সহায়তা, নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতি উপজেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলেও জেলায় জেলায় ক্রাইসিস সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণসহ সামগ্রিক বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এসব বরাদ্দ কোন খাতে ব্যয় করা হলো, সেটারও মনিটরিং করা প্রয়োজন। খালি বরাদ্দ দিলে তো হবে না, বরাদ্দের সঠিক প্রয়োগও করতে হবে।
এ ছাড়া ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে জনবল বাড়াতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর সহিংসতার শিকার নারীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাঁদের জন্য জাতীয় কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা পরিকল্পনা নেই। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটের কারণে সম্ভাবনাময় এই খাত উঠে দাঁড়াতে পারছে না। এ কারণে নারী উদ্যোক্তার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। তবে, নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেনশন—এ বিষয়গুলোতে বরাদ্দ বেশি থাকা দরকার।
কাবেরী গায়েন
অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০২০ সালের করোনা পরিস্থিতির পর আর জেন্ডার বাজেট প্রকাশিত হয়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকা বরাদ্দ গত বছর কমেছে। তাই এবার নারীর জন্য কোন কোন খাতে কী বরাদ্দ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রথম প্রত্যাশা হলো জেন্ডার বাজেট ফিরিয়ে আনা হোক।
উদাহরণ হিসেবে শুরু করি একটা মেয়েশিশু দিয়ে। করোনার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েশিশু ও কিশোরীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক। তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ চাই। বিশেষ করে যেসব কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে, তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি সামাজিক পরিসরে সচেতনতা তৈরির জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করি।
এ ছাড়া দেশে শ্রমবাজারে নারীর সংখ্যা কম। করোনাকালে নারীরা আরও বেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বাজেটে এসব বেকার নারীর জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে, যেন তাঁরা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ঘরে বসেই ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারেন। এ ছাড়া করোনাকালে নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি, তাঁরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
এ দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র শ্রেণির প্রবীণ নারীরা এই করোনাকালে সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিধবা ভাতা ও দুস্থ নারীদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া জমিতে ছোট ছোট যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে নারীরা যাতে কৃষিকাজ করতে পারেন, সে জন্য পরিবারভিত্তিক কৃষক কার্ড দেওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং খাতওয়ারি বাজেট বরাদ্দ ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা। অতীতে দেখা গেছে, বাজেট যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা বাস্তবায়ন হয় না। জেন্ডার বাজেট ফিরিয়ে আনা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারীর কর্মসংস্থানের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা সরকারের জন্য একটা রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়। ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারীদের জাতিগতভাবে অর্জিত নানা কর্মদক্ষতা রয়েছে। সেই কর্মদক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাজেটে পুঁজি ও প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখলে নারীরা ক্ষমতায়িত হবেন সন্দেহ নেই। মূলধারার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের যে বাধা রয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক সেই বাধা দূর করার জন্য ভাষাগত এবং অন্যান্য কৌশলগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এ বিষয়েও বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দরকার বলে মনে করি।
রাষ্ট্র নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি না করেই তাদের কাজে নামিয়েছে। বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার পথটুকুও নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় কর্মস্থল। ভয় ও সহিংসতার আশঙ্কা নিয়েই নারীরা কাজে যান। কর্মস্থলে যাওয়ার পথ এবং কর্মস্থল নিরাপদ রাখার জন্য সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। নারীদের জন্য গণপরিবহনে যাতায়াতব্যবস্থা সুষ্ঠু করার পাশাপাশি রাস্তার হয়রানি এবং যৌন সহিংসতা থেকে রক্ষার বিষয় আমলে এনে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ জন্য অন্তত দুই স্তরের কর্মপরিকল্পনা জরুরি—প্রথমত, আইনি ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন। রাস্তায় গণপরিবহনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, নারীরা এখন জনপরিসর ও কর্মপরিসরে অনেক বেশি দৃশ্যমান। কিন্তু শিশুযত্ন কেন্দ্র তৈরি হয়নি কিংবা হয়নি প্রজনন স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন। এসব একধরনের নারীর প্রতি কাঠামোগত সহিংসতা। সর্বোপরি, নারীর মনস্তত্ত্বে যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাকাঠামোতে পরিবর্তন প্রয়োজন। তাই এসব খাতে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
সঙ্গীতা ইমাম
শিক্ষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও সংস্কৃতিকর্মী
এবারের বাজেট আমার মতে গত দুই বছরের বাজেটের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে। গত দুই অর্থবছরে সরকারকে বাজেট দিতে হয়েছে করোনা মহামারি মাথায় রেখে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধপরিস্থিতি। সুতরাং স্বভাবতই নারীর অগ্রগতির প্রশ্নটিও অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই অর্থবছরে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।
বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, নারীর অগ্রযাত্রার পথে তার প্রভাবও কম নয়। ফলে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় রাখতে হবে বলে মনে করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের একটি বড় অংশ স্বাধীন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
প্রতিবছরই বাজেট হয়; কিন্তু ইন্টারনেটের দামের সমন্বয়টা করা হয় না কখনোই। এমনকি সম্প্রতি যে এক বছর মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ করা হলো, তার দামও কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা থাকলে তা ইতিবাচক হবে বলে মনে করি। তবে এই প্রণোদনা যেন প্রান্তিক নারীদের কাছে পৌঁছায়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বাজেটে নারীদের সামাজিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথম চারটি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল। সে হিসেবে ব্যাপ্তির দিক থেকে একটি বিরাট পরিবর্তন তো আছেই। কিন্তু নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয় তো কেবল বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপরই নির্ভর করে না। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আরও কতগুলো সূচকও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা কিন্তু বর্তমানে বেড়ে গেছে। সে হিসাবে তার যে গুরুত্ব, সেটা আমরা ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারছি বলে মনে হয় না।
জাতীয় বাজেট সম্পর্কে জানতে: এখানে ক্লিক করুন
কেবল বরাদ্দ বাড়ালেই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না, আবার অপ্রতুল অর্থেও সেটা সম্ভব নয়। সুতরাং এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। গত দুই অর্থবছরের বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় কিন্তু নারী ও শিশু ছিল না। এদিকে ২০২১ সালের মধ্যেই কিন্তু ১৫ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিবাহ নির্মূলের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেটা যে সম্ভব হয়নি, তা করোনা-পরবর্তী বিভিন্ন জরিপেই দেখা যাচ্ছে। এসবের নিরিখেই এবারের বাজেটে আশা করছি নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কথা হয়। এ বিষয়ে নীতিপ্রণেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে তাঁদের আন্তরিকতার কথা জানান। কিন্তু এত সব আলোচনার পরও নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধাগুলো রয়ে গেছে। করোনা মহামারির সময়ে এই প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বেড়েছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে গেছে, যার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যেও অনেক নারী শত বাধা টপকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি হলেও নারী উদ্যোক্তাদের এমনকি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে যৌন হয়রানি উল্লেখযোগ্য। সরকারের নানা সংস্থা নারীর জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করলেও এগুলোর সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঘর, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব জায়গায় নারীকে তুলনামূলক বেশি বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এই পরিস্থিতি বদলে সত্যিকারের নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাজেটে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। এই বাজেটে নারীর জন্য কী থাকছে বা থাকা উচিত, তা নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকজন নারী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন মন্টি বৈষ্ণব।
মালেকা বানু
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
বাজেট যাই হোক না কেন, সেখানে নারীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাজেটে এর প্রতিফলন থাকতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার আছে। কিন্তু এসব সেন্টারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। এসব সেন্টারে নারীরা আরও বেশি হয়রানির শিকার হন। এ ক্ষেত্রে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এসব সেন্টার কার্যকর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। থানায়-থানায় নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের জন্য যে এসএমই ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে, তা সবাই পান না। নারীরা যেন সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। নারীরা যেন কম টাকায় ব্যবসা করতে পারেন, সে বিষয়ে বাজেটে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
এ ছাড়া বাড়াতে হবে নারী উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ। আবার কৃষিক্ষেত্রে কিষানিরা যেন কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পান, সে বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। সরকার থেকে কিষানিদের যে অধিকার প্রাপ্য, তাঁরা তা পান না। কৃষিক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া নারীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নারীর যাতায়াত নিরাপদ করার পাশাপাশি ভোগান্তি কমাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নারীদের উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বাজেটে এ বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমাদের দেশের নারীরা সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে শোষিত, বঞ্চিত। বাজেটে নারীকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রোকেয়া কবীর
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ
দেশের জনগণের ৫০ শতাংশ নারী। সে হিসাবে বাজেটে নারীর জন্য প্রয়োজনীয় কী কী বরাদ্দ থাকা দরকার, তা নির্দিষ্ট করা উচিত। এ দেশে নারীদের সব দিক দিয়ে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সে কারণে বাজেটের কেন্দ্রে নারী বিষয়টি থাকা দরকার। যেসব নারী গৃহে কাজ করেন, তাঁরা সেই পরিশ্রমের মূল্য পাচ্ছেন না। গৃহস্থালির কাজের জন্য নারীর পেনশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিছু দেশে কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারীর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। নারীর অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সুযোগ অনেকেরই নেই। সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকরে সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে মনে করি। এ ছাড়া নারীর শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যেসব নারী নির্যাতনের শিকার হন, সেসব ভুক্তভোগী নারীর জন্য থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সার্বিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা আছে। তবে নির্যাতনের তুলনায় সেই সংখ্যা অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে নারীর জন্য আইনি সহায়তা, নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতি উপজেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলেও জেলায় জেলায় ক্রাইসিস সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণসহ সামগ্রিক বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এসব বরাদ্দ কোন খাতে ব্যয় করা হলো, সেটারও মনিটরিং করা প্রয়োজন। খালি বরাদ্দ দিলে তো হবে না, বরাদ্দের সঠিক প্রয়োগও করতে হবে।
এ ছাড়া ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে জনবল বাড়াতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর সহিংসতার শিকার নারীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাঁদের জন্য জাতীয় কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা পরিকল্পনা নেই। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটের কারণে সম্ভাবনাময় এই খাত উঠে দাঁড়াতে পারছে না। এ কারণে নারী উদ্যোক্তার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। তবে, নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেনশন—এ বিষয়গুলোতে বরাদ্দ বেশি থাকা দরকার।
কাবেরী গায়েন
অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০২০ সালের করোনা পরিস্থিতির পর আর জেন্ডার বাজেট প্রকাশিত হয়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকা বরাদ্দ গত বছর কমেছে। তাই এবার নারীর জন্য কোন কোন খাতে কী বরাদ্দ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রথম প্রত্যাশা হলো জেন্ডার বাজেট ফিরিয়ে আনা হোক।
উদাহরণ হিসেবে শুরু করি একটা মেয়েশিশু দিয়ে। করোনার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েশিশু ও কিশোরীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক। তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ চাই। বিশেষ করে যেসব কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে, তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি সামাজিক পরিসরে সচেতনতা তৈরির জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করি।
এ ছাড়া দেশে শ্রমবাজারে নারীর সংখ্যা কম। করোনাকালে নারীরা আরও বেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বাজেটে এসব বেকার নারীর জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে, যেন তাঁরা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ঘরে বসেই ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারেন। এ ছাড়া করোনাকালে নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি, তাঁরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
এ দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র শ্রেণির প্রবীণ নারীরা এই করোনাকালে সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিধবা ভাতা ও দুস্থ নারীদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া জমিতে ছোট ছোট যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে নারীরা যাতে কৃষিকাজ করতে পারেন, সে জন্য পরিবারভিত্তিক কৃষক কার্ড দেওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং খাতওয়ারি বাজেট বরাদ্দ ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা। অতীতে দেখা গেছে, বাজেট যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা বাস্তবায়ন হয় না। জেন্ডার বাজেট ফিরিয়ে আনা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারীর কর্মসংস্থানের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা সরকারের জন্য একটা রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়। ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারীদের জাতিগতভাবে অর্জিত নানা কর্মদক্ষতা রয়েছে। সেই কর্মদক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাজেটে পুঁজি ও প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখলে নারীরা ক্ষমতায়িত হবেন সন্দেহ নেই। মূলধারার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের যে বাধা রয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক সেই বাধা দূর করার জন্য ভাষাগত এবং অন্যান্য কৌশলগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এ বিষয়েও বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দরকার বলে মনে করি।
রাষ্ট্র নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি না করেই তাদের কাজে নামিয়েছে। বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার পথটুকুও নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় কর্মস্থল। ভয় ও সহিংসতার আশঙ্কা নিয়েই নারীরা কাজে যান। কর্মস্থলে যাওয়ার পথ এবং কর্মস্থল নিরাপদ রাখার জন্য সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। নারীদের জন্য গণপরিবহনে যাতায়াতব্যবস্থা সুষ্ঠু করার পাশাপাশি রাস্তার হয়রানি এবং যৌন সহিংসতা থেকে রক্ষার বিষয় আমলে এনে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ জন্য অন্তত দুই স্তরের কর্মপরিকল্পনা জরুরি—প্রথমত, আইনি ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন। রাস্তায় গণপরিবহনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, নারীরা এখন জনপরিসর ও কর্মপরিসরে অনেক বেশি দৃশ্যমান। কিন্তু শিশুযত্ন কেন্দ্র তৈরি হয়নি কিংবা হয়নি প্রজনন স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন। এসব একধরনের নারীর প্রতি কাঠামোগত সহিংসতা। সর্বোপরি, নারীর মনস্তত্ত্বে যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাকাঠামোতে পরিবর্তন প্রয়োজন। তাই এসব খাতে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
সঙ্গীতা ইমাম
শিক্ষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও সংস্কৃতিকর্মী
এবারের বাজেট আমার মতে গত দুই বছরের বাজেটের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে। গত দুই অর্থবছরে সরকারকে বাজেট দিতে হয়েছে করোনা মহামারি মাথায় রেখে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধপরিস্থিতি। সুতরাং স্বভাবতই নারীর অগ্রগতির প্রশ্নটিও অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই অর্থবছরে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।
বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, নারীর অগ্রযাত্রার পথে তার প্রভাবও কম নয়। ফলে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারকে অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় রাখতে হবে বলে মনে করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের একটি বড় অংশ স্বাধীন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
প্রতিবছরই বাজেট হয়; কিন্তু ইন্টারনেটের দামের সমন্বয়টা করা হয় না কখনোই। এমনকি সম্প্রতি যে এক বছর মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ করা হলো, তার দামও কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা থাকলে তা ইতিবাচক হবে বলে মনে করি। তবে এই প্রণোদনা যেন প্রান্তিক নারীদের কাছে পৌঁছায়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বাজেটে নারীদের সামাজিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে বলতে চাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথম চারটি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল। সে হিসেবে ব্যাপ্তির দিক থেকে একটি বিরাট পরিবর্তন তো আছেই। কিন্তু নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয় তো কেবল বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপরই নির্ভর করে না। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আরও কতগুলো সূচকও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা কিন্তু বর্তমানে বেড়ে গেছে। সে হিসাবে তার যে গুরুত্ব, সেটা আমরা ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারছি বলে মনে হয় না।
জাতীয় বাজেট সম্পর্কে জানতে: এখানে ক্লিক করুন
কেবল বরাদ্দ বাড়ালেই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না, আবার অপ্রতুল অর্থেও সেটা সম্ভব নয়। সুতরাং এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। গত দুই অর্থবছরের বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় কিন্তু নারী ও শিশু ছিল না। এদিকে ২০২১ সালের মধ্যেই কিন্তু ১৫ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিবাহ নির্মূলের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেটা যে সম্ভব হয়নি, তা করোনা-পরবর্তী বিভিন্ন জরিপেই দেখা যাচ্ছে। এসবের নিরিখেই এবারের বাজেটে আশা করছি নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
ইউএনডিপির আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জনবান্ধব নীতি প্রণয়নে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের সহায়তায় ইউএনডিপির স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস, পলিসিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্পের
২৬ মিনিট আগেঅত্যাধুনিক সুবিধা নিয়ে চালু হয়েছে বেনাপোল বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল, যা সেবা ও বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি যানজট ও পণ্যজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ১৪ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ১৮ নভেম্বর থেকে টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হয়।
১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্যদের জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্র্যাক ব্যাংক এবং বেসিস-এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২ ঘণ্টা আগেদেশে গত বোরো মৌসুমের পরই বাড়তে থাকে চালের দাম। ক্রেতাদের আশা ছিল, আমন মৌসুম শুরু হলে দাম কমবে। কিন্তু আশা দুরাশাই রয়ে গেছে এখন পর্যন্ত। মোকামে আমন ধান আসতে শুরু করলেও চালের বাজারে খুব একটা প্রভাব নেই। শুধু তা-ই নয়, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েও পণ্যটির দাম কমিয়ে আনতে পারছে না।
৩ ঘণ্টা আগে