টিকফা বৈঠক: শ্রম আইনেই আটকে থাকল যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৪২
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ০৮

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ও উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন (ডিএফসি) তহবিলের অংশ চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে যেসব পোশাকপণ্য তৈরি হয়, সেসবে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে। তবে এর জন্য শ্রম আইন আরও উন্নত করার শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারখানার মালিকদের শাস্তির বিধান আরও কঠোর করা এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আরও সুনিশ্চিত করার কথা বলেছে দেশটি। 

আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে সব সময় শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারের দাবি করে আসছি। রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। এর মধ্যে গার্মেন্টস পণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য যাতে রপ্তানি করতে পারি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেমন—চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস, ওষুধ ইত্যাদি।’ 

সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশনের (ডিএফসি) একটা বড় তহবিল আছে। ওই তহবিল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য সহযোগিতা পাওয়া যায়। সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা, ডিএফপি তহবিলের অংশ চাওয়া হলে তাদের দিক থেকে বলা হয়েছে, শ্রম অধিকার আরও উন্নত করতে হবে।

সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, শ্রম আইন আরও উন্নত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চায়, অপরাধ করলে শ্রম আইনে মালিকদের যে শাস্তির বিধান আছে, সেটি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর সদস্য সংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে হলেও তা আর বাতিল করা যাবে না। এ রকম ১১ দফার একটি দাবি যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে বলে জানান সচিব।

শ্রমনীতির নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে সচিব বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আজ শুধু টিকফা প্ল্যাটফর্মের আওতার এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়েও জোরালো আলোচনা হয়েছে। 

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো মোট জনসংখ্যার ১৮ ভাগ বাংলাদেশে বাস করে। আর তৈরি পোশাক খাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব পরিবারের মেয়েরা বেশি কাজ করেন। দারিদ্র্য দূরীকরণের বিষয় এখানে জড়িত। আফ্রিকার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। বাংলাদেশ বলেছে, আফ্রিকা গরিব, আর এশীয় গরিবদের মধ্যে কেন বৈষম্য হবে, এটা যুক্তিযুক্ত না। এই যুক্তিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে।

সচিব বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের একটা অংশের তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। অন্তত শেষ পর্যন্ত আমরা দাবি করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা থেকে যে পোশাক তৈরি হবে, সেই অংশের ওপর যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়।’

বৈঠকে প্রযুক্তি বিনিময় ও কৃষি খাতে সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। সেটি নিয়ে প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে এই আইনসহ অন্য যেসব আইন, যেমন—কপিরাইট, পেটেন্ট আইন বাংলায় লেখা। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের আইনের ইংরেজি সংস্করণ করার পরামর্শ দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত